জাতীয় সিরাত উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে

'আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে রসুল সা.' শীর্ষক জাতীয় সিরাতুন্নবি সা. সেমিনার ও পুরস্কার বিতরণ 

সেমিনার সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য আলেম মাওলানা সাইয়্যদ কামালুদ্দিন আব্দুল্লাহ জাফরী এবং প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রউফ। প্রবন্ধ পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. আ ক ম আব্দুল কাদের। প্রবন্ধকার দীর্ঘ ২৪ পৃষ্ঠার সুলিখিত প্রবন্ধটির চুম্বক অংশ তুলে ধরেন। মহানবি সা. ৪০ বছর বয়সে হেরাগুহায় আল্লাহর বাণী প্রাপ্ত হয়ে তওহিদ, রিসালাত ও আখেরাতের ভিত্তিতে একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ময়দানে বেরিয়ে আসেন এবং ইতিহাস সাক্ষী, দ্বিতীয়বার হেরাগুহায় আর যাননি। তৎকালে সমাজের নেতৃত্বে ছিল আবু জেহেল, আবু লাহাব, উতবাহ ও শাইবা প্রমুখ কাফিরদের হাতে। মহানবি সা. একটি মুহূর্তও তাদের নেতৃত্ব মেনে নেননি। তাঁর এই সংস্কার আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল অসৎ নেতৃত্বের অবসান করে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা। মক্কায় তেরোটি বছর এই লক্ষ্যে একদল লোক তিনি গড়ে তোলেন এবং মদিনায় দীন প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব লাভ করে সমাজের সকল অসংগতি দূর করে একটি আদর্শ সমাজ কায়েম করতে সক্ষম হন।

সেমিনারের প্রধান অতিথি বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে সবার আগে নিজেকে গড়তে হবে। তিনি আত্মশুদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, সৃষ্টির ধর্মই হলো ইসলাম। আল্লাহপাক যখন মানুষ সৃষ্টি করেছেন তখন তাকে তার স্বভাবধর্ম ইসলামের উপরই সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, ইসলাম অধিকারের কথা না বলে কর্তব্য পালনের কথা বলে। আমরা সবাই কর্তব্য পালন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সকলের অধিকার কায়েম হয়ে যাবে।

বরেণ্য আলেম ও সেমিনারের সভাপতি প্রফেসর সাইয়্যেদ কামালুদ্দিন আব্দুল্লাহ জাফরী বলেন, মুহাম্মদ সা.-এর দাওয়াতের সূচনা হয়েছিল আল্লাহর পরিচয় পেশের মধ্য দিয়ে। তারপর তিনি তুলে ধরেন মানুষের পরিচয়। আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব সর্বত্র তুলে ধরায় নবির কাজ। মানুষ আল্লাহর দাস, দাসত্বই তার দায়িত্ব। সেজদায় গিয়ে মাটির সাথে নিজের কপাল ও নাক ঠেকিয়ে মানুষ আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করে। তিনি নারীবাদীদের সমালোচনা করে বলেন, উত্তরাধিকার আইনে নারীকে বঞ্চিত করা হয়নি। নারীকে মানদণ্ড ধরে বলা হয়েছে দুই নারী যা পাবে এক পুরুষ তাই পাবে। এক লক্ষ টাকা দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে বন্টন করলে বোন পাবে ২৫ হাজার ও ভাই পাবে ৫০ হাজার। ভাইয়ের সংসারে বোনের কোনো খরচ নেই। বোনের বিয়েতে ২৫ হাজার টাকা মোহরনা পেলে তার দাঁড়ায় ৫০ হাজার টাকা। আর ভাই বিয়ে করতে চাইলে স্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা মোহরনা দিলে সে নিঃস্ব হয়ে যায়।

পঠিত প্রবন্ধের উপর আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল কালাম পাটোয়ারী। তিনি পর্দার উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ঘর থেকে বের হওয়ার সময় পর্দা মানার সাথে সাথে ছেলে-মেয়ে বালেগ হলে ঘরেও পর্দা মানতে হবে। আরো আলোচনা করেন শর্ষিনার পীর সাহেব মাওলানা আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম মিরসরাই পীর সাহেব মাওলানা আব্দুল মমিন নাসারি, তামিরে মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মুহাম্মদ খলিলুর রহমান মাদানি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান, যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল আজিজ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এড. মতিউর,  রহমান, কল্যাণপুর জামেয়া এমদাদিয়া দারুজ্জান্নাত মাদ্রাসার মুতামিম মাওলানা আবু তাহের জিহাদি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. নিজামুদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের প্রফেসর ড. নকিব নসরুল্লাহ প্রমুখ। 

আলোচনা শেষে সিরাতুন্নবি সা. উপলক্ষে রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি বিচারপতি আব্দুর রউফ। কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও পাঁচ জনকে বিশেষ পুরস্কার হিসেবে নগদ ৩০ হাজার, ২৫ হাজার, ২০ হাজার, ১৫ হাজার, ১০ হাজার ও ৫ হাজার করে (৫ জনকে) নগদ টাকা, ক্রেস্ট ও বই প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যাই বেশি।

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট,কাকরাইল তিনতলার বিশাল হল কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মুহাদ্দিস মাহমুদুল হাসান। আলহামদু লিল্লাহ।