ইটের লরির সাথে চারজন শ্রমিকের সাথে একজনকে দেখলাম বয়সে একটু কম। জিজ্ঞেস করলাম, পড়ালেখা করো? জবাব দিল, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ ক্লাসে পড়ো? বললো, ক্লাস সেভেনে। ছেলেটার চেহারায় লাবণ্য আছে এবং দেখতেও সুন্দর। বললাম, লেখাপড়া ও ইটটানা কোনটা বেশি কঠিন? তার জবাব, দুটোই কঠিন। আসলে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে ঝরে পড়ার জন্য দারিদ্র্যের পাশাপাশি লেখাপড়াকে কঠিন মনে করাটাও দায়ী। বাবা-মার অভিযোগ, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করতে চায় না। স্কুল ফাঁকি দেওয়া ও প্রাইভেট টিউটরের কাছে না যেতে চাওয়া একটা সাধারণ ব্যাপার। বাবা-মারা সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে দারুণ পেরেশান। আসলে ছেলেমেয়েদের সম্মুখে আমরা ভালো কিছু উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হচ্ছি।
সকল বাবা-মা চান তার সন্তান লেখাপড়া করুক। ছেলেমেয়ে আগ্রহী হলে অর্থসংকট বাধা হয় না। সন্তানের জন্য বাবা-মা তাদের কষ্টকে কিছু মনে করে না। পিতা ভ্যান চালিয়ে এবং মা অপরের বাড়িতে কাজ করে হলেও সন্তানকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেয়। আমি অনেক ছেলেমেয়েকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি, জবাব দেয় নিজেদের গাফিলতির কারণেই লেখাপড়া হয়নি।বাবা-মাকে দোষারোপ করার মতো কোনো সন্তান পায়নি।
স্কুলের শিক্ষার্থী শুধু নয় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেও লেখাপড়ায় ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা যথেষ্ট। যারা ফাঁকি দেয় তাদের বক্তব্য লেখাপড়া করে কী হবে? লেখাপড়া না করে ভালো কিছু হওয়া একটি ব্যতিক্রম। যারা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তারা অধিকাংশ লেখাপড়া করেই করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া ছাড়াও সারাজীবন লেখাপড়া রয়েছে। আল্লাহপাকের প্রথম ওহি 'পড়ো তোমার প্রভুর নামে।' রসুলুল্লাহ সা.-এর বাণী, 'দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞানার্জন করো।' জ্ঞানার্জনকে তিনি ফরজ করেছেন। সত্যি কথা বলতে কী, মুসলিম মাত্রই শিক্ষিত। অজ্ঞতা ও মূর্খতা নিয়ে না মুসলিম হওয়া যায় আর না মুসলিম থাকা যায়। দুর্ভাগ্যই আমাদের, অজ্ঞতা ও মূর্খতা আজ সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে গ্রাস করেছে।
শেষ পর্যন্ত ছেলেটাকে বললাম, কষ্ট যতই হোক লেখাপড়া করবে। সে হ্যাঁ বললো। তার সাথিরাও বললো, ও ভালো ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজ করে। আমি তার প্রশংসা করে বললাম, কাজ করা ভালো কিন্তু লেখাপড়া না করলে তোমার অনেক ক্ষতি হবে। আমার বিশ্বাস, ছেলেটা একদিন ভালো কিছু করবে। আল্লাহ তায়ালা তার ও তার পরিবারের প্রতি রহম করুন।
Comments
Post a Comment