নামায, রোযা, হজ্জ,
যাকাত যেমন ফরজ, তেমনি পর্দা মানাও ফরজ। পর্দাহীনতা কবিরা গুনাহ এবং জাহান্নামে
যাওয়ার কারণ হতে পারে। পর্দাহীনতা অশ্লীলতারই নামান্তর। কোনো সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে
পড়লে সেই সমাজে আল্লাহ বালা-মুসিবত নাজিল করেন বলে রসুলুল্লাহ (সা) হুশিয়ার করেছেন।
দেশে দেশে করোনা ভাইরাস আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সতর্কবার্তা। মাত্র ৩/৪ মাসে ১১ লক্ষ
মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়েছে, ৫৯ হাজার লোক মৃত্যুবরণ করেছে এবং সমগ্র বিশ্ব আজ
স্থবির। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, পারমানবিক ক্ষমতার দম্ভ, অঢেল ধন-সম্পদের অহংকার
আল্লাহর এক সৈনিক ক্ষুদ্র জীবাণুর কাছে পরাস্ত। করোনা ভাইরাসের কারণে আল্লাহর অনেক
বান্দাহ হেদায়াতের পথে ফিরে এসেছেন। আলহামদু লিল্লাহ।
আমি আমার মা-বোনদের
উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই। সর্বোত্তম সৃষ্টি নারীর জন্য আল্লাহ জান্নাতপ্রাপ্তিকে
সহজ করে দিয়েছেন। মৌলিক ইবাদতসমূহ পালন এবং পর্দার মধ্যে চলে একজন নারী সহজেই
জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারে। পর্দা নারীর ভূষণ, এটি তার প্রকৃতিতেই আল্লাহ
দিয়ে রেখেছেন। শয়তানই মূলত নারীকে পর্দাহীনতার দিকে ঠেলে দেয়। আমি পর্দা বলতে
নেকাব পরার কথা বলছি না। প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ (সা) নারীর জন্য যতটুকু সতর হিসেবে নির্ধারণ
করেছেন অন্তত ততটুকু মেনে চললে আশা করা যায় আল্লাহর কাছে জবাবদিহি থেকে রেহাই
পাওয়া যাবে। রসুল (সা) যখন মি’রাজে
গিয়েছিলেন, সে সময়ে তাঁকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছিল। সেখানে তিনি অনেক নারীকে চুল
বেঁধে লটকিয়ে শাস্তি ভোগরত দেখেন। মাথা অনাবৃত রাখা কোনো মুসলিম নারীর পরিচায়ক নয়।
সে শয়তানের অনুসারী বৈ আর কেউ নন।
আল্লাহপাকের অশেষ
মেহেরবানী, রাস্তায় চলাচলে অনেক নারীকে পর্দায় দেখা যায়। জাহেলিয়াতের এ যুগে
পর্দানশিন মহিলাকে ডেকে আমার বলতে ইচ্ছা জাগে, ‘আম্মু/আপু, আপনি জান্নাতি’ (এটি কোনো ফতোয়া নয়, আমার উপলব্ধি)। সত্যিই তারা আল্লাহর সেরা
সৃষ্টি ও ভাগ্যবতি। সাথে সাথে তাদের অভিভাবকরাও (স্বামী/পিতা/ভাই) বড় ভাগ্যবান।
স্ত্রী বা মেয়ের কারণে তাঁরাও জান্নাতে যাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করতে পারেন। কারণ রসুল
(সা) পর্দাহীন নারীর অভিভাবককে দায়ুস বলেছেন এবং দায়ুস কখনো জান্নাতে যাবে না-এ সংবাদও
জানিয়ে দিয়েছেন। তাতে বোঝা যায়, বেপর্দা নারী কেবল নিজেকেই নয়, তার অভিভাবককেও
জাহান্নামে নিয়ে যাবে। পর্দাহীন নারী তার অভিভাবকের (স্বামী/পিতা/ভাই) জন্য একটি
গজব।
এখন সময়
তাওবা-ইস্তেগফারের। আল্লাহপাক তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।
তাঁর নিজের কথা- ‘হে
আমার বান্দারা, যারা নিজেদের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো
না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’-সূরা ঝুমার ৫৩। বিপদাপদে মানুষ তার রবের দিকেই
ঝুঁকে পড়ে, এটি মানবীয় প্রকৃতি, আর ফিরে আসার জন্যই আল্লাহ বিপদ-মুসিবত দিয়ে
থাকেন। আমাদের অনেক বোনেরা পারিপার্শিক নানা কারণে পর্দার গুরুত্বটি ততটি অনুভব
করে না। যারা ঈমানদার এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুল (সা)-এর কথা শুনলে হৃদয়ে ভয় অনুভব
করে তাদের উদ্দেশেই আমার এই পোস্ট। ফেসবুকে আমাদের অনেক বোন বেশ সক্রিয়। অনেকেই
অজ্ঞাতসারেই ফেসবুকে তাদের আইডিতে পর্দাহীন ছবি দিয়ে রেখেছেন। পর্দাহীন ছবি ও
বেপর্দায় কারো সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।
আল্লাহর কাছে বারবার
ক্ষমা প্রার্থনা বান্দার প্রতি আল্লাহকে দয়ার্দ করে। সাধারণত কোনো সমাজের মানুষ
আল্লাহর কাছে কাতরভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলে সেই সমাজে আল্লাহ বিপদ-মুসিবত দেন না।
তাঁর বাণী, ‘এটি আল্লাহর রীতি নয়, লোকেরা ক্ষমা চাইতে থাকবে
এবং তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন’-সূরা
আনফাল ৩৩। বিশ্বব্যাপী এই মহামারী থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধি-বিবেক
সবকিছু কাজে লাগানোর পাশাপাশি আমরা গুনাহ থেকে তাওবা করবো ও তাঁর কাছে বারবার
ক্ষমা প্রার্থনা করবো। তাওবা অর্থ কেবল কিছু আরবি দুআ মুখস্ত আবৃত্তি করা নয়, বরং
আমরা যা যা গুনাহ করেছি সেগুলো আর না করা। যেমন, ইতোপূর্বে যারা নামাযে গাফিলতি
করেছে তাদের নামাযে নিয়মিত হয়ে পড়া।
আল্লাহ আমাদেরকে এই
করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সকল সাবধানতা অবলম্বনের সাথে গুনাহ থেকে বিরত
থাকা ও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার তাওফিক দান করুন। ০৪.০৪.২০২০
Comments
Post a Comment