দোষে-গুণে আমরা মানুষ। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ভালোর পাশাপাশি মন্দও রয়েছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, ভালোর চেয়ে আমরা মানুষের মাঝে মন্দটা বেশি তালাশ করি। কেউ যদি মানুষের মাঝে তার মন্দটা তালাশ করে তাহলে অবশ্যম্ভাবী সে তার চলা, বলা, খাওয়া, পরা নানা কাজে অনেক মন্দ খুঁজে পাবে। অথচ আল্লাহপাক মানুষের ত্রুটি তালাশ করতে নিষেধ করেছেন এবং সুধারণা পোষণ করতে বলেছেন। এতে লাভ, দুনিয়ার জীবনে মানুষের সাথে তার বন্ধুত্ব বাড়বে এবং পরিবার ও সমাজে সে প্রশান্তির জীবন যাপন করতে পারবে; আখিরাতে আল্লাহপাক তাঁর সেই বান্দার ত্রুটি-বিচ্যুতি গোপন ও ক্ষমা করবেন।
সাধারণত অনুদার বা কৃপণ ব্যক্তি (অর্থে নয়, মনে) মানুষের মাঝে ভালো কিছু খুঁজে পায় না এবং সে মানুষের প্রশংসা নিজে যেমন করতে পারে না, আবার তার সম্মুখে কারো প্রশংসা সে শুনতেও রাজি নয়। সবকিছুর মধ্যে সে নেতিবাচক কিছু খুঁজে। এটি একটি মানসিক রোগ। সামনা-সামনি প্রশংসা পছন্দনীয় নয় যা সাধারণত তৈলবাজরা করে থাকে। কিন্তু ভালো কাজের স্বীকৃতি একজন মানুষের প্রাপ্যও বটে। মুসলমান হিসেবে প্রশংসা করার ভাষাও একটু ভিন্ন। যেমন, ভালো কিছু শুনলে বা ভালো কিছু করলে আমরা বলে উঠি, আলহামদু লিল্লাহ-আল্লাহপাক তোমাকে পুরস্কৃত (যাঝাকাল্লাহ খায়ের) করুন। এখানে আল্লাহর প্রশংসার সাথে সাথে বান্দার কাজেরও স্বীকৃতি দেয়া হয়।
অনুদার লোকগুলোর হাতে থাকে গুনাহ/হারামের দীর্ঘ ফিরিস্তি ও সাথে অনুবীক্ষণ যন্ত্র। মানুষের বলা, লেখায় তারা অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে। অথচ আল্লাহপাক হারামকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন। গুনাহের সাথে নিয়তের যোগসাজশ লাগে। আবার গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর তাওবা করলে গুনাহকারী আর শাস্তিযোগ্য থাকে না। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের জীবনকে সহজ করতে চান। কিন্তু অতি সাবধানী কিছু ব্যক্তি নানাভাবে মানুষের জীবনকে সংকীর্ণ করে তুলে। আল্লাহপাক তাঁর কিতাবে অতীতের ধর্মীয় নেতাদের বাড়াবাড়ির নিন্দা করেছেন। হয়তো সে ভালো নিয়তেই করে কিন্তু এক পর্যায়ে সে চরমপন্থী হয়ে যায় এবং নিজেকে ছাড়া আর কাউকে ভালো মনে করে না।
নামায ইসলামের অন্যতম রুকন, মৌলিক ইবাদত, ঈমান আনার সাথে সাথে যা আদায় করা অবশ্য পালনীয়। সেখানে আমাদের হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে, নামাযে ইমামের আনুগত্যই মৌলিক, মুছল্লির কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই, ইমামের আনুগত্যের ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা বা ত্রুটি নামায নষ্ট হওয়ার জন্য যথেষ্ট। ইমামের ত্রুটি-বিচ্যুতি কতখানি মানা যাবে সেটিও নামায আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছে। ফরজ লঙ্ঘন করলে নামায হলো না, ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সেজদার মাধ্যমে সংশোধন করা