Skip to main content

আল্লাহর ক্ষমার দিকে ধাবিত হই

প্রতিনিয়তই আমরা মৃত্যু দেখছি। বিশেষ করে করোনার কারণে সামান্য জ্বর হলেও আমাদের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করছে। করোনা ও নানাবিধ রোগব্যাধিতে আমাদের অনেক প্রিয়জন তাঁদের রবের কাছে ফিরে গেছেন। আমাদের কখন ডাক আসে কেউ তা জানি না। তবে এটি জানি, এই পৃথিবী আমাদের স্থায়ী ঠিকানা নয়। এক অসীমের পানে আমাদের যেতেই হবে। প্রিয়জন মারা গেলে করোনা পরিস্থিতির কারণে পূর্বের মত জানাযা ও দাফন-কাফনে শরীক হওয়ার সুযোগ এখন আর হচ্ছে না। ফেসবুকে ইন্না লিল্লাহ পড়া ও দুআ করার মধ্যে অনেকটা সীমিত হয়ে পড়েছে। ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রজেয়ূন’ এই বাক্য উচ্চারণের মধ্য দিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত স্বীকারোক্তি প্রদান করছি ‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাব’। আল্লাহ তাঁর গাফেল বান্দাদের তাঁর পথে ফিরে আসার লক্ষ্যেই বিপদ-মুসিবত দেন। আমরা মনে করি, এই করোনার কারণে আল্লাহর অনেক বান্দাহ সম্বিত ফিরে পেয়েছেন। তারা তাওবা করে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে নিয়েছেন। হ্যাঁ, যারা পারেনি তারা কপালপোড়া, তাদের বদনসিব; ঐ শ্রেণির মানুষ নবী-রসূলদের দাওয়াতেও সাড়া দিতে পারেনি। কুরআনের ভাষায় ওরা অন্ধ (ওরা চোখে দেখে না), ওরা বধির (কানে শুনে না); মৃত্যু যখন আসবে তখনই ওদের চোখ খুলবে, ওরা উপলব্ধি করবে। ওরা আবার ফিরে আসার জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি জানাবে। মৃত্যু কামনা করবে বা বলবে, এই মৃত্যুই যদি শেষ হতো, নানাভাবে হাহুতাশ করবে; কিন্তু তাতে কোনো কাজে আসবে না। এই দুনিয়ায় থাকতে আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ ও ক্ষমাশীল। পাহাড় পরিমাণ গুনাহ নিয়ে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসলে (তাওবা) তিনি তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করেন। শুধু করোনা বা মৃত্যুকে ভয় নয়, বরং করোনা বা মৃত্যুর যিনি মালিক সেই মহান আল্লাহকে ভয় করে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে নেই। এই পরিশুদ্ধ বলতে আমি মুখে আস্তাগফিরুল্লাহ উচ্চারণ ও নামায শুরু করাকে বোঝাতে চাচ্ছি না বরং সেই সাথে সবধরনের পাপাচার থেকে দূরে থাকা ও হালাল উপার্জনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করছি। নৈতিক দিক দিয়ে আমরা বড় দেউলিয়া হয়ে পড়েছি। গুনাহ মাফের জন্য হাজারো দুআ-দরুদ মুখস্ত করছি ও সকাল-সন্ধ্যা তা পাঠ করছি। তাওবার স্পিরিট হলো গুনাহ থেকে ফিরে আসা এবং দুআ-দরুদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার সহজতম উপায় হলো তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করা। ক্ষমা, উদারতা, সহনশীলতার মতো মহৎ গুণসমূহ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে। আমরা বড় প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে পড়েছি। ফলে আমাদের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বত্রই অশান্তি। উদারতার অভাবে আমাদের ঘরগুলো আর শান্তি-স্বস্তি দিতে পারছে না। রাষ্ট্রীয়জীবনে প্রতিশোধপরায়ণতা আমাদেরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। প্রতিপক্ষের দোষ-ত্রুটি অণুবীক্ষ্ণণ যন্ত্র দিয়ে তালাশ করি এবং অনেক সময় মিথ্যা দোষারোপ করে নানাভাবে হয়রানি করি। এ যে কতো বড় জঘণ্য অপরাধ মুসলিম নামধারী একজন ব্যক্তির মনে আদৌ তা জাগ্রত হয় না। প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। আল্লাহর বাণী, ‘অন্যায়ের প্রতিবিধান সমপরিমাণ অন্যায়, কিন্তু কেউ যদি ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয় তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়’। ক্ষমাকারী ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করতে আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আল্লাহ তাঁর সেই বান্দাকে কতো পরিমাণ দেবেন তা তিনিই জানেন। আল্লাহর রসূল (সা)ও কম বলেননি, ‘যে তার ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করবেন’। আসুন, রাতে ঘুমানোর আগে আমরা পরস্পরকে ক্ষমা করে দেই। সেটি হতে পারে স্বামী-স্ত্রী, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, পাড়াপ্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব ও যে কেউ। এই ক্ষমার সংস্কৃতি যদি আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে থাকতো তাহলে আমরা একটি সুখি-সমৃদ্ধ ও নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে পারতাম। হে পরোয়ারদেগার! তুমি আমাদেরকে ক্ষমাকারী বান্দাহ হিসেবে কবুল করো। আমিন। ২৯.১১.২০২০

Comments