Skip to main content

নামাজই যেন সব

 ইসলামের বুনিয়াদ কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত। কালেমা তাইয়্যেবার ঘোষণা প্রদানের মধ্য দিয়ে একজন ব্যক্তি ইসলামের সীমার মধ্যে প্রবেশ করে। সে যে এই ঘোষণায় সত্যবাদী তার প্রমাণ দিতে হয় মৌলিক চারটি ইবাদত পালনের মাধ্যমে। তার মধ্যে সর্বপ্রথম যে কাজটি সামনে আসে সেটা হলো নামাজ। মনে করুন দুপুর ১২ টায় এক লোক ইমান আনলো এবং ইমান আনার কিছুক্ষণ পরেই জোহরের আজান হলো- হাই আলাসসালা, হাই আলাল ফালা (তোমরা নামাজের দিকে এসো, কল্যাণের দিকে এসো।) এই আহবানে সাড়া দেয়া ব্যক্তিই মূলত মুসলিম।

সকল নবি-রসুলের উপর নামাজ ফরজ ছিল। রসুলুল্লাহ সা. নবুয়ত লাভের পর থেকেই নামাজ পড়েছেন যদিও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয় মিরাজের রাতে। কাবায় নামাজ পড়ার কারণে তাঁর ঘাড়ে উটের নাড়িভুড়ি চাপিয়ে দেওয়ার কথা আমাদের জানা আছে। কুরআনে নানাভাবে নামাজের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। সুরা আল মুদ্দাসসিরে বলা হয়েছে নামাজ না পড়া মানে জাহান্নামে যাওয়া। সুরা বাকারায় বলা হয়েছে পরকাল অবিশ্বাসীদের কাছেই কেবল নামাজ কঠিন কাজ। সুরা মুমিনুনে সফলকাম ব্যক্তির প্রথম গুণ বলা হয়েছে খুশুখুজুর সাথে নামাজ পড়ে। সকল অবস্থাতেই নামাজ আদায় করতে হয়। যুদ্ধের ময়দানেও নামাজ আদায় করতে হয় (ভয়কালীন নামাজ), নামাজের জন্য অজু শর্ত। পানি পাওয়া না গেলে তায়াম্মুম করার বিধান কুরআনে দেয়া হয়েছে। সফরে নামাজ সংক্ষেপ করার সুযোগ রয়েছে। দাঁড়িয়ে না পারলে বসে, বসে না পারলে শুয়ে অর্থাৎ সকল অবস্থায় নামাজ ফরজ। হাদিসে ও ফিকাহার কিতাবে নামাজ না পড়াকে কুফরি বলা হয়েছে এবং শাস্তি হিসেবে ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর মত অন্যান্যদের তুলনায় একটু নরম। তাঁর মতে নামাজ না পড়ার শাস্তি জেলখানায় আবদ্ধ করে রাখা যতক্ষণ না মৃত্যু হয় অথবা তওবা করে। তওবা করলে পেছনের না পড়া নামাজের ক্ষমা পাওয়া যাবে ইনশা-আল্লাহ। 

নামাজের বড়ো বিশেষত্ব হলো মনিব ও বান্দার মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি করে। নামাজ বারবার আল্লাহর বন্দেগির কথা স্মরণ করে দেয় বিধায় নামাজকে বলা হয় জিকির (স্মরণ)। বান্দার বিপদ-মুসিবত থেকে পরিত্রাণ ও সকল চাওয়ার উপযুক্ত ক্ষেত্র হলো নামাজ। আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। আপনার যতো অশান্তি (হতে পারে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়) তা আল্লাহর কাছে পেশ করে ঝামেলামুক্ত হয়ে যান। সেজদায় বান্দা আল্লাহর খুব নিকটবর্তী হয়ে পড়ে। তখন আপনার সবকিছু আল্লাহর কাছে পেশ করে অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করুন। আপনার সমস্যার সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা ও ইচ্ছা দুটোই আল্লাহর রয়েছে। বান্দাকে সাহায্য করার জন্য আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাঁর নিজের কথা- যে ডাকে আমি তার ডাক শুনি ও জবাব দেই। সবচেয়ে বড়ো কথা আল্লাহকে ডাকলে তিনি আপনার ভেতরে জমে রাখা পেরেশানি দূর করে দেন। আল্লাহর ভাণ্ডার অফুরন্ত। আর তিনি কৃপণ নন।

পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে নামাজ অনন্য। শিশুর বয়স ৭/৮ বছর হলে নামাজে অভ্যস্ত করা ও নামাজ শিক্ষাদান এবং সাথে করে মসজিদে নেয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। দশ বছর হলে শাসন করা ও প্রয়োজনে মৃদু শাস্তি দেওয়ার কথা  বলা হয়েছে। আমরা সন্তানের পড়াশোনা ও স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারে যতখানি পেরশানি অনুভব করি সেই তুলনায় সন্তানের নামাজ না পড়াতে কোনো পেরেশানি আমাদের মাঝে নেই। অথচ নামাজের মধ্য দিয়ে সহজেই সন্তানের মাঝে শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ও সামজিকতা সৃষ্টি হতে পারে। শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করবে, বন্ধুদের সাথে ঘুরবে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু নামাজি ছেলে আজান শুনেই মসজিদে হাজির হয়ে যায়। সেই ছেলে অবশ্যই পিতামাতার অনুগত, বিনয়ী ও ভদ্র হয়। বাবা-মা টেনশনমুক্ত থাকে।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায়ের ফলে সমাজের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির প্রসার ঘটে। সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ কোন্দল ও ঝগড়াঝাটি লোপ পায়। ইমামের আলোচনা ও জুমার খুতবা মানুষের জ্ঞানের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়। আর রাষ্ট্রের মৌলিক কাজ হলো নামাজ প্রতিষ্ঠা ও জাকাত আদায় এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের প্রতিরোধ। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক নামাজি হলে সেই রাষ্ট্র অপরাধমুক্ত হয়ে পড়বে। আল্লাহ তো নিজেই গ্যারান্টি দিয়েছেন, নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। 

গ্রামের বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করে আমার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। গ্রামে নতুন নতুন মসজিদ গড়ে উঠেছে এবং মসজিদগুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন। মসজিদের প্রাণ ও সৌন্দর্য মুসল্লি। সেদিক দিয়ে উৎসাহব্যঞ্জক কিছু লক্ষ করিনি। মসজিদগুলোয় জুমার নামাজে কিছু বলার সুযোগ হয়। আমি মানুষের কাছে উপর্যুপরি নামাজ নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি বোঝাতে চেয়েছি, গ্রামের সাধারণ মানুষের জন্য হালাল রুজির পাশাপাশি নামাজ ঠিকমত আদায় করলে জান্নাতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না ইনশা-আল্লাহ।

আমি শিরোনাম করেছি, 'নামাজই যেন সব'। হ্যাঁ, নামাজে অভ্যস্ত ব্যক্তির প্রতি ইসলামের অন্যান্য বিধিবিধান সহজেই প্রয়োগ করা সম্ভব। আল্লাহ তায়ালা বারবার নামাজের কথা উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর রসুল সা. মুমূর্ষু অবস্থায় যে কটি কথা বলেছেন, তার মধ্যে একটি নামাজ। আসুন, আমরা নামাজে যত্নশীল হই ও বান্দার জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাতের প্রত্যাশা করি।

Comments