Skip to main content

আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি

আল্লাহ তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাকে পছন্দ করেন। কৃতজ্ঞ বলতে বোঝায়, আল্লাহপাক দয়া করে তাকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা। সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট থাকতে পারা তাঁর দেয়া এক নেয়ামত। কৃতজ্ঞতা অত্যন্ত ব্যাপক। সন্তান তার পিতা-মাতার প্রতি, শিক্ষার্থী তার শিক্ষকের প্রতি এবং স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি, মোট কথা আমরা পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল ও পরস্পর থেকে উপকৃত হচ্ছি। উপকারের স্বীকৃতির নামই কৃতজ্ঞতা। ছাত্রের সদাচরণের বিনিময়ে শিক্ষক যখন বলে উঠে, বাবা তোমার মতো ছাত্র পেয়ে আমি ধন্য। এমন বাক্য উচ্চারণ ছাত্রের প্রতি শিক্ষকের কৃতজ্ঞতারই প্রকাশ। সমাজে কৃতজ্ঞ লোকের আধিক্যই পারে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে। আমি আমার গত লেখায় সূরা বনি ঈসরাইলের ৩০ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করে বলেছিলাম, আল্লাহপাক তাঁর সকল বান্দাকে সমভাবে তাঁর অনুগ্রহ (রিজিক) দেননি এবং কমবেশি করেছেন তা তিনি স্পষ্টও করেছেন। আমি আবারও সেটির উদ্ধৃতি দিয়ে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করতে চাই। ‘তোমার রব যার জন্য চান রিজিক প্রশস্ত করে দেন, আবার যার জন্য চান সংকীর্ণ করে দেন। তিনি নিজের বান্দাদের অবস্থা জানেন এবং তাদেরকে দেখছেন’- সূরা বনি ইসরাঈল ৩০। আয়াতের শেষের এই অংশটুক (তিনি নিজের বান্দাদের অবস্থা জানেন এবং তাদেরকে দেখছেন) আমার বেশ মনে ধরেছে। আল্লাহ যাকে বেশি দিয়েছেন ও যাকে কম দিয়েছেন উভয়কেই জানেন এবং তাদেরকে দেখছেন। অর্থাৎ বেশি পেয়ে তাঁর বান্দাহ কী আচরণ করছে এবং অপর বান্দাহ কম পেয়ে তার আচরণ কী উভয়টি তিনি দেখছেন। ‘আল্লাহ জানেন ও দেখছেন’-এটি যদি কেউ উপলব্ধি করতে পারে তাহলে অতিরিক্ত রিজিক পেয়ে গর্ব ও অহঙ্কার করা এবং কম পেয়ে কারো হতাশ হওয়া ও অধৈর্য হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। উভয় অবস্থায় আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ থাকা সম্ভব। আর আল্লাহপাক তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকেই পছন্দ করেন ও পুরস্কৃত করেন। আল্লাহতায়ালা পুরস্কৃত করবেন এবং কাকে ও কিভাবে; দুনিয়া না আখিরাতে তা তিনিই জানেন। আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি দয়ার্দ, কখনই অকল্যাণ চান না। দুনিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে কাউকে কম দিলে যেহেতু ‘তিনি জানেন ও দেখছেন’ তখন বিশ্বাস করতে হবে এর মধ্যে অবশ্যই কল্যাণ রয়েছে। দুনিয়ার জীবনে দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণায় কেউ যদি সবর করে ও তার রবের উপর সন্তুষ্ট থাকে; আমার উপলব্ধি আল্লাহপাক তার সেই সবরকারী বান্দাহকে বেগুনাহ করে তাঁর কাছে ফিরিয়ে নেবেন এবং জান্নাত দান করবেন। কারণ আল্লাহপাক কারো প্রতি বেইনসাফী করেন না। দুনিয়ার জীবন একটি পরীক্ষাগার এবং তিনি তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা নেবেন। পরীক্ষার কথা আল্লাহপাক নানাভাবে তাঁর কিতাবে ব্যক্ত করেছেন। তাঁর বাণী, ‘আমরা অবশ্যই ভয়-ভীতি, অনশন, জান-মালের ক্ষতি এবং উপার্জন ও আমদানি হ্রাসের দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবো। এ অবস্থায় যারা সবর করে এবং বিপদ-মুসিবত উপস্থিত হলে বলে আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাব, তাদের জন্য সুসংবাদ’- সূরা বাকারা ১৫৫-১৫৬। আল্লাহর এই ওয়াদায় সবরকারীদের সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। মানুষ তার সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালাবে এবং বিনিময়ে যা পাবে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক (অনুগ্রহ) মনে করে সন্তুষ্ট থাকবে, এরই নাম কৃতজ্ঞতা (শুকরিয়া)। আমাদের শিক্ষা-দীক্ষা, স্বামী/স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-পরিজন, সামাজিক মর্যাদা, হেদায়াত, সুস্থতা সবই আল্লাহর অনুগ্রহ; গণনা করে শেষ করা যাবে না। প্রয়োজন, আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। আমরা মাঝে-মধ্যে শুনি, রিক্সাওয়ালার তিন ছেলের একজন বুয়েটে, একজন মেডিকেলে ও একজন ঢাবিতে চান্স পেয়েছে। এমনটি হলে সেটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বান্দার প্রতি আল্লাহপাকেরই অনুগ্রহ। আমি তো জীবনের পরতে পরতে আল্লাহর অনুগ্রহ লক্ষ্য করছি। করোনাকালে দেশের বস্তিবাসী, দীনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো করোনা উপেক্ষা করে শ্রম দিচ্ছে ও টিকে আছে; আল্লাহপাকের অনুগ্রহ ছাড়া আর কী বলা যায়? অথচ দেশের শীর্ষ শিল্পপতি, ডাক্তার, সরকারি উচ্চপদস্থ আমলা, বিচারপতি ও ধনী মানুষগুলো অঢেল ধন-সম্পদকে কোনো কাজেই লাগাতে পারলো না। এ-সবই আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের উপলব্ধিতে নেই। আমদের যা আছে সেটিকে গৌণ করে দেখছি, অথচ যেটি নেই সেটিকে মুখ্য করে জীবনে সুখ-শান্তি-স্বস্তি হারিয়ে চরম হতাশায় ভুগছি। সবকিছু উপেক্ষা করে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করার মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা ও সত্যিকার শান্তি-স্বস্তি। আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) জ্ঞাপন কথা ও কাজে-কর্মে হতে হবে। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি বিনয়ী হবে, সবধরনের নাফরমানি থেকে দূরে থাকবে এবং মুখে সর্বদা উচ্চারিত হবে ছুবহান আল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার। আল্লাহর বান্দাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা হলো উপকারকারীর উপকার স্বীকার করা ও সম্ভব হলে বিনিময় প্রদান (পিতা-মাতা, স্বামী/স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-পরিজন) এবং আল্লাহর সকল সৃষ্টির প্রতি সদাচরণ করা। আল্লাহর সৃষ্টি থেকে আমরা প্রতিনিয়তই উপকৃত হচ্ছি। সৃষ্টির প্রতি সদাচরণ মূলত আল্লাহর প্রতিই সদাচরণ; তাতে আল্লাহ তাঁর প্রতি দ্রুত সন্তুষ্ট হয়ে পড়েন। আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দাহ কখনই তাঁর ও তাঁর বান্দার সাথে দুর্ব্যবহার করতে পারে না। আল্লাহপাক সর্বাবস্থায় (সুখে ও দুখে) আমাদেরকে তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন। ০৪.১০.২০২০।

Comments