Skip to main content

কল্যাণ-অকল্যাণ সবই আল্লাহর হাতে

দুনিয়া ও আখিরাত নিয়েই মানুষের জীবন। দুনিয়া হলো কর্মক্ষেত্র। মানুষ চেষ্টা করবে, চেষ্টার বিনিময়ে দুনিয়ায় সে কতটুকু ফল লাভ করবে তা একান্তভাবে নির্ভর করে আল্লাহর মর্জির ওপর। যেমন, রিজিক বন্টনের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমার রব যার জন্য চান রিজিক প্রশস্ত করে দেন, আবার যার জন্য চান সংকীর্ণ করে দেন। তিনি নিজের বান্দাদের অবস্থা জানেন এবং তাদেরকে দেখছেন’- সূরা বনি ইসরাঈল ৩০। রিজিক শুধু অর্থকড়ি নয়, মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি-যোগ্যতা, স্বাস্থ্য, স্বামী/স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি সবই রিজিক (অনুগ্রহ)। একই মা-বাবার চারটি সন্তান। এই সন্তানদের মাঝে বর্ণ, উচ্চতা, মেধা, যোগ্যতা, স্বাস্থ্য নানা দিক দিয়ে বেশ পার্থক্য। এই পার্থক্যের মধ্য দিয়ে আল্লাহপাক কারো প্রতি বেশি অনুগ্রহ, আবার কারো প্রতি কম অনুগ্রহ করেছেন, এমনটি কি মনে করা যায়? সবাই বলে উঠবে, না না আল্লাহ কারো প্রতি বেইনসাফী করতে পারেন না। কিসে কল্যাণ তা আল্লাহপাকই ভালো জানেন। এটা ঠিক, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কারো প্রতি বিন্দু পরিমাণ জুলুম করেন না। কাউকে যদি কম অনুগ্রহ করেন সেটি তাঁর জানা আছে এবং কিভাবে পুষিয়ে দেবেন তাও তিনি জানেন। একই সমাজের মানুষ। কেউ উচ্চ পদে আসীন, হতে পারে রাষ্ট্রের প্রধান আবার কেউ পিয়ন, ড্রাইভার। এ-সবই আল্লাহর সৃষ্টির বৈচিত্র্য। দুই ভাই/বন্ধু একই পরিমাণ পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমে একজন দ্রুত সমৃদ্ধি অর্জন করে, অন্যজন টিকতেই পারে না। এমনটি আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি। দু’বন্ধু ক্লাসের সেরা হয়ে কর্মজীবনে অনেক সময় বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। মনের মতো স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান পেয়ে একজন গর্ব-অহঙ্কার করছে, বিপরিত দিকে একজন না পেয়ে ধৈর্য অবলম্বন করছে। এদের মধ্যে কে ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী এটি কেবল আল্লাহই ভালো জানেন। মানুষ তার চেষ্টা-প্রচেষ্টার পর যা পায় মূলত সেটিই তার তকদীর। এই তকদীরে বিশ্বাস ঈমানেরই অংশ। সৃষ্টির মাঝে বৈচিত্র্য ও বৈষম্য প্রাকৃতিক (আল্লাহর সৃষ্ট) এবং এর কল্যাণকারিতা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে আমরা মানুষ হিসেবে কিছুটা উপলব্ধি করতে পারি। প্রথমত, মানবসমাজ পরিচালনা করা এবং এখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পরস্পর নির্ভরশীল। সবাই একই মানের হলে সমাজ সুষ্ঠুভাবে চলতো না। দ্বিতীয়ত, আল্লাহর দৃষ্টি অনেক প্রসারিত। এই দুনিয়ার পরও রয়েছে অসীম এক জগত। দুনিয়া ও আখিরাত দুটো নিয়ে আল্লাহর পরিকল্পনা, ভাবনা। এই ধন-সম্পদ, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি আল্লাহর ভাষায়, সবই পরীক্ষা। আল্লাহপাক কাউকে দিয়ে পরীক্ষা করছেন আবার কাউকে না দিয়ে পরীক্ষা করছেন। এই পরীক্ষাগারে আমরা সবাই পরীক্ষার্থী। যাকে অঢেল সম্পদ, নেতৃত্বের যোগ্যতা, স্বামী/স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং নানাবিধ উপায়-উপকরণ ও সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন, তার পরীক্ষা বড় জটিল। পক্ষান্তরে যাকে স্বল্পকিছু দেয়া হয়েছে, তার হিসাবটাও হবে হালকা। দুনিয়ার জীবনটা বড় ক্ষণস্থায়ী। রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘মু’মিনের জন্য দুটিই উত্তম। তার জীবনে যখন সচ্ছলতা আসে সে তখন শুকরিয়া আদায় করে, আবার যখন দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা আসে তখন ধৈর্য অবলম্বন করে’। মূলত আল্লাহর বান্দাহ হয়ে চলার মধ্যেই রয়েছে জীবনের সফলতা, চাই সে ধনী হোক বা দরিদ্র হোক। রসূল (সা)-এর সাহাবীদের মাঝে উভয় শ্রেণিই ছিলেন। আবু বকর (রা), ওমর (রা), ওছমান (রা) ও আলী (রা)-এর মতো সম্ভ্রান্ত বংশীয় ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কুরাইশ নেতৃবৃন্দ ছিলেন, আবার বিলাল (রা)-এর মতো ক্রীতদাসও। