আজ ধানমন্ডি মসজিদ উত তাকওয়ায় ফজরের নামাজ আদায় করার সময় লক্ষ করলাম আমার দু'পাশে দু'জন পুলিশ সদস্য। আমার বেশ ভালো লাগলো এবং সামনে আরো দু'জন পুলিশ ভাইকে দেখলাম। আমি শিরোনাম করেছি জান্নাতি বলে। না না আমার কথা নয়। কথাটি প্রিয়তম নবি ও দয়ার সাগর মুহাম্মদ সা. বলেছেন, যাকে প্রেরণ করা হয়েছে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে। নামাজ শেষে ডান পাশের ভাইটি চলে গেলেন এবং বাম পাশের ভাইটি কিছু দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন। আমি তাঁর হাতটি নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বললাম, একটি হাদিস শুনিয়ে দেই। মাথা নেড়ে বললেন, ঠিক আছে। হাদিসটি হলো- রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, দুটি চোখকে আল্লাহপাক জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবেন না। এক. সেই চোখ যে চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ঝরে, দুই. সেই চোখ যে চোখ জনগণের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে বিনিদ্র রজনী যাপন করে। মূলত দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও আইন- শৃঙ্খলায় নিয়োজিত সংস্থার সদস্যদেরকে বোঝানো হয়েছে।
সরকারি কাজে যারা নিয়োজিত ইসলাম তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছে। হাশরের ময়দানের সেই কঠিন মুহূর্তে যখন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেই ছায়ায় আশ্রয় লাভকারী সাত শ্রেণির মানুষের মধ্যে থাকবে ন্যায়পরায়ণ শাসক। সেই শাসকের প্রতিনিধি হিসেবে যারা জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে তারাও আরশের ছায়ায় আশ্রয় লাভ করবে। জনগণের সেবার মধ্য দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জান্নাতে যাওয়ার মহা সুযোগ আল্লাহপাক দান করেছেন।
এখন প্রশ্ন, শাসক যদি জালেম হয় তাহলে কী হবে? যার যতো সম্মান ও মর্যাদা তার দায়িত্ব ও কর্তব্যও তেমন কঠিন। চোর-ডাকাত ও খুনিদের অপরাধের যে শাস্তি তার সহস্র গুণ বেশি শাস্তি হবে যাদেরকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যদি তারা গুম-খুন ও জুলুম করে। জালেম শাসক ও তার অনুসারীদের হাশর হবে নমরুদ-ফেরাউন ও আবু জেহেল-আবু লাহাবদের সাথে।
কুরআন-হাদিস অধ্যয়নের ফলে আমার উপলব্ধি, জালেমের জন্য জান্নাতে এক ইঞ্চি জায়গাও বরাদ্দ থাকবে না। রসুলুল্লাহ সা. জালেমকে হতদরিদ্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। জালেমের নামাজ-রোজা-হজ- জাকাত ও দানখয়রাত যদি কিছু থেকেও থাকে তা মজলুমকে বদলা হিসাবে দেয়ার পরেও পরিশোধ হবে না। তখন মজলুমের গুনাহ জালেমের ঘাড়ে চাপিয়ে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
বিচারের দিনে সদাচরণ যেমন মুমিনের পাল্লাকে ভারী করবে তেমনই জুলুম জালেমের বদির পাল্লাকে ভারী করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনাসামনি গালাগাল করে ও পেছনে দোষ প্রচার করে'- সুরা হুমাজা। এদের পরিণতি হুতামা। আল্লাহপাক চরম ক্রোধ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, আল্লাহর আগুন, প্রচণ্ডভাবে উত্তপ্ত-উৎক্ষিপ্ত। আমার জানামতে জাহান্নামের আগুনকে আল্লাহর আগুন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এই এক জায়গাতে এবং সেই হতভাগা তারা যারা আল্লাহর বান্দাদের সাথে অসদাচরণ করে। এতে মূলত আল্লাহর চরম ক্রোধই প্রকাশ পেয়েছে।
ঈমানদারদের সাথে দুর্ব্যবহার আরো ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। আল্লাহর ঘোষণা, 'যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয় অতঃপর তওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি'- সুরা বুরুজ। আমাদের মাঝে আর নবি-রসুল আসবে না। কিন্তু নবির ওয়ারিশ হিসেবে রয়েছে উলামায়ে কেরাম। তাদের সাথে সদাচরণ মূলত নবি-রসুলদের সাথেই সদাচরণ; এরাই আল্লাহ ও তাঁর দীনের প্রেমিক। অতীতের সকল স্বৈরশাসক (নমরুদ-ফেরাউন, আবু জেহেল-আবু লাহাবরা) নবি-রসুলদের কষ্ট দিয়েছেন। আমরা যেন নবি-রসুলদের উত্তরাধিকার উলামায়ে কেরামের সাথে দুর্ব্যবহার করে নমরুদ-ফেরাউনের উত্তরাধিকার না হয়ে পড়ি।
আমরা যতো অপরাধই করি কেন আল্লাহ আমাদেরকে হতাশ না হওয়ার জন্য বলেছেন। এই আয়াতের মধ্যেও বাঁচার (ঈমানদার নর-নারীকে যারা কষ্ট দেয় অতঃপর তওবা করে না তাদের জন্য) একটা সম্ভাবনা রয়েছে। 'অতঃপর তওবা না করে'- তওবা করলে কী হবে সেটি আল্লাহর বিষয়। হতে পারে আল্লাহ তায়ালা মজলুমকে এতো পরিমাণ দিবেন যাতে সে সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।
আমি সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বের বিষয় আর একটু উল্লেখ করতে চাই। জনগণ রাষ্ট্রের মালিক এবং তারা জনগণের সেবক। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন তাদের কাজ। অপরাধী পালিয়ে যায় ভালো কিন্তু কোনো নিরপরাধী যেন কোনো অবস্থাতেই শাস্তি না পায়। ঘুষের আদান-প্রদানের প্রশ্নই উঠে না। ঘুষের দাতা ও গ্রহীতাকে রসুল সা. সুস্পষ্ট জাহান্নামি বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যে কাজ দশ মিনিটে হওয়া সম্ভব তার জন্য আধা ঘন্টা লাগানোও একটা জুলুম। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমরা কাউকে কোনো ব্যাপারে দায়িত্ব প্রদান করলে সে তার নিজের কাজ যতো নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে করে আমাদের অর্পিত দায়িত্ব যদি সেভাবে পালন না করে তাহলে তাকে উল্টা করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
আর খেয়ানত ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ কোনো মুসলমানের কাজ নয়, নিরেট মুনাফিকের পরিচায়ক। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমরা কাউকে কোনো ব্যাপারে দায়িত্ব প্রদান করলে সে যদি এক টুকরা সূতা বা তার চেয়েও কোনো ক্ষুদ্র জিনিস খেয়ানত করে তাহলে সে খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে উত্থিত হবে। শুনি মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি। তা যদি সত্যি হয় কিয়ামতের দিন তাদের পরিচয় জানা যাবে। দেখা যাবে আস্ত সেতু ও বিশাল বিশাল স্থাপনা বা অফিসের ফার্নিচার ঘাড়ে করে জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে তওবা করে পরিশুদ্ধ হওয়ার তৌফিক দান করো। আমিন। ০৬.১১.২০২২
Comments
Post a Comment