‘হে আমাদের প্রতিপালক!
যে বোঝা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের প্রতি
কমোল হও, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি করুণা করো। তুমিই আমাদের অভিভাবক’-সূরা বাকারা
২৮৬ (অংশবিশেষ)।
এ অংশটুকু একটি মোনাজাতের অংশ। সূরা বাকারা
২৮৬ আয়াতবিশিষ্ট কুরআন মজিদের সর্ববৃহৎ সূরা। এটি মাদানী সূরা হলেও শেষ তিনটি আয়াত
হিজরতের পূর্বে মি’রাজের সময় নাজিল হয়। সেই সময়টি ছিল মুসলমানদের
জন্য বড় দুঃসময়। আল্লাহর ক্ষমতা-এখতিয়ার ও সর্বময় ক্ষমতা, মৌলিক আকিদা-বিশ্বাস ও মু’মিনের পূর্ণ আত্মসমর্পণ
(আমরা শুনলাম ও মেনে নিলাম), মানুষের সীমাবদ্ধতা ও পাপ-পুণ্যের প্রতিদানের কথা বলার
পর আল্লাহ নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে তাঁর কাছে দুআ করতে হবে। এ চাওয়া ব্যর্থ হওয়ার
মতো নয়।
এখানে এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে যে, সব
ধরনের বিপদাপদ ও সংকট আল্লাহর দেয়া। সূরা তাগাবুনে বলা হয়েছে, কোনো বিপদ কখনো আসে না,
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আল্লাহর সকল সৃষ্টির ওপর তাঁর কর্তৃত্ব সীমাহীন।
বিপদাপদ বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবার ওপর ক্রিয়া
করে। বিশ্বাসীদের জন্য এটা এক পরীক্ষা। তাদেরকে গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ করে এবং গাফিলতি
থেকে বের করে এনে আল্লাহর বিধান মানার ক্ষেত্রে আন্তরিক করে। পক্ষান্তরে সীমালঙ্ঘনকারীকে
থামিয়ে দেয়। আল্লাহপাক কুরআন মজিদে অনেক স্বৈরশাসক ও জালেম এবং অবাধ্য জাতিকে সমূলে
ধ্বংস করে দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছেন যাতে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে।
বর্তমান সভ্যতা বিজ্ঞানে বিস্ময়কর উন্নতি
করেছে। জল, স্থল ও নভোমন্ডলে তাদের অগ্রযাত্রা ঈর্ষণীয়। গোটা বিশ^ যেন হাতের মুঠোয়।
পাশাপাশি জুলুম-নির্যাতন ও অশ্লীলতা সকল অতীতকে হার মানিয়েছে। অতীতে যে সব অপরাধের
কারণে বিভিন্ন জাতিতে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে তার সবই (সমকামিতা ও অশ্লীলতা, ওজনে কম-বেশি,
মানুষের অধিকার হরণ) পূর্ণমাত্রায় বর্তমান।
পৃথিবী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে
প্রায় পৌঁছে গিয়েছিল। যুদ্ধোন্মাদনায় মধ্যপ্রাচ্য কাঁপছিল। আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক,
ফিলিস্তিনে যুদ্ধের ফলে নারী ও শিশুসহ লক্ষ লক্ষ মানবসন্তান প্রাণ হারিয়েছে এবং বেঁচে
যাওয়া মানুষগুলো কেউ স্মরণার্থী বা কেউ না খেয়ে কঙ্কালসার। ফিলিস্তিন, কাশ্মির ও উইঘরের
মানুষগুলো মাসের পর মাস ও বছর ধরে অবরুদ্ধ। বিশ্ববাসী নির্বিকার। তাদের কান্না আরশের
মালিক আর উপেক্ষা করতে পারেননি। মালিকের প্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করলে হয়তো এতোবড়
বিপর্যয় আল্লাহ দিতেন না। করোনা আতঙ্কে গোটা বিশ্ব আজ অবরুদ্ধ। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। পারমানবিক বোমাগুলো গুদামে পড়ে থাকবে। পৃথিবী হয়তো ভয়াবহ পারমানবিক
বোমার সম্ভাবনা থেকে কিছুদিনের জন্য হলেও রেহাই পেল।১৫.০৪.২০২০
করোনা ভাইরাস আল্লাহর সৃষ্ট এক অতি ক্ষুদ্র