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁদের মধ্যে মর্যাদাগত কোনো পার্থক্য ছিল না এবং আখিরাতেও হবে না। আল্লাহর ভাষায় তোমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা আল্লাহকে বেশি ভয় করে। সম্পদশালী হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামে কখনই নিরুৎসাহিত করা হয়নি। আপত্তি করা হয়েছে অর্থপূজক হতে। হারাম-হালাল উপেক্ষা করে ধনী হওয়া ও অহঙ্কার প্রকাশকারী সম্পর্কেই বলা হয়েছে, সূঁচের ছিদ্রপথে একটি হাতি প্রবেশ করানো যতখানি কাঠিন একজন ধনী ব্যক্তির জান্নাতে প্রবেশ ততখানিই কঠিন। আল্লাহপাক তাঁর যে সব বান্দার প্রতি যতবেশি অনুগ্রহ প্রদান করবেন তার দায়িত্বের পরিধিও তত বেড়ে যাবে। তকদিরের ওপর নির্ভর করে শ্রমবিমুখ থাকা ইসলামে পছন্দীয় নয়। বরং কুরআনে বলা হয়েছে, ‘ফরজ নামাযান্তে রুজির জন্য বেরিয়ে পড়ো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো’। নামাযের মধ্যে যেমন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তেমনি রুজি-রোজগার অর্জনের ক্ষেত্রেও আল্লাহর বিধানকে স্মরণ করতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য, কর্মময় জীবনে আমরা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করি। ফলে মুসলিম হয়েও সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটে আমরা নিমজ্জিত হয়ে পড়েছি। অবৈধ পথে সম্পদ অর্জনকারী ধনী ব্যক্তিবর্গ আল্লাহর নাফরমানিতে অনেক দূর অগ্রসরমান। বলা যায়, আখিরাতকে ভুলে এরা দুনিয়া ক্রয় করে নিয়েছে এবং জাহান্নামকে নিজেদের ঠিকানা বানিয়ে নিয়েছে। নানা বর্ণ, নানা ভাষা, নানা ধর্ম, নানা শ্রেণি ও নানা পেশার মানুষ নিয়ে মনুষ্যসমাজ। মানুষ আল্লাহর সেরা সৃষ্টি, তাঁর বড় প্রিয়, বড় আদরের। তিনি মানুষের শুধুই কল্যাণ চান। আল্লাহকে যে অবিশ্বাস করে তারও তিনি কল্যাণ চান। তিনি কাফিরকে অবকাশ দেন ঈমান আনার লক্ষ্যে। জীবনের একটি বড় সময় আল্লাহর নাফরমানি শেষে যদি কোনো ব্যক্তি তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসে আল্লাহ তাকেও ক্ষমা করতে চান। অবশ্য কোনো জালেম যখন চরম সীমালঙ্ঘন করে এবং মজলুমের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে, তখন তার জুলুম থেকে মজলুমকে হেফাজত করার লক্ষ্যে আল্লাহ অনেক সময় পাকড়াও করেন। তবে এমন সংখ্যা নেহায়েত নগণ্য। তাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে তাঁর বান্দাদের উচিৎ কালক্ষেপন না করে দ্রুত আল্লাহর পথে ফিরে আসা। দাওয়াতের পরিধি হবে সকল মানুষের প্রতি, গ্রহণের বিষয়টি একান্তই তার ও আল্লাহপাকের মর্জি। কল্যাণ-অকল্যাণ কারো আয়ত্তাধীন নয়। সবই আল্লাহর করায়ত্তে। কল্যাণ চাইতে হবে আল্লাহরই কাছে এবং কল্যাণ করার ক্ষমতাও তাঁর। আল্লাহর কাছে বান্দার চাওয়াটা তিনি পছন্দ করেন এবং বান্দার ডাক শুনেন ও জবাব দেন। দুনিয়ার জীবনে বান্দার প্রার্থনা পূরণ না হলে তা তিনি জমা করে আখিরাতে দান করবেন এবং বান্দা তখন দারুণ খুশি হয়ে পড়বেন। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করুন। আমিন। ০২.১১.২০২০।

Comments