কুরআনের পাঠ
সুরা বাকারা ষষ্ঠ রুকু ৪৭-৫৯ আয়াত
পঞ্চম থেকে চৌদ্দ রুকু বনি ইসরাইল জাতি সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। ইহুদিদের বজ্জাতি নতুন না। ওরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এক জাতি। অসংখ্য নবি-রসুলকে তারা হত্যা করেছে।
ষষ্ঠ রুকুতে আমরা তাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত নেয়ামত লক্ষ করবো। ৪৭ নং আয়াতে সমস্ত জাতির ওপর বনি ইসরাইলকে শ্রেষ্ঠত্ব দানের উল্লেখ করার পর আখেরাতকে ভয় করার জন্য আল্লাহ বলেন, সেদিন কেউ কারো কোনো উপকারে আসবে না, কারো সুপারিশ গৃহীত হবে না, বিনিময় নিয়ে কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না এবং কোথাও থেকে কোনো সাহায্য লাভ করতে পারবে না। আল্লাহপাক তাদের ভ্রান্ত ধর্মবিশ্বাসের মূলোৎপাটন করে স্পষ্ট বলেছেন, আল্লাহর সাথে কারো কোনো বিশেষ সখ্যতা নেই। আল্লাহর কাছে মূল্য বহন করে ঈমান ও নেক আমল। বর্তমানে মুসলমানদের বিশ্বাসও ইহুদিদের মতোই। তাদের ধারণা, শেষ নবির উম্মত, তাঁর সুপারিশে সবাই জান্নাতে চলে যাবে। আর জাহান্নামে গেলেও সামান্য সময়ের জন্য। আল্লাহ বলেন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তাহলে মৃত্যু কামনা করো দেখি। ৪৭-৪৮
পরবর্তী ৪৯-৫০ আয়াতে আল্লাহপাক স্মরণ করে দিয়েছেন, ফেরাউন ও তার দলবলের জুলুমের কথা। তারা বনি ইসরাইলের পুত্রদের হত্যা এবং কন্যাদের জীবিত রাখতো। এটা ছিল তাদের জন্য বড়ো ধরনের পরীক্ষা। একপর্যায়ে মিশরে টিকতে না পেরে তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় সামনে সাগর বাধে। আল্লাহপাক সাগরের মাঝ দিয়ে পথ করে দেন এবং তাদের সম্মুখে ফেরাউন ও তার দলবলকে ডুবিয়ে মারেন।
মুসা আ.-কে আল্লাহ তায়ালা তুর পর্বতে চল্লিশ দিনের জন্য ডেকে নিয়েছিলেন। তাঁর অবর্তমানে বনি ইসরাইলরা বাছুর পূজা শুরু করে। মুসা আ. -কে আল্লাহ তায়ালা নবুয়ত দান করেন যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে। ফিরে এসে মুসা আ. তার জাতিকে তওবা করতে বলেন এবং যারা বাছুর পূজার সাথে সংশ্লিষ্ট তাদেরকে হত্যা করার জন্য বলেন। আল্লাহপাক তাদের তওবা কবুল করেন। ৫১-৫৪ আয়াত।
ইহুদিদের আল্লাহপাক তাদের ভয়াবহ অপরাধ প্রায়ই উপেক্ষা করে ক্ষমা করেছেন। মুসা আ.- এর কাছে তারা আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখার দাবি করে বসে। সেসময়ে আল্লাহ তায়ালা এক ভয়াবহ বজ্রপাতের মাধ্যমে তাদের মৃত্যু ঘটান। তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে আবার জীবন দান করেন যাতে তারা কৃতজ্ঞ হয়। ৫৫-৫৬ আয়াত
মিশর ত্যাগ করে সিনাই উপত্যকায় তারা ছিল সহায়সম্বলহীন উদ্বাস্তু। আল্লাহপাক মেঘমালা দিয়ে ছায়া এবং খাওয়ার জন্য মান্না ও সালওয়া দান করেন। উদ্বাস্তু জীবনে সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর তারা এই প্রাকৃতিক খাবার খায়। মান্না দানাদার একধরনের ক্ষুদ্রাকৃতির খাদ্য এবং সালওয়া ক্ষুদ্র কবুতরের মতো একধরনের পাখি। ৫৭ আয়াত
বজ্জাত ইহুদি জাতি বড়ো অকৃতজ্ঞ। আল্লাহর এই নেয়ামত তাদের পছন্দ হয় না। ফলে আল্লাহ তাদের নির্দেশ প্রদান করেন ভিন্ন এক জনপদে যাওয়ার এবং সেখানকার উৎপন্ন দ্রব্যাদি যেমন ইচ্ছা খাওয়ার জন্য। সেখানে তাদেরকে বিনয়ের সাথে হিত্তাতুন হিত্তাতুন বলতে বলতে প্রবেশ করতে বলা হয়। হিত্তাতুন অর্থ এক. নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইতে চাইতে প্রবেশ করো এবং দ্বিতীয়ত, গণহত্যা ও লুটতরাজ করতে করতে প্রবেশ না করে জনপদের অধিবাসীদের ক্ষমা ও ভুলত্রুটি উপেক্ষা করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শহরে প্রবেশ করতে বলা হয়। এমন আচরণ করলে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহ দানের কথা বলা হয়েছিল।শেষ পর্যন্ত তারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে এবং শেষে আল্লাহপাক আকাশ থেকে তাদের প্রতি আজাব নাজিল করেন। ৫৮-৫৯ নং আয়াত।
আল্লাহপক প্রদত্ত নেয়ামত স্মরণ করে দিয়ে তৎকালের ইহুদি জনগোষ্ঠীকে রসুলুল্লাহ সা.-এর দাওয়াত মেনে নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে এবং সেই সাথে আমাদেরও সতর্ক করা হয়েছে।
শিক্ষা : কুরআন মজিদে ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য। এক. ইহুদি জনগোষ্ঠীকে অতীতের আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ করে তাঁর নাফরমানি না করে মুহাম্মদ সা.-এর দাওয়াত মেনে নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
দুই. মুহাম্মদ সা.-এর নবুয়তের পর মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে মুসলিম উম্মাহকে। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ তাদের মৌলিক কাজ। কুরআনের আয়াত- 'তোমরা শ্রেষ্ঠতম জাতি, তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণ সাধনের জন্য। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দিবে ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে''- সুরা আলে ইমরান ১১০। দুর্ভাগ্য, মুসলিম উম্মাহ আর সেই অবস্থানে নেই। এক কদর্য চরিত্রের অধিকারী এই উম্মাহ যা থেকে শুধু দুর্গন্ধই বের হয়। এই চরিত্র দ্বারা বিশ্ব শাসন সম্ভব নয়।
ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রক্ষমতা অর্থাৎ দীন প্রতিষ্ঠা। কিন্তু জাতি সেই চেতনা থেকে অনেক দূরে। ইহুদি জাতি নবি-রসুলদের হত্যা করেছে আর এই জাতি নবির ওয়ারিশ উলামায়ে কেরাম এবং ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে জেল-জুলুম ও নির্যাতনে মেতে উঠেছে। ফলে উম্মাহর উপর চরম জিল্লতি নেমে এসেছে। আল্লাহপাক উম্মাহর মাঝে সঠিক উপলব্ধি দান করুন। ১১.১০.২০২৩
Comments
Post a Comment