জীবাণু। তার নিজের কোনো ক্ষমতা নেই। আল্লাহই তাকে ক্ষমতা দিয়েছেন। আবার এক সময় আল্লাহ
নিজেই বা তাঁর প্রতিনিধিদের ক্ষমতা দিবেন তাকে কাবু করার। সে পর্যন্ত সে ধ্বংসলীলা
চালিয়ে যাবে। নমরুদের মত পরাক্রমশালী ও স্বৈরশাসক সামান্য এক মশার আঘাতে নিহত হওয়া
এবং ফিরাউনের মত আর এক জালেম মুসা (আ)-এর লাঠির আঘাতে বিভক্ত হয়ে পড়া সাগরের মাঝে সলিলসমাধি
সবই আল্লাহর হুকুম।
যে সব পরাশক্তির হাতে এতো মারণাস্ত্র যা
পৃথিবীকে মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিতে পারে, তারা আজ করোনার কাছে বড় অসহায়, সম্পূর্ণ পর্যদুস্ত।
মাত্র তিন-চার মাসের ব্যবধানে সোয়া লক্ষ মানুষ ইতোমধ্যে মৃত্যুর কোলো ঢলে পড়েছেন। সুপারপাওয়ার
এক আমেরিকাতেই মৃত্যু পঁচিশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দেশের
মৃত্যু দুই লাখের মধ্যে সীমিত থাকলে সফল হবেন বলে উল্লেখ করেছেন। কোনো রাষ্ট্র বা কোনো
ব্যক্তি কর্তৃক তাদের একজন নাগরিক আক্রান্ত বা নিহত হলে প্রতিশোধ গ্রহণে একটুও বিলম্ব
করতেন না। প্রথম বিশ্ব বলে পরিচিত বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলোকেই করোনা প্রথম আঘাত হেনেছে।
কার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে? যিনি ঘটিয়েছেন তিনি তো মহান ও পরাক্রমশালী এবং সকল
শাসকের শাসক ও অপ্রতিদ্বন্দ্বি ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ ভিন্ন আর কেউ নন। তাঁর মোকাবেলায়
দাঁড়ানোর ক্ষমতা কারো নেই।
এই মুহূর্তে আমাদের ওপর যে বিপদ আপতিত
হয়েছে তা বহন করার ক্ষমতা প্রকৃতপক্ষে আমাদের নেই। অনেক দাম্ভিক ও অহংকারী বলেন, আমরা
করোনার যে শক্তিশালী-এ জাতীয় কথাবার্তা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়। যেহেতু বিপদ আল্লাহর
পক্ষ থেকে, সেহেতু নিজের সকল সামর্থ্য ব্যবহার করে আল্লাহর শেখানো ভাষায় যদি বলতে পারতাম,
‘হে আমাদের প্রতিপালক!
যে বোঝা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের প্রতি
কমোল হও, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি করুণা করো’ কতই না ভালো
হত।
যদি বিশ্ববাসী ফিরে আসতো অর্থাৎ অবসান
হতো যুদ্ধোন্মাদনা, বিলুপ্ত হত সকল জুলুম-অত্যাচার ও পাপ-পঙ্কিলতা এবং মানুষ আল্লাহর
কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হত তাহলে হয়তো আল্লাহ দ্রুতই আমাদের থেকে হটিয়ে দিতেন এ মহাবিপদ।
এ বিপদ কোনো বিশেষ অঞ্চল বা মানবগোষ্ঠীর ওপরে নয় যা অতীতে হয়েছে। এমন কি দুটো বিশ্বযুদ্ধও
বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে সমভাবে প্রভাবিত করেনি। কিন্তু এবারের করোনা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।
একযোগে সকল মানবগোষ্ঠী এবং উদ্ধত ও জ্ঞান-বিজ্ঞান-ধনসম্পদে সেরাদের ওপরে আঘাতটা এসেছে
প্রথম। বাকি বিশ্বের ওপরেও ধেয়ে আসছে। শুধু বস্তুগত উপায়-করণের ওপর নির্ভরশীলতা নয়,
পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে পুরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের মধ্যেই রয়েছে আমাদের মুক্তি।
হে আমাদের রব! তুমি আমাদেরকে শিখিয়েছ বিপদ
মুহূর্তে তোমার কাছে দুআ করার ভাষা, পরোয়ারদেগার তুমি আমাদের ক্ষমা করো ও করোনা থেকে
মুক্তি দাও। আমিন।
Comments
Post a Comment