Skip to main content

করোনা সম্পর্কে ভুল ধারণা



করোনা সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। আল্লাহর সৃষ্ট এক অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর আক্রমণে বাঘা বাঘা নেতৃবৃন্দ, যাদের হুমকিতে সবাই থাকে তটস্থ, যারা যখন-তখন যুদ্ধের ঘোষণা ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অথচ আজ তারাসহ বিশ্ববাসী নিষিদ্ধের (লকডাউনের) কবলে। আল্লাহই যে সর্বশ্রেষ্ঠ, তিনি তা দেখিয়ে দিলেন। এ সব বিপদাপদ তিনি দেন যাতে তাঁর বান্দারা পাপাচার থেকে ফিরে আসে। মানুষ অতীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে, কিন্তু এ যুদ্ধের মতো সে দুটি এতো সর্বব্যাপী ছিল না। করোনা ভাইরাসের মোকাবেলায় তাদের পারমানবিক বোমা মোটেই সক্রিয় হলো না। মানুষের অহমিকা, বড়াই আল্লাহর মোকাবেলায় কতো তুচ্ছ তা যদি উপলব্ধি করতো তাহলে পৃথিবীটা বদলে যেত। করোনার চেয়ে আমরা শক্তিশালী, এটি ভুল, বড় ভুল। হ্যাঁ, মানুষ সৃষ্টির সেরা, সকলের ওপর কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা আল্লাহ মানুষকে দিয়ে রেখেছেন। আবার মানুষকে বড় দুর্বল ও অসহায় করে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহর অতি ক্ষুদ্র সৃষ্টির কাছেও সে অসহায় হয়ে পড়ে। তাই আল্লাহ মানুষকে শিখিয়েছেন, তাঁর সকল সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে তাঁরই কাছে আশ্রয় চাইতে। আল্লাহপাক আমাদেরকে হেফাজত করুন।

করোনা ভাইরাস সংক্রামক। মানুষে মানুষে এটি সংক্রামিত হয়। আমাদের জীবনে মহামারি আকারে কলেরা, গুটিবসন্ত, যক্ষা দেখা গেছে। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত রোগীর সাথে যে দুর্ব্যবহারটা করা হচ্ছে, ইতোপূর্বে সংঘটিত রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের সাথে করা হতো বলে মনে পড়ে না। রসুলুল্লাহ (সা) মহামারি থেকে সতর্ক করেছেন। মহামারি আক্রান্ত এলাকায় যেতে নিষেধ করেছেন, আবার মহামারি আক্রান্ত এলাকা থেকে বের হতেও নিষেধ করেছেন। এ সবই সতর্কতা। সাথে সাথে তিনি এও বলেছেন, ছোঁয়াছে বা কুলক্ষণ বলে কিছু নেই। তাঁর সময়ে কুষ্ঠ রোগকে ছোঁয়াছে বলে মনে করা হতো। তিনি তাঁর হাতে কুষ্ঠ রোগীর বাইয়াত গ্রহণ না করে দূর থেকে ইসলাম গ্রহণের স্বীকৃতি দিয়েছেন; আবার কুষ্ঠ রোগীর সাথে একত্রে খানাও গ্রহণ করেছেন।

আমাদের আকিদা-বিশ্বাস হলো সমগ্র সৃষ্টির ওপর আল্লাহর একক মালিকানা। সকলের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব নিরংকুশ। তাঁর হুকুমের বাইরে কোনো কিছুই ঘটে না। মানুষ তাঁর বান্দাহ ও প্রতিনিধি এবং সে তার সাধ্যমত সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একজন সাধারণ মানুষ ঘরে অবস্থান করবে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। এভাবে সাবধানতা অবলম্বন আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা)-এরই নির্দেশ। ঘরে অবস্থানের পরও যে কেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে, এটি তার তকদির এবং এ অবস্থায় তার মৃত্যু শহীদের মৃত্যু।

