Skip to main content

আল্লাহ নিজে উদার এবং উদারতা পছন্দ করেন

হৃদয়ের প্রশস্ততা ও উদারতা আল্লাহপাকের বড় নেয়ামত। আল্লাহর বাণী, ‘যে স্বীয় মনের সংকীর্ণতা থেকে নিজেকে রক্ষা করলো সেই প্রকৃত কল্যাণ লাভ করলো’- সূরা তাগাবুন ১৬। সংকীর্ণমনা মানুষ নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি উপেক্ষা করে কেবল অপরের মধ্যে ভুল-ত্রুটি তালাশ করে। মানুষের দোষ- ত্রুটি উপেক্ষা করা ও ক্ষমা করা তার স্বভাববিরুদ্ধ। ক্ষমা করার মাঝে যে আনন্দ তা থেকে সে বঞ্চিত। ফলে সে যেমন স্বস্তি পায় না, তেমনি অপরকেও স্বস্তিতে থাকতে দিতে চায় না। গীবৎ ও পরনিন্দায় সে মজা পায় এবং সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ায়। সংকীর্ণমনা মানুষের আধিক্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিপদ ডেকে আনে। বাংলাদেশ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মানুষের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করার জন্য প্রয়োজন হৃদয়ের প্রশস্ততা। আল্লাহপাক তাঁর বান্দার অপরাধ ক্ষমা করার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন। যতো বড় অপরাধীই হোক, আল্লাহর ক্ষমা থেকে নিরাশ না হওয়ার জন্য তিনি তাঁর বান্দাদের ডেকে বলেছেন। সাথে সাথে আল্লাহও চান, তাঁর বান্দারা তাঁর মতো উদার ও ক্ষমাশীল হোক। জুলুম করা আল্লাহ তাঁর নিজের ওপর হারাম করেছেন এবং কেউ তাঁর বান্দার ওপর জুলুম করুক সেটি তাঁর কাছে অসহ্য ও ভয়ঙ্কর অপরাধ। কারো প্রতি জুলুম করা হলে বদলা গ্রহণের সাথে সাথে ক্ষমা করা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবিধান সমপরিমাণ অন্যায়, কিন্তু কেউ যদি ক্ষমা করে দেয় ও সংশোধন করে নেয় তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়, নিশ্চয়ই তিনি যালেমদের পছন্দ করেন না’- সূরা আশ শূরা ৪০। কতো বড় সুসংবাদ। আল্লাহর জিম্মায় পুরস্কার অর্থই হলো ক্ষমাকারী বান্দাকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও জান্নাত দান। আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাওয়ার সহজতম উপায় হলো তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করা। দুর্ভাগ্য, ক্ষমা করার মতো উদারতা আজ আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছে, ক্ষমা করাকে আজ দুর্বলতা ভাবা হয়। অথচ আল্লাহ বলেন, মন্দের জবাব ভালো দ্বার দেয়া তাদের পক্ষেই সম্ভব যারা অতি ধৈর্যশীল ও ভাগ্যবান- সূরা হামীম আস-সাজদা। রসূলুল্লাহ সো) বলেছেন, যে তার ভাইকে ক্ষমা করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে ক্ষমা করবেন। তিনি আরো বলেছেন, যে তার ভাইয়ের দোষ গোপন করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন। এতো সুসংবাদ শোনানোর পরও আমরা ক্ষমার পরিবর্তে হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণার চাষ করছি। সংকীর্ণমনা মানুষ সাধারণত হিংসুটে হয়। সে নিজে অপরের কল্যাণ করতে পারে না, আবার কারো কল্যাণ সহ্যও করতে পারে না। এমন কী বিশ্বজগতে কোনো ব্যক্তি কোনো সুনাম-সুখ্যাতি বয়ে আনলে তিনি যদি তাঁর পছন্দের ব্যক্তি না হন তাহলে তাঁকে মেনে নেয়ার মতো উদারতা তার থাকে না। সংকীর্ণমনা মানুষ তার নিজের ছাড়া আর কারো কৃতিত্ব স্বীকার করতে রাজি হয় না। অথচ হিংসার পরিণতি কতো ভয়াবহ। হিংসা কেবল কবীরা গুনাহ-ই নয়, মানুষের নেক আমল ধ্বংসকারী একটি ঘৃণ্য আমল। রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠ জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। হিংসুকের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কাছে দুআ করার জন্য বলেছেন (সূরা ফালাক)। সংকীর্ণমনা মানুষ প্রতিশোধস্পৃহ হয়, ক্ষমা করা তার অভিধানে নেই এবং প্রতিশোধ গ্রহণে প্রায়ই বাড়াবাড়ি করে। দেখা যায়, কোথাও কোনো ঘটনা ঘটলে স্রেফ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে প্রতিপক্ষের ওপর হামলে পড়ে। এটি বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমাজ অঙ্গনে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। প্রতিপক্ষকে নানা কায়দায় শায়েস্তা করার মানসিকতা কোনো মু’মিনের হতেই পারে না, শয়তানের অনুচররাই কেবল পারে। আজকে পৃথিবীটা শয়তানের দোসরদের দখলে; তাদের কাজই হলো সমাজে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা। দেশে দেশে এতো হানাহানি, মারামারি সবই শয়তান ও তার অনুচরদের কাজ। আল্লাহপাক যখন কোনো জনপদে নবী-রসূল পাঠান তখন সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব শয়তান ও তার অনুচরদের হাত থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দায়িত্ব দিয়েই পাঠান। সকল নবী-রসূলের সাথে সমসাময়িক রাজা-বাদশা ও শাসকদের বিরোধের মূল কারণ রাজনীতিক। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে উদারতার শিক্ষা দেয়। একজন মু’মিন তার হন্তাকেও ক্ষমা করতে পারে; পারে এ কারণেই যে সে আল্লাহর পক্ষে কাজ করে। ফলে তার সাথে শত্রুতা মূলত আল্লাহর সাথেই শত্রুতা এবং প্রতিশোধ গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট। সূরা ইয়াছিনে আল্লাহপাক তেমনটিই উল্লেখ করেছেন। তিন তিন জন রসূলের প্রচেষ্টায় যখন একজন ব্যক্তি মুসলমান হয়েছিল তখন সে দ্রুত তার জাতির কাছে ফিরে এসে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানায়। জবাবে তার জাতির লোকেরা তাকে হত্যা করে। সে সময়ে কোনো অভিশাপ নয়, বদলা গ্রহণ নয় বরং তার মুখ থেকে উচ্চারিত হয়, ‘হায়! আমার জাতির লোকেরা যদি বুঝতো কিসের বদৌলতে আমার রব আমাকে ক্ষমা করলেন ও সম্মাণিত লোকদের মধ্যে গণ্য করলেন’। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক অঙ্কিত একজন মুসলমানের চরিত্র। সকল সংকীর্ণতার উর্ধে ওঠে মানুষকে ক্ষমা ও ভালোবাসা দানের মতো উদারতা ও প্রশস্ততা আল্লাহপাক আমাদেরকে দান করুন এবং আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা থেকে মুক্ত করে সুখি ও সুন্দর জীবন-যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন। ০৫.১১.২০২০

Comments