Skip to main content

মুত্তাকি হওয়ার জন্য ঈমানের সাথে আমলও শর্ত

 কুরআনের পাঠ 

সুরা বাকারার প্রথম রুকু ১-৭ আয়াত

পরপর চারদিন ফজরের পূর্বে সুরা বাকারার চারটি রুকু তেলাওয়াত, অর্থ ও ব্যাখ্যা পড়লাম এবং সেটি সংক্ষিপ্ত পরিসরে আমার পাঠকদের কাছে পেশও করলাম। আলহামদু লিল্লাহ।

কুরআন মজিদ খুললে আমরা প্রথমে পাই সুরা ফাতিহা। সেখানে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা শেষে তাঁর কাছে প্রার্থনা শেখানো হয়েছে, 'আমাদের সরল সঠিক পথ দেখাও।' আমাদের প্রার্থনার জবাবে আল্লাহ তায়ালা কুরআন মজিদ পেশ করে বলেন, হেদায়াতের জন্য এই হলো আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই। এর দুটি অর্থ হতে পারে- এক. এটি কোনো মানুষের তৈরি নয়, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর কিতাব। দ্বিতীয়. এটি নির্ভুল জীবন যাপনের বিধান, এর মধ্যে কোনো সন্দেহ সংশয় নেই। এটি আল্লাহর কিতাব- এব্যাপারে কুরআন মজিদে একাধিক জায়গায় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন, এই সুরার তৃতীয় রুকুতেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, এই কুরআনের মধ্যে কোনো ভুলত্রুটি নেই। ত্রুটি তালাশ করতে ইসলামের শত্রুদের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। কোনরকম পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংস্করণ ছাড়াই কুরআন মজিদ অবিকৃতভাবে আমাদের কাছে রয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত কোনো সংস্করণ লাগবে না। অথচ আমাদের সংবিধান মাত্র ৫০ বছরে ১৭ বার সংশোধনের পরও প্রয়োজন পূরণে সক্ষম হচ্ছে না। সাধারণত যারাই গ্রন্থ রচনা করে তারা কেউ সেটাকে নির্ভুল মনে করে না বরং বলে, কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়লে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করে নেব ইনশা- আল্লাহ। এটিই হলো কুরআন মজিদের বিশেষত্ব।

কুরআন মজিদ এক বিস্ময়। এর অলৌকিকতার মধ্যে এটাও যে একজন নিরক্ষর মানুষ এক মাস চেষ্টা করে কুরআন রিডিং পড়তে পারে অথচ তার মাতৃভাষার কোনো বই পাঠ সম্ভব হয় না। মুখস্থ করে রাখার ক্ষেত্রে কুরআন অনন্য। এই কুরআন ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো কিতাব এভাবে মুখস্থ করে রাখা সম্ভব নয়। 

কুরআন সমগ্র মানবজাতির জন্য হেদায়াত (সুরা বাকারা ১৮৫), এখানে বলা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য পথপ্রদর্শন। যদিও সমগ্র মানবজাতির জন্য তারপরও হেদায়াত লাভের সৌভাগ্য কেবল তারাই লাভ করতে পারে যারা মুত্তাকি। তাই তেলাওয়াতের মধ্যে কেবল সীমাবদ্ধ না রেখে কুরআনকে জানতে হবে ও বুঝতে হবে। রসুল সা.-এর কাজই ছিল মানুষের কাছে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনানো ও মানুষকে পরিশুদ্ধ করা। আল্লাহপাক যেটা আদেশ করেছেন সেটা করা এবং যেটা নিষেধ করেছেন সেটা থেকে বিরত থাকার নামই তাজকিয়া বা পরিশুদ্ধি। ফলে মাতৃভাষায় কুরআনকে অবশ্যই জানতে হবে।

মুত্তাকিদের গুণবৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আল্লাহপাক বলেছেন, তারা গায়েবে বিশ্বাস করে (আল্লাহ, ফেরেশতা, বেহেশত-দোযখ ও রসুল সা. যা যা উল্লেখ করেছেন), নামাজ কায়েম করে ও আল্লাহ  যা রিজিক দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করে। এরপর এই কিতাব অর্থাৎ কুরআন ও পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের উপর বিশ্বাস করে এবং আখেরাতের উপর দৃঢ় ঈমান করে। বিশ্বাসের পাশাপাশি ব্যবহারিক জীবনে যারা নামাজ আদায় করে ও আল্লাহর পথে খরচ করে তারাই আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত হেদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারাই কল্যাণ লাভের অধিকারী। 

যেসব লোক এসব মেনে নিতে অস্বীকার করে তাদের সতর্ক করা না করা সমান, তারা মেনে নেবে না। তাদের হৃদয় ও কানে মোহর মারা ও চোখে আবরণ পড়েছে। আসলে আল্লাহ মোহর মেরেছেন বিষয়টি এমন নয়, তাদের হটকারিতা ও জিদ সীমা অতিক্রম করেছে। তাই হেদায়াত লাভের যোগ্যতা তারা হারিয়ে ফেলেছে। তারা এখন কঠিন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।

Comments