আল্লাহপাক পৃথিবীতে মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছেন। তাই
বলা হয়েছে তোমরা আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হও, আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হয়।
প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে আল্লাহর গুণ, ক্ষমতা, এখতিয়ার খুব সীমিত
পরিমাণে মানুষকে দান করা করা হয়েছে। আল্লাহ রব, রাজ্জাক, হাকিম; আল্লাহর প্রতিনিধি
হিসেবে মানুষ আব্দুর রব, আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল হাকিম হয়ে সমাজের মানুষ ও
অন্যান্য সৃষ্টির লালন-পালন, রিজিকের বন্টন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে,
এটিই আল্লাহপাকের অভিপ্রায়।
ধনী-দরিদ্র ও নারী-পুরুষ সবার জন্য (সুস্থ-সবল ও মুকিম হলে) একই
সাথে রোযা পালন বাধ্যতামূলক। এই ইবাদতে কাউকে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। রোযা পালনের
মাধ্যমে ক্ষুধার কষ্ট সবাই সমভাবে অনুভব করে। এটা বক্তৃতা দিয়ে বোঝানো নয় বরং
বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে সবাই উপলব্ধি করেন। লালন-পালনের দায়িত্ব মূলত আল্লাহর।
ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান,অসুস্থকে সেবাদান আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষকে প্রদানের
মাধ্যমে মূলত আল্লাহকেই দেয়া হয়। স্কুলজীবনে কবিতা পড়েছিলাম- হাশরের দিনে বিচারে
বসিয়া সুধাবে জগৎস্বামী, তুমি মোরে করো নাই সেবা যবে রুগ্ন যে ছিলাম আমি----। এটা
স্রেফ কবিতা নয়, হাদিসের বাণী। আল্লাহ এ বিশ্বজাহানের রব (লালনপালকারী/প্রতিপালক)।
মানুষ তাঁরই প্রতিনিধি হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করে মূলত আল্লাহর কাজই করে দেয়। তাই
তারা আল্লাহর এত প্রিয়ভাজন।
রোযা ফরয হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে ছাড় দিয়ে বলা হয়েছিল-সামর্থ্য
থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি রোযা না রাখে তাহলে সে যেন ফিদিয়া দেয় এবং এক রোযার ফিদিয়া
হলো একজন মিসকিনকে খাওয়ার খাওয়ানো। পরবর্তীতে এই সুবিধা রোধ করা হলেও চিররুগ্ন,অতি
বার্ধক্য যাদের পক্ষে রোযা রাখা আদৌ সম্ভব নয়, তাদের জন্য এই ফিদিয়া (বিনিময়) দান
অব্যাহত রয়েছে। এখানে রোযার মত (যার পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দিতে চান) এত বড়
ইবাদতের বিনিময় রেখেছেন মিসকিনকে খাওয়ার খাওয়ানোর মধ্যে। এ ছাড়া ইফতার করানোর
ফজিলত প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, কোনো রোযাদারকে ইফতার করানোর ফলে রোযার সমপরিমাণ ছওয়াব
পাওয়া যাবে, অথচ রোযাদারের ছওয়াবের কোনো কমতি হয় না। অর্থাৎ রোযাদারের ছওয়াবের কোনো
ভাগাভাগি নয়, আল্লাহর পক্ষ থেকে বাড়তি প্রদান। ঘটা করে কোনো বিশেষ আয়োজন নয়, বরং
সামর্থ্য অনুসারে ইফতার করানোর কথা বলা হয়েছে। হাদিসের ভাষায় এক টুকরো খেজুর বা এক
ঢোক পানি দিয়ে হলেও। আবার কখনো বলা হয়েছে মানুষকে খাদ্য খাওয়াও এবং এক টুকরো খেজুর
দিয়ে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো।
রসুল (সা.) অত্যন্ত উদার প্রকৃতির ছিলেন, তিনি স্বাভাবিকভাবে অনেক
দান-খয়রাত করতেন; কিন্তু রমযান মাস আসলে তিনি আরো বেশি দানশীল হয়ে পড়তেন এবং বাসার
কাজের লোক ও অধীনস্থদের কাজের পরিমাণ হ্রাস করে দিতেন। এই মাসটি সহানুভূতি ও
সহমর্মিতা প্রকাশের মাস। আমাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী, অধীনস্থ,
চলার সাথী এবং আল্লাহর সকল বান্দার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে নেকির পাল্লা
ভারি করার এক অপূর্ব সুযোগ। এই সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগাবার তাওফিক আল্লাহপাক
আমাদেরকে দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment