Skip to main content

স্বামী স্ত্রী পরস্পরের সহযোগী

স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের টানাপড়েন নতুন কিছু নয়। অথচ পরস্পরের সহযোগি হলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক


আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখন মৌলভী স্যার পড়া না পারলে জিজ্ঞাসা করতেন, 'পড়া হয়নি কেন?' অনেকের জবাব ছিল, 'একা পড়তে পারিনি স্যার।' প্রত্যুত্তরে স্যার প্রায়শই বলতেন, 'একা না পারলে আর একটা বিয়া করছ'। অবশ্য একা একটি কাজ না পারলে সঙ্গীসহ কাজটি সহজে হতে পারে। এমন উদাহরণও রয়েছে। স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে।

কয়েকদিন আগে আমার এক আত্মীয়ের কাছে একটি গল্প শুনলাম। পূর্বে বিয়েসাদীতে মেয়েদের অতো জানার সুযোগ ছিল না। তার এক চাচার বিয়ের পর চাচী এসে জানতে পারে যে তার স্বামী অষ্টম শ্রেণী পাস। সে তার স্বামীকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, 'স্কুলে ভর্তি না হলে আমার কাছে আসবে না।' সে বলে, 'আমার বয়স হয়েছে, আমার চেয়ে কম বয়সীদের সাথে স্কুলে যাওয়া সম্ভব নয়'। 

স্বামীকে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে চাচী তার বাবার বাড়ি চলে যায়। পরে একদিন তার চাচা শ্বশুরবাড়ি গেলে স্ত্রী আবার বলে, স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরেই আসবে। জোরাজোরি করলে কিছু ধাক্কা-ধাক্কা এবং একপর্যায়ে শ্যালকদের সাথে মারামারি। তুমুল মারামারি এবং কাপড়-চোপড় ছেড়ে একপর্যায়ে পালিয়ে বাড়ি উঠে। 

এমন অবস্থায় দেখে বাড়িতে রাগ না করে মুরুব্বিরা ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। সেই ছেলে পরবর্তীতে এসএসসি পাস করে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকুরী পায়। স্বামী স্ত্রী মিলে তাদের জীবন ছিল সুখের। বর্তমানে তার চাচা অবসর গ্রহণ করেছেন। এক্ষেত্রে স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেয়া লাগে। স্ত্রীর এই কঠোর অবস্থানের কারণেই তার স্বামীর লেখাপড়া এবং সরকারি চাকুরি। 

আসলে স্ত্রীরা স্বামীর পরিচয়ে নিজেদেরকে ধন্য মনে করে। আমি এমন কঠোর অবস্থানে যেতে বলি না। আমি বলি, তারা পরস্পরের জন্য হোক প্রেরণা এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য একে অপরের সহযোগী হোক। পরস্পরের দোষ-ত্রুটি তালাশ নয়, গুণের প্রশংসা করে উৎসাহ যোগাক। বেয়াড়া সমালোচনা ও সর্বক্ষণ ঘ্যানর ঘ্যানর পরস্পরের সম্পর্ক বিষিয়ে তুলে এবং কাজেকর্মে অনাগ্রহী করে। এমন আচরণ অনেকের দাম্পত্যজীবনকে ধ্বংস করে দেয়। 

পক্ষান্তরে প্রশংসা ও গঠনমূলক পরামর্শ এবং আলোচনা করে কাজের মধ্যে সম্পর্ক মধুর হয় ও সুখী জীবন যাপন সম্ভব হয়। আল্লাহপাক চান, তাঁর ঈমানদার বান্দারা মিলেমিশে সুন্দর জীবন পরিচালনা করুক। তিনি বলেছেন, 'ঈমানদার নর ও নারী পরস্পরের বন্ধু ও সাথী, তারা ভালো কাজের আদেশ দান করে ও মন্দ কাজে নিষেধ করে।' 

স্বামী স্ত্রী পরস্পরের সহযোগী হলে পরিবার ও সমাজে ভালো প্রতিষ্ঠা ও মন্দ দূর করা সহজ হয়। ফজরে জাগতে স্বামীর শৈথিল্য স্ত্রী সহজেই দূর করতে পারে ও ডেকে মসজিদে পাঠাতে পারে। ভালো কাজে একে অপরের প্রেরণা হতে পারে। আবার স্ত্রী একটু হিসেবী হয়ে স্বামীকে সৎ জীবন-যাপনে সহায়তা করতে পারে। 

অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির চাহিদা মেটাতে মানুষ অসৎ পথ অবলম্বন করে। স্ত্রীর অনঢ় মনোভাব স্বামীকে হালাল উপার্জনে সন্তুষ্ট রাখতে পারে। লেখাপড়ার কোনো বয়স নেই। পাবনার স্কুল শিক্ষক জনাব রওশন আলী ৭২ বছর বয়সে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হতে সান্ধ্যকালীন কোর্সে এমবিএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন এবং তিনি আমাদের জন্য প্রেরণা। 

আমার আব্বা হাই মাদ্রাসা পাস (এসএসসি সমমান)। তিনি প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে আইএ, বিএ, এমএ পাস করে একটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে রেগুলার হিসেবে বিএড পাস করেছিলেন। 

 চেষ্টা-সাধনা থাকলে এই পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। যৌবনকাল জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময়। এ সময়ের পরিশ্রম ও সাধনা বাকি জীবন গড়ে তোলার সেরা উপায়। আল্লাহপাক আমাদের সন্তানদেরকে পরিশ্রমী হিসেবে গড়ে ওঠার তাওফিক দান করুন। আমিন। ১৬.১১.২০২০

Comments