যায় এবং এর নীচে সুন্নাত-মুস্তাহাবের ভুল-ত্রুটি ধর্তব্যের মধ্যে নয়। সুন্নাত-মুস্তাহাব (ফিকাহর দৃষ্টিতে) আমলের পরিপূরক, সৌন্দর্যবর্ধক ও বান্দাকে তার রবের নিকটবর্তী করে; এটি ব্যক্তির ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। উম্মাহর মাঝে যে মতপার্থক্য ও ঝগড়া-ঝাটি তা সবই সুন্নাত-মুস্তাহাব নিয়ে। আমি বুঝেছি, মতপার্থক্যগত বিষয়ে যে কোনো একটি অনুসরণের সুযোগ রয়েছে। এ-সব সুন্নাত-মুস্তাহাব আমল না করতে পারলে গুনাহ নেই; কিন্তু এ-সব নিয়ে দলাদলি ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা কবীরা গুনাহ।
ইসলাম মানব ধর্ম। মানবপ্রকৃতিতে যেটি ন্যায় ও কল্যাণকর সেটিই নেক আমল এবং মানবপ্রকৃতি যেটি ঘৃণা করে, অকল্যাণকর মনে করে সেটিই বদ আমল। আল্লাহ তায়ালা ঈমানের সাথে নেক আমলকারীদের সুসংবাদ শুনিয়েছেন। সূরা আসরে আল্লাহ স্পষ্ট করেছেন যে ৪টি গুণবিশিষ্ট মানুষেরাই ধ্বংস-বিপর্যয় থেকে বেঁচে যাবে। এখানে নেক আমলের কোনো ফিরিস্তি দেয়া হয়নি। সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি যেটি নেক আমল মনে করে সেটিকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের চেনাজানা জিনিসই হালাল করা হয়েছে। আবার বলেছেন, সকল পাক জিনিসই তোমাদের জন্য হালাল। এ-সব কথাবার্তার মধ্য দিয়ে মানবপ্রকৃতিকেই মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং আল্লাহপাক তাঁর দ্বীন পালনকে সহজ করে দিয়েছেন।
ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম যা সহজেই মানা যায় এবং এর মধ্যে কোনো সংকীর্ণতা আল্লাহ রাখেননি। সাধারণের কাছে দ্বীনের উপস্থাপন হতে হবে সহজ। হতাশা নয়, আশার বাণী শোনাতে হবে। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাকে শাস্তি দানের জন্য কোনো বাহানা তালাশ করবেন না, বরং ক্ষমা করার জন্য নানা উপায় খুঁজবেন। ক্ষমা করার মধ্যেই আল্লাহর যতো আনন্দ। এজন্য আল্লাহর অনুগত হতে হবে এবং ক্ষমাপ্রার্থী ও বিনয়ী হতে হবে। বিনয়ী বান্দারা ক্রমান্বয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের দিকে এগিয়ে যায়।
আল্লাহপাক দেখতে চান তাঁর বান্দাদের মাঝে কারা তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার কাজে এগিয়ে যায় এবং পথভোলা বান্দাদের কাছে পথের দিশা প্রদান করে। এ জাতীয় লোকদের জন্য আল্লাহর প্রকাশ্য ঘোষণা রয়েছে, তাদের সকল গুনাহ (ছগিরা-কবীরা নয়, সকল গুনাহ) আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন ও জান্নাতে দাখিল করাবেন। মজার ব্যাপার হলো, যারা আল্লাহর জন্য নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ (বিক্রি) করে দেয় তারা জ্ঞানত আল্লাহর নাফরমানি করতে পারে না।
আল্লাহপাক আমাদেরকে ক্ষমা ও সহনশীলতার গুণে গুণান্বিত এবং তাঁর বান্দাদের কাছে দ্বীনকে সহজভাবে উপস্থাপন ও নিজেদেরকে দ্বীন মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন। ০১.১১.২০২০
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment