Skip to main content

আমাদের লেখাপড়া ও জীবন যাপন হোক কুরআনকেন্দ্রিক-

আজ পড়লাম সুরা বাকারার তৃতীয় রুকু (২১-২৯ আয়াত)। সারসংক্ষেপ তুলে ধরছি।

আল্লাহ তায়ালা সমগ্র মানবজাতিকে সম্বোধন করে বলেছেন, তোমরা সেই রবের ইবাদত করো যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন। যিনি জমিনকে শয্যা ও আকাশকে ছাদ হিসাবে এবং আকাশ থেকে পানিবর্ষণ করে জমিনকে শস্যশ্যামল করেছেন। একথা জানার পর আল্লাহর প্রতিপক্ষ আর কাউকে দাঁড় করিও না।

এখানে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করেছেন তাঁকে রব মেনে ইবাদত করলে মানুষ আখেরাতে নিষ্কৃতি পাবে। আল্লাহকে স্রষ্টা মানার ক্ষেত্রে কারো মধ্যে  আপত্তি নেই। নমরুদ-ফেরাউনরাও আল্লাহকে স্রষ্টা মেনেছে। তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আসমান-জমিন কে সৃষ্টি করেছে? তারা বলেছে, আল্লাহ। রব মানার ক্ষেত্রে তাদের আপত্তি ছিল। রব মানা অর্থ আল্লাহপাককে হুকুমকর্তা হিসাবে মানা। ইবাদত করো, অর্থ আল্লাহকে হুকুমকর্তা হিসেবে মানো, তাঁর আনুগত্য করো এবং তাঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করো অর্থাৎ পূজা-অর্চনা করো একমাত্র আল্লাহর। এসব ক্ষেত্রে কাউকে আল্লাহর প্রতিপক্ষ করো না। ২১ ও ২২ আয়াত।

আল্লাহপাক মানুষের হেদায়াতের জন্য সর্বশেষ কিতাব হিসেবে পাঠিয়েছেন আল কুরআনকে। কুরআন যে আল্লাহর কিতাব এব্যাপারে মক্কায় ইতোপূর্বে চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছিল এবং মদিনাতে পুনরায় দেয়া হলো। এই চ্যালেঞ্জ জগতবাসীর জন্য কিয়ামত পর্যন্ত। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে কেউ সাহস পায়নি। দেড় হাজার বছর পূর্বের কুরআন অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। কোনো পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংস্করণ ছাড়াই মানুষ পাঠ করছে, গবেষণা করছে, হেদায়াত গ্রহণ করছে এবং কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি তালাশ করে কেউ বের করতে সক্ষম হচ্ছে না। কুরআন এমন একটি কিতাব যা লেখাপড়া না-জানা একজন গ্রামীণ ছেলে বা মেয়ে মাত্র একমাসে রিডিং পড়তে সক্ষম হয়। এতবড় এক কিতাব সামান্য সময়ে একজন মানুষ মুখস্থ করে এবং তার অন্তরে ধারণ করে রাখে। এসবই বিস্ময়। আল্লাহর কালাম হওয়ায় সম্ভব। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা এমন কিতাব রচনা করতে পারবে না। কাজেই এই কুরআন মেনে নাও। অন্যথায় ভয় করো সেই আগুনকে যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা তৈরি করে রাখা হয়েছে কাফেরদের জন্য। এখানে পাথরের দুটি অর্থ হতে পারে- এক জাহান্নামের জ্বালানি (লাকড়ি) হবে পাথর বা মানুষ পাথর দিয়ে যেসব মূর্তি তৈরি করে সেগুলো তাদের সাথে জ্বালানি হবে। ২৩-২৪

যারা এই কুরআনের উপর ঈমান এনে নিজেদের কর্ম সংশোধন করে নেবে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। সেখানে নানাবিধ ফলফলাদি ও খাদ্য উপকরণ, পবিত্র জোড়া (স্বামী-স্ত্রী) এবং সেখানে থাকবে চিরকাল। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর নর ও নারীর প্রতি আকর্ষণ তীব্র হয়ে উঠে। ফলে মানুষ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। যে স্বপ্ন দেখে দুজন নর ও নারী একত্রিত হয় তা অনেক সময় অধরা রয়ে যায়। না, আখেরাতে এমনটি হবে না। তারা হবে পাক-পবিত্র। সেখানে থাকবে না পরকীয়া, সন্দেহ-সংশয়, ঘ্যানর ঘ্যানর ও ঝগড়া-ঝাটি। বর্তমান স্বামী-স্ত্রী যদি উভয়ই সৎ হন ও একে অপরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে তাহলে বর্তমান সম্পর্ক বহাল রাখা হবে। অন্যথায় বর্তমান সম্পর্ক ছিন্ন করে পুণ্যবান পুরুষের সাথে পুণ্যবতী নারীকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করা হবে। ২৫ আয়াত

আল্লাহ তায়ালা এই কুরআন মজিদে নানা উপমা দিয়েছেন। এগুলো দেখে কেউ বিভ্রান্ত হয় আবার ঈমানদারদের মতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এসব উপমা। একই উদাহরণে কেউ সরল সোজা পথের দিশা পান আবার কেহ গোমরাহ হয়। যারা গোমরাহ হয় তারাই ফাসেক। আল্লাহ তায়ালা সকল রুহ সৃষ্টি করে তাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে তিনি তাদের রব। যারা এটা অস্বীকার করে ও পরস্পর সম্পর্ক কেটে ফেলে (স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা ও সন্তান, ভাই-বোন  ও মানবিক সম্পর্ক) এবং জমিনে ফাসাদ করে তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

আল্লাহর প্রশ্ন, কেমন করে মানুষ কুফরি করে অথচ আল্লাহ তায়ালা প্রাণহীন থেকে জীবন দিয়েছেন, আবার প্রাণ হরণ করবেন ও জীবন দিবেন এবং তাঁরই কাছে ফিরে যেতে হবে। এই মানুষের জন্য সবকিছু সৃষ্টি করলেন, সাত আসমান বিন্যস্ত করলেন এবং তিনিই সবকিছুর জ্ঞান রাখেন। ২৬-২৯

আল্লাহপাক আমাদেরকে কুরআনের আলোকে পথচলা সহজ করে দিন।

Comments