শবে বরাতের সেই জৌলুস
আর নেই। নানা আচার-অনুষ্ঠান, হালুয়া-রুটি বিতরণ, বাড়ি বাড়ি মিলাদ, রাত জেগে
ইবাদত-বন্দেগি, কবর জিয়ারত কতো কিছু আমরা দেখেছি। আমাদের নবম ও দশম শ্রেণিতে কবি
গোলাম মোস্তফার লেখা ‘শবে
বরাত’ কবিতা পাঠ্য ছিল। ‘জান-সালামত বন্টন করা পূণ্য রাত’ ভাগ্যরজনী হিসেবেই আমাদের সমাজে চালু ছিল। শবে
বরাতে সরকারি ছুটির পাশাপাশি বাজারে গোশ্তের চাহিদা ও দাম বেড়ে যেত। মানুষের মধ্যে
জানা-শোনা বেড়ে যাওয়ার কারণে শবে বরাতের আগের আবেদন এখন আর নেই। তারপরও যতটুকু আছে
তার ভিত্তিতে বলা যায়, এটি একটি নফল ইবাদতের রাত এবং নফল ইবাদত মসজিদে নয় ঘরে
করাটাই উত্তম।
দেশের করোনা পরিস্থিতির
কারণে সরকারের পক্ষ থেকে শবে বরাত উপলক্ষে মসজিদে উপস্থিত না হয়ে ঘরে
ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। আল্লামা শফী এবং দেওবন্দের মুহতামিম
আবুল কাসেম নোমানি তাঁদের পক্ষ থেকে মুছল্লিদেরকে ঘরে নামায পড়া এবং করোনা
মোকাবেলায় নিজ নিজ সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য আহবান জানিয়েছেন।
শবে বরাত সম্পর্কীয়
হাদিসগুলো নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষে অনেক কথা রয়েছে। আমি সেদিকে যাব না। হাদিসগুলোর মর্ম
হলো, এ রাতে আল্লাহপাক তাঁর বিপুল পরিমাণ বান্দাকে ক্ষমা করেন, দু’টি শ্রেণি ছাড়া। এক. যারা আল্লাহর সাথে অন্য
কাউকে শরীক করে, দুই. যারা আল্লাহর বান্দাদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করে।
আমি এখানে
হিংসা-বিদ্বেষ নিয়ে একটু বলতে চাই। সমাজ ও রাষ্ট্রে এতো হানাহানি ও শত্রুতার মূলে
রয়েছে পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ। আমরা নিজেকে ছাড়া অপরের ভালো সহ্য করতে পারি
না। উদারতা-প্রশস্ততা আমাদের মাঝ থেকে লোপ পেয়েছে। পরস্পরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষে
আমাদের অন্তরসমূহ ভরপুর হয়ে আছে। অথচ এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, শিরককারী ও
হিংসাকারী ছাড়া ক্ষমাপ্রার্থী সবাইকে এ রাতে ক্ষমা করা হয়।
হিংসার ভয়াবহতা
সম্পর্কে আল্লাহর রসুল (সা) বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয়,
তেমনি হিংসা মানুষের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। বোঝা যায়, হিংসা কেবল কবিরা গুনাহ
নয়, হিংসা মানুষকে নেক আমলশূন্য করে দেয়। হিংসুক ব্যক্তি আল্লাহর কাছে বড় ঘৃণিত
এবং তিনি তাঁর বান্দাদেরকে হিংসুকের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সূরা ফালাকে
তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার কথা বলেছেন।
আসুন, এ রাতে আমরা
আল্লাহতায়ালার কাছে ধর্ণা দেই এবং নিজেদের সকল গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী হই।
আমরা একে অপরকে ক্ষমা করে দেই এবং সকল হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে পরস্পরের
কল্যাণকামী হয়ে যাই।
হে আল্লাহ! আজকের এই
পবিত্র রজনীতে তোমার কাছে আমাদের একটিই প্রার্থনা, বিশ্ববাসীকে করোনা থেকে হেফাজত
করো এবং এই পৃথিবীটিকে সকলের জন্য নিরাপদ করে দাও। ওগো মেহেরবান! তুমি আমাদের
ক্ষমা করো। আমিন। ০৯.০৪.২০২০
Comments
Post a Comment