কুরআনের পাঠ

 সুরা বাকারা পঞ্চম রুকু ৪০-৪৬ আয়াত

চতুর্থ রুকু পর্যন্ত সকল মানুষকে সম্বোধন করে কথা বলার পর পঞ্চম থেকে চৌদ্দ রুকু বনি ইসরাঈল সম্পর্কে ধারাবাহিক আলোচনা করা হয়েছে। ইসরাইল ইয়াকুব আ.-এর উপাধি। এর অর্থ আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা)। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে এই উপাধি লাভ করেছেন। ইয়াকুব আ. ইসহাক আ.-এর পুত্র এবং ইব্রাহিম আ.-এর নাতি। ইয়াকুব আ.-এর বংশধরদের বলা হয় বনি ইসরাইল। এই বংশে অনেক নবি-রসুলের আগমন হয়েছে। মুসা আ. এই বংশেরই নবি ও এখানে তাঁর অনুসারী ইহুদি জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য  করেই কথা বলা হয়েছে।

বনি ইসরাইলকে আল্লাহপাক প্রভূত নেয়ামত দান করেছেন। স্বৈরশাসক ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি, নিরাপদে সাগরপাড়ি, মান্না ও সালওয়া দিয়ে খাদ্যের ব্যবস্থা সর্বোপরি তাদের বংশে নবুয়ত দান। কিন্তু তারা বারবার আল্লাহর নাফরমানি করে আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। আল্লাহর নেয়ামত ও তাঁকে দেওয়া ওয়াদা স্মরণ করে দিয়ে আল্লাহকে ভয় করে চলার জন্য আহবান জানানো হয়েছে। তাদেরকে মুহাম্মদ সা.-এর ওপর অবতীর্ণ কিতাবের প্রতি ঈমান আনার জন্য বলা হয়েছে। এটা অভিনব কোনো কিতাব নয় বরং তাদের কিতাবের সত্যতা সমর্থনকারী। আসলে ওরা দুনিয়া পূজারি। নবি ও তাঁর প্রতি অবতীর্ণ কিতাবকে প্রকাশ্যে অস্বীকার করতে পারতো না। কুরআন সম্পর্কে তাদের জানা ছিল এবং তাদের মধ্যে অনেক ধর্মীয় আলেম ও পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ ছিল। মদিনার লোকদের ওপর তাদের বেশ প্রভাব প্রতিপত্তি এবং ধর্মীয় বিষয়ে তাদের কাছে গেলে তারা নানা অজুহাতে মানুষকে বিভ্রান্ত করতো ও দুনিয়ার স্বার্থে আল্লাহর আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা দিত। এখানে আল্লাহ বলেছেন, 'সামান্য দামে আমার আয়াত বিক্রি করো না।' বৈষয়িক স্বার্থ তা যতো বড়োই হোক আল্লাহর আয়াতকে গোপন বা ভুল ব্যাখ্যাদান তা অতি নগন্য ও তুচ্ছ। 

এখানে আল্লাহ তায়ালা ইহুদিদের দাওয়াত দিয়ে বলেছেন, সবার আগে তোমরা অস্বীকার করো না। নবি ও কিতাব সম্পর্কে জ্ঞান তোমাদেরই আছে। তোমাদের দীনের সাথে রয়েছে অনেক মিল। নামাজ ও জাকাত সব দীনেরই অংশ ছিল এবং ইসলামেও রয়েছে। কাজেই তোমরা নামাজ কায়েম করো ও জাকাত আদায় করো। এখানে রুকুকারীদের সাথে রুকু করার মধ্য দিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের কথা বলা হয়েছে। ইহুদিদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে তারা কিতাব পাঠ করে ও মানুষকে নসিহত করে কিন্তু নিজেরা সৎ পথ অবলম্বন করে না। এসব কথা আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। 

এখানে সবর ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহপাকের সাহায্য কামনার কথা বলো হয়েছে এবং তিনি নামাজের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলেছেন, আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের ভয় যার মধ্যে রয়েছে তার জন্য নামাজ মোটেই কঠিন নয়। আর আল্লাহর কাছে সবাইকে ফিরে যেতেই হবে। ৪৬ নং আয়াতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে পরকাল অবিশ্বাসী কাফের ছাড়া সবার জন্য নামাজ অত্যন্ত সহজ ইবাদত। ইহুদি জাতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরে মূলত মুসলিম জাতিকেই সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার তৌফিক দান করুন।