Skip to main content

দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি : আমাদের করণীয়

বাজারে দ্রব্যসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং যানবাহনে ভাড়াবৃদ্ধিতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এইতো যেখানে এক ডলারে ৮০ টাকা ছিল এখন ১০৭ টাকা। টাকার মান এতো কমে যাওয়াতে সহজেই দেশের হাল উপলব্ধি করা যায়। সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের সাথে যারা জড়িত এই মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা তাদেরই যাদের আয় নির্দিষ্ট ও সৎ জীবন যাপন করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃচ্ছতা সাধন ও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর তাগিদ দিচ্ছেন।

সবার মধ্যেই এক আতঙ্ক। দেখলাম, আমার স্ত্রীর মাঝেও ভয় ঢুকেছে। তিনি আমাকে বলছেন, এবারে এক বস্তা (২৫ কেজি) চাল কিনো। আমি রাজি না। বাসার পাশে প্রিন্স বাজার থেকে আমি চাল কিনি ৫ কেজি করে। ওর চেয়ে ছোট ব্যাগ আর নেই। এটা আমার হাঁটা পথ। বেকার মানুষ। সর্বক্ষণ ঘরে বসে থেকে ল্যাপটব চালাই। স্ত্রীও বিরক্ত হয়। এতে নাকি চোখ মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি মনে করি, ঘন ঘন বাজারে যাওয়ার মধ্যে স্বাস্থ্যগত কল্যাণ রয়েছে। ফলে কোনোরকম বিরক্তি ছাড়াই বাজারে যাই।

আতঙ্ক সৃষ্টি করে সবাই যদি মজুদ শুরু করে তাহলে দুর্ভিক্ষ আরো এগিয়ে আসবে। আমার মনে হয় ভোক্তা শ্রেণী হিসেবে আমাদের অল্প অল্প করে কেনাকাটা করা উত্তম হবে। করোনাকালে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৭৪ সনে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের উপর এক গবেষণা কর্মে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন বলেছেন, খাদ্য উৎপাদন কম নয় বরং বন্টন ও বিতরণ ব্যবস্থায় ব্যর্থতা এবং মজুদদারি ও কালোবাজারির কারণেই দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল।

এই মুহূর্তে প্রয়োজন হতদরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো। মন্দা (১৯৩০-এর দশকের মহানন্দা) অর্থনীতির ত্রাণকর্তা লর্ড কেইনস ও ড. অমর্ত্য সেন এবং অর্থনীতিবিদদের একটি বড়ো অংশ মনে করেন, মন্দা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। অমর্ত্য সেনের কথা, সম্পদের স্বল্পতা নয় মানুষের ক্রয়ক্ষমতার স্বল্পতার কারণেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ক্রয়ক্ষমতার স্বল্পতার পেছনে কারণ সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট। সম্পদ এখন সব লুটেরাদের হাতে এবং এরা সব পাচার করে দিচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ বাজারে আসতে পারছে না। দরিদ্র মানুষের ভোগপ্রবণতা বেশি, এখন দরকার তাদের আয়বৃদ্ধি ঘটানো। বেকার সমস্যা দূরীকরণে সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ বাড়ানো উচিত। 

সমাজে ধনী ও দরিদ্র দুটি শ্রেণী রয়েছে। দরিদ্র মানুষ অবশ্যই কৃচ্ছসাধন করবে কিন্তু ধনী মানুষ তাদের জাকাত ও দান-খয়রাত নিয়ে এগিয়ে আসবে। এর মধ্যেই রয়েছে তাদের জীবন। আল্লাহর বাণী, দান- সদকাকে তিনি ক্রমবৃদ্ধি দান করেন এবং সুদকে নির্মূল করে দেন। তিনি আরো বলেন, তোমরা খরচ করো নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংস করো না। আমরা জাকাত বা দান- খয়রাত যা করি তা পায় দরিদ্র মানুষগুলি। এরা টাকা পেয়ে তাৎক্ষণিক বাজারে চলে আসে। তাতে চাহিদা বাড়ে, উৎপাদন বাড়ে ও নিয়োগ বাড়ে এবং মানুষের আয় বাড়ে। এভাবে অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আসে।

আল্লাহপাক মানুষকে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন। দরিদ্র মানুষ বেহিসেবী খরচ করলে সে নিন্দিত ও অপদস্ত হবে। সে অবশ্যই মিতব্যয়ী হবে। পক্ষান্তরে ধনী মানুষ কার্পণ্য করলে সেও ঘৃণিত হবে। হাদিসের ভাষায়, কৃপণ ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী, 'তোমার হাত গলার সাথে বেঁধে রেখো না, আবার একেবারে ছেড়েও দিয়ো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অক্ষম হয়ে পড়বে’- সুরা বনি ইসরাইল ২৯। ধনী ও দরিদ্র সবার জন্য অপচয় হারাম। যে কোনো ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এবং হালাল কাজেও অতিরিক্ত ব্যয় সমর্থনযোগ্য নয়। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা, 'বাজে খরচ করো না। যারা বাজে খরচ করে তারা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি বড়ো অকৃতজ্ঞ’- সুরা বনি ইসরাইল ২৬-২৭।

সরকারি পর্যায়ে আমাদের অনেক অপচয় হয় এবং এই অপচয়ে দুর্নীতিবাজরাই লাভবান হয়। অপচয়সহ সকল প্রকার দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং দরিদ্র শ্রেণির মানুষের কল্যাণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা বর্তমান পরিস্থিতি থেকে কিছুটা রেহাই পেতে পারি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন। ০২.১১.২২

Comments