সাধারণ সর্দি-জ্বর হলেও মানুষ করোনা সন্দেহে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অমানবিক আচরণ করছে। ফরিদপুরে একজন লোক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভ্যানে হাসপাতালে যাওয়ার পথে ভ্যানচালক করোনা সন্দেহে রাস্তার পাশে নমিয়ে রেখে চলে গেলে তার প্রতি কেউ আর খেয়াল করেনি। ফলে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার ফলে তার মৃত্যু হয়।
আরো সমস্যা হচ্ছে লাশ দাফন নিয়ে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মরদেহ রোগজীবাণু ছড়ায় না মর্মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা প্রদান করলেও মানুষ কোনো কবরস্থানে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে দাফন বা কোনো এলাকাতে লাশসহ প্রবেশেও বাধা প্রদান করছে। গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও স্পষ্ট করে বলেছেন, ভয়-ভীতি ও শংকা ছাড়া প্রত্যেককে নিজ নিজ ধর্মীয় নিয়মানুসারে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন। মরদেহ কোনো অবস্থাতেই করোনা ভাইরাস ছড়ায় না।
এমন পরিস্থিতির কারণে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে প্রকাশের ভয়ে লুকিয়ে রাখছে এবং এর ফলে করোনার বিস্তার রোধ দুরূহ হয়ে পড়বে। কখন কার ভাগ্যে কী ঘটবে কারো জানা নেই। আমরা কেউ ঝুঁকিমুক্ত নই। আমরা সব ধরনের সতর্ককতা ও সাবধানতা অবলম্বন করবো। তারপরও আমরা নিশ্চিত নই, আমাদের গৃহিত সুরক্ষা করোনা আক্রান্ত থেকে নিরাপত্তা দিবে। নিরাপত্তা দানের ক্ষমতা আল্লাহর।
আল্লাহর রসুল (সা)-এর হাদিসের কথা মনে পড়ছে, ছোঁয়াছে বা কুলক্ষণ বলে কিছু নেই। তিনি যেমন সংক্রামক ব্যাধি থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করেছেন, আবার তাদের প্রতি সদয় হওয়ার জন্যও বলেছেন। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী গ্রহণ করে একজন ব্যক্তি সহজেই সংক্রামক রোগের চিকিৎসা ও সেবা দান করতে পারেন।
আমাদের দেখা কলেরা, বসন্ত, যক্ষা - এ সব রোগে বিপুল পরিমাণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পৃথক টিবি ক্লিনিক এবং হাসপাতালে পৃথক কলেরা ওয়ার্ডে রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসও এমনই এক সংক্রামক রোগ। আমরা সতর্ক থাকবো, নিয়ম-কানুন মেনে চলবো, কিন্তু করোনা রোগীকে ঘৃণা বা তার লাশের প্রতি সামান্যতম অশ্রদ্ধা প্রকাশ করবো না। মহামারি আক্রান্ত ব্যক্তি মারা গেলে রসুল (সা) যাকে শহীদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, তাঁর প্রতি সামান্যতম অবহেলা, অনাদর ও অশ্রদ্ধা প্রকাশকে বড় ধরনের গুনাহ বলেই আমার বিশ্বাস।
করোনা আক্রান্ত লোকের প্রতি যে সব ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতসহ সেবাদানকারী সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আল্লাহপাক তাঁদেরকে সুরক্ষা দান করুন।
সকল অসুস্থ ও বিপদগ্রস্ত লোকের প্রতি সদয় হওয়ার জন্য আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। ১২.০৪.২০২০
Comments
Post a Comment