করোনা রোগীকে চিকিৎসাদানে নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স, চিকিৎসাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও জরুরী সেবাদানকারী সংস্থা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করোনা ঝুঁকি মাথায় নিয়ে মাঠে-ময়দানে কাজ করছে। তাদের বিষয়টি আমরা কিভাবে দেখবো। তারা ব্যক্তিগত সুরক্ষা ও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে সেবা প্রদান করবেন। তাদের জন্য রসুল (সা)-এর সেই হাদিস ছোঁয়াছে বা কুলক্ষণ বলে কিছু নেই। আসলে করোনা নিজের থেকে কিছু করার ক্ষমতা রাখে না, যদি আল্লাহর হুকুম না থাকে। আল্লাহর বাণী স্মরণযোগ্য, কোনো বিপদ কখনই আসে না, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। করোনা মহামারিতে সম্মুখসারির যোদ্ধা হলেন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। রব হিসেবে সৃষ্টির লালন-পালনের দায়িত্ব আল্লাহর। তাঁর পক্ষে যারা এই দায়িত্ব পালন করছেন তাদের মর্যাদা অতি উচ্চে। মুসলিম হিসেবে এই বিশ্বাস তাকে স্বতঃস্ফুর্ত ও সানন্দে দায়িত্ব পালনে অনুপ্রাণিত করবে। বিপদের ঘনঘটা তাকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিবে, একেবারেই ভুল। মৃত্যুর সময় সুনির্দিষ্ট এবং সুরক্ষিত দালানে থাকলেও তা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আমাদের সমাজে করোনা রোগী সম্পর্কে সাংঘাতিক ভীতি ছড়ানো হয়েছে এবং এই ভীতির কারণেই সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজেকে লুকিয়ে রাখে, যার ফলে করোনা দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। অথচ করোনা রোগী শনাক্ত হলে মানুষ তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে পারতো। হাটে-বাজারে ও বিভিন্ন লোক সমাগমে কে করোনায় আক্রান্ত তা যেহেতু জানা নেই, দরকার ছিল সে সব স্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভীতি, কিন্তু সেক্ষেত্রে মানুষ নির্বিকার; তাকে ঘরে আটকে রাখার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জোর খাটাতে হচ্ছে। করোনা সংক্রামিত হয় আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি ও শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে। এই ভাইরাসটি বাতাসে ভেসে বেড়ায় না, দ্রুত মাটিতে পড়ে যায়। ভাইরাসটি সরাসরি কারো নাকে-মুখে গেলে বা কোথাও পড়লে তা হাতে লেগে সেই হাত নাকে-মুখে লাগলে করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বারবার বলা হচ্ছে, সাবান পানি দিয়ে হাত ধুলে ভাইরাসটি মারা যায় এবং একান্ত বাইরে যেতে হলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতে ও মাক্স ব্যবহার করতে।

লক্ষণীয় বিষয়, অনেক বাড়ি মালিক করোনা রোগীর সেবাদানে নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার নোটিশ দিচ্ছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সতর্ক করতে হচ্ছে। অথচ একটি বিদেশী ভিডিও দেখলাম, একজন নার্স যখন ডিউটি থেকে বাসায় ফিরছেন সে সময়ে বিল্ডিং-এর সব বাসিন্দা বাসা থকে বের হয়ে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে এবং নার্সটি হাত নেড়ে হাসিমুখে তার জবাব দিচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগীকে হাসপাতালে নেয়ার মতো ভ্যান, ট্যাক্সি বা গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না; এমন কি তার অনেক প্রিয়জন তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অথচ মাস্ক পরিহিত অবস্থায় তাকে স্পর্শ করার পর হাতটি সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই সে ভাইরাস মুক্ত হয়ে পড়ে। করোনা আক্রান্ত রোগীকে একটি পৃথক কামরায় রেখে তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সেবাযত্ন করায় কোনো সমস্যা নেই। কারণ এই ভাইরাসটি বাতাসে ভেসে বেড়ায় না।

সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় মরদেহের সাথে আচরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা বলছেন, মরদেহ থেকে রোগজীবাণু ছড়ানোর কোনো প্রমাণ নেই। করোনায় আক্রান্ত রোগী মারা যাওয়ার পর ২/১ ঘন্টা মাত্র রোগজীবাণু জীবিত থাকে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির লাশ এবং দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির লাশের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সাধারণ নিয়মে গোসল শেষে দাফন-কাফন করা যেতে পারে। অথচ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির লাশ দাফনে পর্যন্ত বাধা দেয়া হচ্ছে। নিশ্চয়ই লাশ হাঁচি-কাশি দেয় না বা শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে না। অহেতুক একটি ভুল ধারণায় মানুষ লাশের সাথে দুর্ব্যবহার করছে, যা তার আপনজনদের জন্য বড় পীড়াদায়ক। করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিটি অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী এবং আল্লাহর রসুল (সা) ঘোষিত একজন শহীদ, যিনি বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবেন যদি ঈমানদার হয়ে থাকেন। আল্লাহর রসুল (সা)-এর আলোচিত সেই হাদিসটি এ ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী-ছোঁয়াছে বা কুলক্ষণ বলে কিছু নেই। মানুষের মাঝে এ সব ভুল ধারণা-বিশ্বাস দূর করার জন্য চিন্তাশীল ও বিবেকবান ব্যক্তিবর্গের এগিয়ে আসা দরকার। ২৪.০৪.২০২০



Comments