Skip to main content

মসজিদ উত তাকওয়ার অনন্য বৈশিষ্ট্য

মসজিদ উত তাকওয়া আমার দেখা একটি সেরা মসজিদ। জনকল্যাণমূলক নানাবিধ কাজের আঞ্জাম দেয়া হয় এই মসজিদ থেকে। এককথায় এক জীবন্ত মসজিদ। এই মসজিদে রয়েছে এক মানসম্মত হাফেজি মাদ্রাসা, এ্যামবুলেন্সসহ এলোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি দাতব্য চিকিৎসালয়, মাইয়্যেতের গোসল ও দাফন কাফনের ব্যবস্থা এবং বন্যা, সাইক্লোন, খরা, শীতসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা। কুরআনের তফসির, হাদিসের পাঠ, শিশু-কিশোরদের নানাবিধ প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রম, রমজান মাসে  নিয়মিত ইফতারের ব্যবস্থাসহ বিভিন্নমুখী সেবামূলক কার্যক্রম। ধানমন্ডি একটা অভিজাত এলাকা এবং এখানকার মানুষ দানের ব্যাপারে বেশ উদারহস্ত। জুমায় দানবক্সে কালেকশনই প্রমাণ করে এখানকার মানুষ কতোখানি দানশীল। গত ২৮.১০.২২ তারিখে আদায় ছিল দুই লক্ষ পাঁচশত তেত্রিশ টাকা এবং ০৪.১১.২০২২ তারিখে আদায় এক লক্ষ বিরানব্বই হাজার চারশত ঊনসত্তর টাকা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল মসজিদকে মসজিদে নববীর আলোকে হেদায়েত জারির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার তৌফিক দান করুন। আমিন।

★ কুরআনের পাঠ-

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদে আজকে ফজরে তেলাওয়াত করা হয়েছে সুরা ইউসুফের ৩৩-৪৯ আয়াত। নামাজ শেষে পঠিত অংশের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন মসজিদের দ্বিতীয় ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুর রশীদ।

মিশরের অভিজাত নারীদের কানাঘুষার প্রেক্ষিতে আজিজের স্ত্রী একদিন তাদেরকে দাওয়াত প্রদান করে। তাদের সম্মুখে খাবার ও কেটে খাওয়ার জন্য একটি ছুরি দেয়া হয়। এ সময়ে ইউসুফ আ.-কে তাদের সম্মুখে আসতে বলা হলে তাঁর রূপ-যৌবন দেখে মহিলারা খাবারের পরিবর্তে নিজেদের হাত কেটে ফেলে। তারা বললো, এ কী অদ্ভূত সৃষ্টি, এতো মানুষ নয়, এ হচ্ছে এক সম্মানিত ফেরেশতা। আসলে আজিজের স্ত্রী একতরফা ইউসুফ আ.-এর প্রেমে পড়ে। সে বলে, আমি তার কাছ থেকে অসৎ কিছু কামনা করেছিলাম। কিন্তু সে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি যা আদেশ করি তা পালন না করলে তাকে কারারুদ্ধ করবো।

ইউসুফ আ. এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন এবং আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাকে তাদের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করেন। এই ঘটনা থেকে তৎকালীন সমাজের অভিজাত পরিবারের নৈতিক অধপতন উপলব্ধি করা যায়। তারা তাদের নারীদের নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে ইউসুফ আ.- কে কারারুদ্ধ করাকেই নিরাপদ মনে করলো। 


ইউসুফ আ.-এর সাথে আরো দু'জন যুবক কারাগারে গেল। যুবকদ্বয় একদিন স্বপ্ন দেখে তাদের একজন আঙ্গুর নিংড়ে রস বের করছে এবং অপরজন দেখে মাথায় রুটি বহন করছে এবং পাখি তা থেকে খাচ্ছে। ইউসুফ আ.-কে তারা অল্প দিনেই জেনে ফেলে এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা তাঁর কাছে জানতে চায়

ইউসুফ আ. বলেন, আমার এই জ্ঞান আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত এবং যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনে না ও আখেরাতে বিশ্বাস করে না তাদেরকে আমি বর্জন করেছি। যুবকদের প্রশ্ন করার সুযোগে তিনি তাদের দাওয়াত দেন। তিনি বলেন, আমি আমার পিতৃপুরুষ ইব্রাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুবের মিল্লাতের অনুসরণ করি এবং আমরা আল্লাহর সাথে শিরক করা থেকে মুক্ত। হে আমার সাথিরা, তোমরাই বলো, ভিন্ন ভিন্ন রব ভালো, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহকে রব মানা ভালো। তিনিই আদেশ দিয়েছেন, তাঁকে ছাড়া আর কারো গোলামি করবে না।

সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জেলখানার সাথিদের দাওয়াত দেয়ার পর বলেন, তোমাদের একজন মুক্তি পেয়ে মালিককে শরাব পান করাবে আর যার মাথা থেকে পাখি রুটি খাচ্ছিলো তাকে অচিরেই শূলবিদ্ধ করা হবে। যে ব্যক্তি মুক্তি পাবে বাদশাহর কাছে তাঁর বিষয়ে বলার জন্য তিনি তাকে বলেন।

শয়তান তার মালিকের কাছে তাঁর বিষয়ে বলতে ভুলিয়ে দেয়। একদিন বাদশাহ স্বপ্ন দেখেন সাতটি দুর্বল গাভী সাতটি মোটাতাজা গাভীকে খেয়ে ফেলছে এবং ফসলের সাতটি সবুজ শীষ ও সাতটি শুকনা শীষ। সভাসদদের কাছে তাঁর স্বপ্ন পেশ করলে তারা এর ব্যাখ্যা দানে অপারগতা প্রকাশ করে। সে সময়ে সেই যুবক বলে, কারাগারে ইউসুফ নামে একজন যুবক আছে, আমাকে পাঠিয়ে দিন আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা জেনে আসি।

ইউসুফ আ. ব্যাখ্যায় বলেন, তোমাদের দেশে ক্রমাগত সাতটি বছর ভালো ফসল হবে এবং পরবর্তী সাতটি বছর দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে। তোমাদের ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণ করে পরবর্তী সাতটি বছরের জন্য ফসলের শীষসহ রেখে দিবে। স্বপ্নের এই ব্যাখ্যা শোনার পর বাদশা বলেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। ইউসুফ আ.-এর জীবন তখন নতুন মোড় নেয়। 

শিক্ষা : 

★ বিপদে বান্দা কেবল আল্লাহকেই ডাকবে এবং তিনি তাঁর বান্দার ডাক শুনেন (৩৪ নং আয়াত)।

★ একজন মুমিন সর্বাবস্থায় দাওয়াতের সুযোগ কাজে লাগাবে। জেলখানায় থেকেও ইউসুফ আ. দাওয়াত দিয়েছেন।

★ দাওয়াত হবে তওহিদের দিকে। 

★ আগামো দুর্ভিক্ষ অনুভব করলে খাদ্যভাণ্ডার গড়ে তুলতে হবে।

Comments