‘বলো (আমার একথা) হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের আত্মার ওপর জুলুম করেছো
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয়ই
তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা ফিরে এসো তোমাদের রবের দিকে এবং তাঁর অনুগত হয়ে যাও
তোমাদের আযাব আসার পূর্বেই। তখন কোনো দিক থেকেই আর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। আর
অনুসরণ করো তোমাদের রবের প্রেরিত কিতাবের সর্বোত্তম দিকগুলোর- তোমাদের ওপর আকস্মিকভাবে
আযাব আসার পূর্বেই- যে সম্পর্কে তোমাদের খবর থাকবে না’- সূরা আয যুমার ৫৩-৫৫।
ধানমন্ডি তাকওয়া
মসজিদের সম্মানিত খতিব আলহাজ্জ মুফতি সাইফুল ইসলামের ইউটিউবে করোনা ভাইরাসকে সম্মুখে
রেখে গতকালে প্রদত্ত সূরা আয যুমার ৫৩-৫৫ আয়াতের আলোচনা শুনছিলাম। তখনই ভেবেছিলাম ফেসবুক
বন্ধুদের সাথে আলোচনাটি শেয়ার করবো। ‘মন্দা উত্তরণে করণীয়’ বিষয়ে একটি লেখা নিয়ে সারাটি দিনই ব্যস্ত ছিলাম, তাই বেশ বিলম্ব হয়ে
গেল। (আমার সেই লেখাটি ফেসবুকে দেয়া আছে)।
সূরা আয যুমারের
এই তিনটি আয়াতে মানব জাতিকে আশার বাণী শোনানো হয়েছে। হে আমার বান্দারা, বড় স্নেহ-আদর
ও ভালোবাসার ডাক। আসলে মানুষ আল্লাহর বড় প্রিয় সৃষ্টি, সকল সৃষ্টির সেরা ও তাঁর প্রতিনিধি।
মানুষ অন্যায় করবে, পাপ-পঙ্কিলতায় ডুবে থাকবে, আর আল্লাহ ধরে ধরে জাহান্নামে দিয়ে মজা
দেখবেন, এটি তাঁর অভিপ্রায় নয়। জীবনের শেষ মুহূর্তে হলেও সে ফিরে আসুক এবং তাঁর অনুগত
বান্দাহ হয়ে যাক, এটি আল্লাহতায়ালার একান্ত কামনা। যারা দীর্ঘদিন ধরে আল্লাহর নাফরমানি
করে, তারা একটি পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়ে এবং নাফরমানির দিকেই ক্রমাগত অগ্রসর হতে থাকে।
তাদের জন্য এই আয়াতটি বড়ই উৎসাহব্যঞ্জক এবং ফিরে আসার পথটি তাদের জন্য উন্মুক্ত করে
দেয়। এখানে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাইকে আহবান জানানো হয়েছে। এই আয়াতটি রসুল (সা)-এর
কাছে ছিল খুবই উৎসাহজনক। ইসলাম গ্রহণকারী এমন অনেকেই ছিলেন, যাদের জাহেলী জীবনটা ছিল
বড় অন্যায় ও পাপাচারে পূর্ণ। এই আয়াতটি তাঁদের অন্তরে স্বস্তি এনে দিয়েছিল। এখনো যারা
ইসলামের বিরোধীতা করছে এবং নানা ধরনের অন্যায় কাজে জড়িয়ে আছে, এই আয়াতটি তাদের জন্যও
সুসংবাদের বার্তা বহন করছে। আল্লাহ নিজেকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু হিসেবে উল্লেখ করে
বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। বান্দাকে ক্ষমা করার মধ্যেই তাঁর
যত আনন্দ।
কখন যে কার
ডাক আসবে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। এখন করোনা ভাইরাসে সারা বিশ্ব আতঙ্কিত। সবার
মাঝে মৃত্যু ভয় পেয়ে বসেছে। কারো জীবনে এমন গণ আযাবও আসতে পারে আবার অকস্মাৎ কারো মৃত্যুর
ডাক আসতে পারে। তাই তিনি আহবান জানিয়েছেন, ‘তোমরা ফিরে এসো তোমাদের রবের দিকে এবং তাঁর অনুগত হয়ে যাও আযাব আসার
পূর্বেই’। মৃত্যু চলে আসলে পরিণতি কী হবে সেটিও তিনি বলে দিয়েছেন, ‘তখন কোনো দিক থেকেই আর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত
হবে না’। এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে, কেউ গুনাহ থেকে তাওবা করে আল্লাহর অনুগত বান্দাহ
হয়ে গেলে সে আর পূর্বে কৃত অপরাধের জন্য শাস্তিযোগ্য থাকে না। মানুষের হক নষ্ট করা
বিষয়টি স্বতন্ত্র।
আল্লাহর কিতাব
মূলত পথ নির্দেশনা। অনুসরণ করো তোমাদের রবের প্রেরিত কিতাবের সর্বোত্তম দিকগুলোর-অর্থাৎ
এখানে রয়েছে কিছু আদেশ, আছে নিষেধ, আছে উপমা
ও কিচ্ছা-কাহিনী; আদেশ-নিষেধ পুরোপুরি অনুসরণ ও শিক্ষা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। মানুষের
জীবন বড় অনিশ্চিত, যে কোনো সময় আযাবের মুখোমুখি হয়ে পড়তে পারে। তাই অপেক্ষা না করে
আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য এই তিনটি আয়াতে সব মানুষকে উদাত্ত আহবান জানানো হয়েছে।
আল্লাহ আমাদের সবার নছিবে হেদায়াত দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment