আল্লাহপাকের অগণিত নেয়ামতে আমরা আচ্ছাদিত। তাঁর দেয়া নেয়ামত গণনা করে শেষ করা যায় না। এই পৃথিবী, চন্দ্র-সূর্য, তারকারাজি, সকল সৃষ্টি মানুষের সেবায় নিয়োজিত। সূরা আর রহমানে আল্লাহতায়ালা বারংবার বলেছেন, ‘তুমি তোমার রবের কোন্ নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?’ মানুষ তার নিজেকে নিয়েই চিন্তা করুক। তার সৃষ্টির ব্যাপারে বাবা-মার অবদানই বা কতটুকু। আদম (আ) থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষের আগমন ঘটবে সবাইকে স্বতন্ত্র দৈহিক কাঠামো, চেহারা, কণ্ঠস্বর, রুচি-পছন্দ ও জ্ঞান-বুদ্ধির পার্থক্যসহ সৃষ্টি করেছেন।
মানুষের সুস্থতা, জ্ঞান-বুদ্ধি, পিতা-মাতা, স্বামী/স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, রিজিক সর্বোপরি হেদায়াত সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত। এ-সব নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা অর্থ আল্লাহর নাফরমানি না করা এবং সর্বদা তাঁর অনুগত হয়ে চলা। এছাড়া মৌখিক উচ্চারণের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। একজন কৃতজ্ঞ বান্দার মুখে সর্বদা উচ্চারিত হয় ছুবহান আল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবার। হাদিসে বলা হয়েছে, এগুলো উচ্চারণে হালকা কিন্তু ওজনে খুবই ভারি।
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি নিজের প্রতি ও তাঁর বান্দাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আল্লাহরই নির্দেশ। আল্লাহপাক যাকে সম্পদ দিয়েছেন সে তা তার নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্যদের প্রয়োজনেও ব্যয় করবে। আল্লাহ পিতা-মাতার প্রতি সদয় ব্যবহার করার তাগিদ দিয়েছেন। সাথে সাথে মাকে প্রাধান্য দিয়ে বলেছেন তার মা অতি কষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তাকে প্রসব করেছে- সূরা আহকাফ ১৫। পিতা-মাতার সাথে নম্র ব্যবহার ও প্রয়োজন পূরণ করাকে বলা যায় তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।
স্বামী-স্ত্রীও আল্লাহতায়ালার বড় নেয়ামত। তারা পরস্পর থেকে পরিতৃপ্তি পায়। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি দয়া-ভালোবাসা প্রকৃতিগত হওয়ার পরও আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা) সদাচরণের তাগিদ দিয়েছেন। হাদিসে এ প্রসঙ্গে অনেক কথাবার্তা রয়েছে। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম। কিয়ামতের দিন স্বামী সম্পর্কে স্ত্রীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। আবার স্ত্রী সম্পর্কে বলা হয়েছে, ঐ স্ত্রী উত্তম যাকে দেখে স্বামী প্রশান্তি অনুভব করে। স্বামী থেকে পৃথক রাত্রি যাপনকারী স্ত্রীর প্রতি আল্লাহ ও ফেরেশতার লানত/অভিশাপ বর্ষিত হয়। মি’রাজের রাত্রিতে রসূল (সা) জাহান্নামে নারীর আধিক্য লক্ষ্য করেন এবং বলেন, এর অন্যতম কারণ স্বামীর অবাধ্যতা। রসূল (সা) নারীকে সুসংবাদ শুনিয়েছেন এই বলে, যে নারী আল্লাহর হক ও স্বামীর হক আদায় করে সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে খুশি প্রবেশ করতে পারবে। আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দারা স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতিও কৃতজ্ঞ হয়।
সন্তান-সন্ততি আল্লাহতায়ালার বড় নেয়ামত। আল্লাহপাক দুআ শিখিয়ে দিয়েছেন, সন্তান-সন্ততি দ্বারা চোখকে শীতল করার জন্য। সন্তান-সন্ততির প্রয়োজন পূরণ, শিক্ষা দান ও দ্বীনের তা’লিম প্রদান, উপযুক্ত হলে বিয়ে দান সবই সন্তানের হক এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দাহ তা পূরণ করে থাকে।
আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় তাঁর বান্দাদের হক আদায় মূলত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতারই প্রকাশ। আমাদের চলার পথে আল্লাহর অগণিত বান্দার সাথে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে এবং বান্দাদের সাথে সদাচরণ আল্লাহর সাথেই সদাচরণ।
আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দাহ কখনই আল্লাহ ও তাঁর বান্দার হক পালনে শৈথিল্য করে না। কৃতজ্ঞ বান্দার নেয়ামত আল্লাহ বাড়িয়ে দেন। তাঁর বাণী, ‘আর স্মরণ করো, তোমাদের রব এই বলে সতর্ক করে দিয়েছেন, যদি কৃতজ্ঞ থাকো তাহলে আমি তোমাদের আরো বেশি দেবো আর যদি নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে আমার শাস্তি বড়ই কঠিন’-সূরা ইবরাহিম ৭।
অকৃতজ্ঞ বান্দারা মূলত শয়তানেরই সহচর। আল্লাহ যখন শয়তানকে অভিশপ্ত হিসেবে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করেন তখন শয়তান কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ চান। আল্লাহ তা মঞ্জুর করেন। শয়তান তখন বলে, ‘সামনে-পেছনে, ডানে-বায়ে সবদিক থেকে এদেরকে ঘিরে ধরবো এবং এদের অধিকাংশকে তুমি শোকর গুজার পাবে না’- সূরা আরাফ ১৭।
শয়তানের চ্যালেঞ্জই যেন সত্যে পরিণত হয়েছে। আল্লাহপাকের এতো এতো নেয়ামত গণনা না করে কী পায়নি সে শুধু তার তালিকা করে। সে আশে-পাশে দেখে তার বন্ধুদের অনেক কিছু রয়েছে, অথচ তার নেই। অকৃতজ্ঞ মানুষ দেখে ঢাকা শহরে তার কোনো বাড়ি নেই, প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকুরি নেই, সুন্দরী বউ নেই বা হ্যান্ডসাম স্বামী নেই, দামী গাড়ি নেই-শুধু নেই এবং নেই। অথচ তার যা আছে শতকরা ১০ জনেরও তা নেই সেদিকে সে খেয়াল করে না। এ জন্যই আল্লাহপাক বলেন, ‘অবশ্যই মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ’- সূরা আদিয়াত ৬।
আল্লাহ তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞতা থেকে বের হয়ে তিনি যে সব নেয়ামত দান করেছেন তার প্রতি সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ বান্দাহ হয়ে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন। ১১.১১.২০২০।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment