কুরআনের পাঠ
আল্লাহর বাণী :
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
‘(হে নবী), আমি তো তোমাকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই পাঠিয়েছি’- সূরা ফুরকান ৫৬।
কথাটি মূলত কাফিরদের উদ্দেশ্যেই বলা। মক্কায় নবুয়তের মাঝামাঝি সময়ে সূরা ফুরকান অবতীর্ণ। নবুওয়াত লাভের পর মুহাম্মদ (সা) তাঁর জাতির কল্যাণকামী হিসেবেই দ্বীনের দাওয়াত পেশ করছিলেন। অথচ তাঁর জাতির লোকেরা দাওয়াত শুধু প্রত্যাখ্যানই নয় বরং সত্য ও সঠিক পথে ডাকার জন্য তাঁর ও তাঁর সাথীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছিল। জাতির লোকদের এমন আচরণের ফলে তাদের পরিণতি কতো ভয়াবহ হবে রসূল (সা) তা স্পষ্ট উপলব্ধি করছিলেন। ফলে তিনি ভীষণ পেরেশানি অনুভব করতেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়, পেরেশানি নয় মানুষের কাছে স্পষ্ট পৌঁছে দেয়ায় তাঁর রসূল (সা)-এর দায়িত্ব।
আল্লাহর রসূল (সা)-এর দাওয়াতের মূল বিষয় ছিল তাওহীদ, রেসালাত ও আখিরাত। তাঁর দাওয়াত কবুল করলে আখিরাতে চিরশান্তির স্থান জান্নাত, পক্ষান্তরে অমান্য করলে ভয়াবহ শাস্তি জাহান্নাম। তাঁর দাওয়াতে সাড়া দানকারী বিশ্বাসীদের জন্য তিনি সুসংবাদদাতা এবং অবিশ্বাসীদের জন্য ছিলেন সতর্ককারী। এই কাজের বিনিময়ে রসূল (সা)-এর বৈষয়িক কোনো স্বার্থ ছিল না। দাওয়াত যারা কবুল করবে তারা যেমন লাভবান হবে তেমনি যারা অমান্য করবে তারা নিজেরাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
আল্লাহপাক তাঁর কিতাবে মুসলমানদেরকে শ্রেষ্ঠতম উম্মাহ হিসেবে আখ্যায়িত করে মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকা ও অন্যায় থেকে ফিরিয়ে রাখা তাদের দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন (সূরা আলে ইমরান ১১০)। আলে ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, তোমাদের মধ্য হতে এমন একটি দল থাকতে হবে যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে ডাকবে ও অন্যায় থেকে ফিরিয়ে রাখবে এবং এরাই হচ্ছে সফলকাম। বলা যায়, এরাই হচ্ছে রসূলুল্লাহ (সা)-এর যথার্থ উত্তরাধিকার এবং উত্তরাধিকার হিসেবে যারা দ্বায়ী ইলাল্লাহর ভূমিকা পালন করেন তাদেরকেও নানা প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা) থেকে প্রাপ্ত বাণী যথাযথ পৌঁছে দেয়া তাদের দায়িত্ব। গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান ব্যক্তির ওপর একান্ত নির্ভর করে এবং এব্যাপারে কোনো জোরাজুরি নয় বা কাউকে বাধ্য করাও যাবে না বা গ্রহণ না করার মধ্যে দ্বায়ীর কোনো হতাশাও থাকতে নেই।
মুসলমানদের জন্য রসূলুল্লাহ (সা) কেবল সুসংবাদদাতা অর্থাৎ আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়া নয়, বরং সাথে সাথে তিনি একজন শিক্ষক, পরিশুদ্ধকারী ও আদর্শ। মুসলমানদের জন্য তিনি ছিলেন শাসক, বিচারক ও এমন আমীর যার আনুগত্য ফরজ। তাঁর মুখনিঃসৃত প্রতিটি কথা আইনের মর্যাদা রাখে এবং তা মেনে চলতে মুসলমানরা বাধ্য।
রসূল (সা)-কে পরিপূর্ণরূপে আনুগত্য করার তাওফিক আল্লাহ আমাদের দান করুন। ২৪.১১.২০২০
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment