তোমরা দৌড়াও তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিন সমান এবং তা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় খরচ করে, যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়; আল্লাহ মুহসিন বান্দাদের ভালোবাসেন। সুরা আলে ইমরান ১৩৩-১৩৪।
আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের আহবান জানিয়েছেন নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও জান্নাত প্রাপ্তির জন্য প্রতিযোগিতা করতে। মানুষ কতো কিছুর জন্যই না প্রতিযোগিতা করে-অর্থ-বৃত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব। দুনিয়ার জীবনটা বড়ো সংকীর্ণ, মৃত্যু খবর প্রতিনিয়ত কানে আসে। মৃত্যুর সাথে সাথে ধন-সম্পদ, কর্তৃত্ব সবকিছু রেখে একেবারে শূন্য হাতে বিদায় নেয়ার দৃশ্য আমাদের সচেতন করে না। আমরা শুধু চাই এবং এই চাওয়ার কোনো শেষ নেই, কবরের মুখ পর্যন্ত পৌঁছেও চাই; রসুলুল্লাহ সা.-এর ঘোষণা, মাটি ছাড়া কোনো কিছু এই মানুষকে পরিতৃপ্ত করতে পারে না।
জান্নাতের বিশালতা বলতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সেই জান্নাতের প্রশস্ততা আসমান ও জমিন সমান। আর আল্লাহর এই বিশাল জান্নাত কেবল মুত্তাকিদের জন্য। আর মুত্তাকি বান্দাদের অনেক গুণের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এখানে বলা হয়েছে, তারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতা উভয় অবস্থায় আল্লাহর পথে খরচ করে। কৃপণ, অর্থলিপ্সু ও সংকীর্ণমনাদের জন্য জান্নাত নয়।
দ্বিতীয় গুণের কথা বলা হয়েছে, ক্রোধ সংবরণ করে। ক্রোধ বড়ো সর্বনাশা। ক্রোধের কারণেই মানুষ মানুষের প্রতি জুলুম করে, পশুর মতো হিংস্র হয়ে উঠে, সম্পর্ক নষ্ট করে। এমনকি নিজের প্রতি জুলুমের সকল সীমা লঙ্ঘন করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তাই ক্রোধ মানুষের চরম শত্রু। ক্রোধের উদ্রেগ হলে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসা, বসা থেকে শোয়া এবং অজু করার কথা হাদিসে বলা হয়েছে। তিন দিনের বেশি রাগ করে কারো সাথে কথা বন্ধ করে থাকা বৈধ নয়। হাদিসে বিরোধ মিটিয়ে দেয়াতে প্রভূত সওয়াবের কথা বলা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র, ভাই-ভাই পাড়া প্রতিবেশী সকল ক্ষেত্রে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে কেউ যদি মিথ্যা বলে তখন সেটা আর মিথ্যা থাকে না হয়ে যায় সওয়াবের। দুই জনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে (হতে পারে পিতা-পুত্র, পিতা-কন্যা, স্বামী-স্ত্রী বা ভাই-বোন) তাদের মধ্যে যে এগিয়ে এসে মীমাংসা করে নেবে তার সওয়াব পরিমাপযোগ্য নয়। আল্লাহপাকই তাকে দান করবেন।
তৃতীয় গুণের কথা বলা হয়েছে যে মানুষকে ক্ষমা করে দেয়। এই আয়াতে বলা হয়েছে, রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দৌড়াও। কোনো মানুষ তার আমল দ্বারা জান্নাতে যাবে না। নেক আমলের বিনিময়ে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করবেন। এখানে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের একে অপরকে ক্ষমা করার কথা বলেছেন এবং ক্ষমার বিনিময়ে জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে, যে তার ভাইকে ক্ষমা করবে আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে ক্ষমা করবেন। যারা ক্ষমা করে তারা দুনিয়ার জীবনেও সম্মান লাভ করে। ক্ষমা, উদারতা, মানবিক মূল্যবোধের কারণে নেলসন ম্যান্ডেলা নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন আর আমরা হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতিশোধপরায়ণতার কারণে বিশ্বব্যাপী ঘৃণা ও ধিক্কার কুড়াচ্ছি।
মুত্তাকিদের আরো গুণ রয়েছে। এখানে তিনটি গুণ উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তিনি মুহসিনদের ভালোবাসেন। মুহসিন অফিসের সেই কর্মচারীকে বলে যে মালিকের ভয়ে নয় সানন্দে দায়িত্ব পালন করে অর্থাৎ সেই কর্মচারীর প্রতি নজরদারির প্রয়োজন নেই, স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করে। মুত্তাকির পরবর্তী পর্যায় হলো মুহসিন।
আল্লাহপাক তাঁর মুত্তাকি বান্দাদের জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। মুহসিনদের মর্যাদা হবে আরো উচ্চতর। সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি হলো তারা যারা আল্লাহর পথে ব্যয়কারী, ক্রোধ সংবরণকারী ও ক্ষমাকারী। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর মুহসিন বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন।
Comments
Post a Comment