Skip to main content

মানুষ আল্লাহর খলিফা। মর্যাদায় সেরা

কুরআনের পাঠ 

আজকে ফজরের বেশ পূর্বে উঠা হয়। প্রতিদিন নয়। সুযোগটা কাজে লাগালাম সুরা বাকারার ৪র্থ রুকু ৩০-৩৯ আয়াত অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ পড়ার মধ্য দিয়ে। এখানে হজরত আদম আ.-কে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে তাঁর কথপোকথন, আদম আ.-এর মর্যাদা, পৃথিবীতে তাঁর আগমন ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে। অবশ্য কুরআন মজিদে আরো অনেক জায়গায় আদম আ. সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। 

ফেরেশতা আল্লাহর বিশাল সাম্রাজ্যের কর্মচারী। ফেরেশতা ও জিন জাতি পূর্ব থেকেই ছিল। মানুষ  সৃষ্টি প্রসঙ্গে ফেরশতাদের সাথে আল্লাহর কোনো পরামর্শ নয় বরং একটা নতুন সৃষ্টি সম্পর্কে তাঁর কর্মচারীদের অবহিত করা। ফেরেশতা আল্লাহ তায়ালার এক অনুগত সৃষ্টি যাদের নাফরমানি করার কোনো ক্ষমতা নেই অর্থাৎ তাদের কোনো স্বাধীন সত্তা নেই।

আল্লাহপাক মানুষকে খলিফা (প্রতিনিধি) করে পাঠিয়েছেন। খলিফা শব্দ শুনে তাদের মনে প্রশ্ন জাগে- কেন স্বাধীন এখতিয়ার সম্বলিত স্বতন্ত্র এক সৃষ্টি? তারা নিজেরাই আল্লাহর হুকুম মেনে চলছেন এবং সর্বদা তাঁরই প্রশংসা করছেন। জবাবে আল্লাহ বলেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না। আল্লাহ তায়ালা আদম আ.-কে সকল সৃষ্টির নাম শিখিয়ে দেন এবং ফেরশতাদের সম্মুখে উপস্থাপন করেন। ফেরশতাদের নিকট সকল জিনিসের নাম জানতে চাইলে তারা নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করে আল্লাহপাককে বলেন, সকল ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে আপনি মুক্ত। আপনি আমাদের যতটুকু জ্ঞান দান করেছেন তার বাইরে আমাদের কোনো জ্ঞান নেই। কিন্তু আদম আ.-কে নির্দেশ প্রদান করলে তিনি তা সবিস্তারে বলে দেন। আসলে জ্ঞানের দিক দিয়ে মানুষ ফেরেশতাসহ সকল সৃষ্টির সেরা।

 আদম আ.-কে সেজদা করার জন্য আল্লাহপাক ফেরেশতা ও ইবলিসকে (ইবলিস জিন জাতির অংশ) নির্দেশ প্রদান করলে ইবলিস ছাড়া সকলে সেজদা করেন। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অমান্য করে ইবলিস অভিশপ্ত হয়। আদম আ. ও তাঁর স্ত্রীকে জান্নাতে অবস্থানের সুযোগ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা একটি গাছকে নির্দেশ করে বলেন, তোমরা ইচ্ছামত চলো (খাও দাও স্ফুর্তি করো) কিন্তু ঐ গাছটির নিকটেও যেও না। আর যদি যাও তবে তোমরা জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

শয়তান তাঁদেরকে আল্লাহর নাফরমানি করতে প্রলোভিত করে, ফলে তাঁদের পদস্খলন ঘটে। আল্লাহ ইবলিস এবং আদম আ. ও তাঁর স্ত্রীকে জান্নাত থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। সাথে বলেন, তোমরা একে অপরের শত্রু। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে তোমাদের অবস্থান করতে হবে। আদম আ. জেনে-বুঝে নাফরমানি করেননি। শয়তানের প্ররোচনায় তিনি ভুল করেন এবং ভুল উপলব্ধি করে পেরেশান হয়ে যান। পেরেশানি দেখে আল্লাহপাক তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার ভাষা শিখিয়ে দেন। এতে আদম আ. তওবা করেন এবং আল্লাহ তাঁর তওবা কবুল করেন। এরপর আল্লাহ আবার বলেন, তোমরা জান্নাত থেকে নেমে যাও এবং তোমার কাছে হেদায়াত যাবে, যারা তার অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই। আর যারা অস্বীকার করবে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন এবং সেখানে চিরদিন থাকবে।

শিক্ষা 

১. আল্লাহ তায়ালা মানুষকে খলিফা বা প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষ শুধু আল্লাহর গোলামির মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবে না বরং  সমগ্র পৃথিবীকে আল্লাহর গোলামিতে নিয়োজিত করবে। প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য মানুষকে জ্ঞানের জগতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং আল্লাহর গুণ, ক্ষমতার অতি ক্ষুদ্র অংশ তাকে দান করেছেন। বলা হয়েছে, আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও, আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হও। আল্লাহ আল মালিক (শাসক) মানুষ আব্দুল মালিক হয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে। আল্লাহ আল হাকিম (বিচারক) মানুষ হবে আব্দুল হাকিম যার কাজ হবে সুবিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। 

২. আদম আ. ও ইবলিস দুজনেই আল্লাহর হুকুম অমান্য করেন। পার্থক্য হলো আদম আ. ভুল স্বীকার করে তওবা করেন অর্থাৎ ফিরে আসেন।  পক্ষান্তরে ইবলিস ভুল স্বীকার না করে গর্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকা প্রকাশ করে। ফলে আল্লাহ তায়ালা  আদম আ.-কে শুধু ক্ষমাই করেননি সেই সাথে নবুওতি দিয়ে সম্মানিত করেছেন। মানুষের দ্বারা ভুল হবে না এমনটি নয়। ভুল করার সাথে সাথে তওব করবে অর্থাৎ ফিরে আসবে- এটাই স্বাভাবিক মানবপ্রকৃতি। তওবা করলে পূর্বেকৃত অপরাধের জন্য সে আর শাস্তিযোগ্য থাকে না। ভুল করে ভুলের ওপরে অনড় হয়ে থাকা, তওবা না করা অর্থাৎ ফিরে না আসা শয়তানের প্রকৃতি। 

৩. এখানে নেমে যাওয়ার কথা দুবার বলায় স্পষ্ট যে আল্লাহ তায়ালা আদম আ.-কে ক্ষমা করেই পৃথিবীতে নবি হিসেবে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে আদম আ.-এর আগমন কোনো পাপের শাস্তি নয়, পৃথিবীকে আবাদ করার এক পরিকল্পনারই অংশ।

৪. আদম আ. প্রথম মানুষ ও প্রথম নবি। সমৃদ্ধ জ্ঞান দিয়ে আল্লাহ তাঁকে পাঠিয়েছেন। তারপরও সঠিক পথে চলার জন্য তিনি ফেরেশতার মাধ্যমে হেদায়াত দান করেছেন। এমনিভাবে যুগে যুগে পাঠিয়েছেন এবং সর্বশেষ হেদায়াত হলো আল কুরআন। এই হেদায়াত অনুসারে যারা চলবে তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে এবং যারা অস্বীকার করবে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর প্রদত্ত হেদায়াতের উপর অবিচল রাখুন।  

Comments