Skip to main content

কুরআনের পাঠ

মুমিনদের অভিভাবক আল্লাহ আর কাফেরদের অভিভাবক হলো তাগুত

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম 

‘যারা ইমান আনে আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ও সহায়। তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। আর যারা কুফরির পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে তাগুত। সে তাদের আলো থেকে অন্ধকারের মধ্যে টেনে নিয়ে যায়। এরা জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে থাকবে চিরকাল’- সুরা বাকারা ২৫৭।

সুরা বাকারা ২৮৬ আয়াতবিশিষ্ট কুরআন মজিদের সর্ববৃহত সুরা। মাদানি সুরা। বাকারা শব্দের অর্থ গাভি। এই সুরায় গাভির উল্লেখ থাকায় চিহ্নস্বরূপ নামকরণ করা হয়েছে বাকারা। এখানে ২৫৭ নং আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

একজন ইমানদার ব্যক্তির অভিভাবক, বন্ধু ও সাহায্যকারী হলেন মহান আল্লাহ। ইমানের বদৌলতে আল্লাহপাক তাকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান। এখানে অন্ধকার বলতে মূর্খতা, অজ্ঞতা, কুসংস্কার, সংকীর্ণতা, হিংসা-বিদ্বেষ বোঝায়, যা তাকে কল্যাণ ও সাফল্যের পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং সত্যের বিরোধীতায় তার সকল শক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে। এখানে সেই অন্ধকারের কথাই বলা হয়েছে। এমতাবস্থায় ভালো কাজে তার কোনো আনন্দ নেই। নামাজের মতো মৌলিক ইবাদতও তার কাছে কঠিন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে ইমান আনার সাথে সাথে তার চিন্তা ও কর্মতৎপরতা ঘুরে যায়। তখন ন্যায় ও কল্যাণকর কাজ তার জন্য সহজ হয়ে যায়। তার মনের পর্দা দূর হয়ে যায়। সে মূর্খতা, অজ্ঞতা ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে আলোকোজ্জ্বল পথে যাত্রা শুরু করে। বিপদ-মুসিবত, দুঃখ-কষ্ট যতই আসুক এবং যেভাবেই আসুক আল্লাহপাক তার দিলকে প্রশান্ত করে দেন, সে তখন অনুভব করে এটা তার মালিকের পরীক্ষা। সকল ধরনের পরীক্ষায় সে পরম ধৈর্য অবলম্বন করে এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য সে আল্লাহকেই ডাকে ও আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন।

পক্ষান্তরে যারা আল্লাহকে অমান্য করে তাদেরও অভিভাবক রয়েছে এবং তা অসংখ্য। এখানে বলা হয়েছে তাদের অভিভাবক ‘তাগুত’। তাগুত বহুবচনে ব্যবহৃত হয়। এর অর্থ সীমালঙ্ঘনকারী। বিশ্বজাহানে সবকিছু আল্লাহর সৃষ্ট ও দাস। মানুষ সেরা সৃষ্টি এবং সেরা দাস। মানুষ যখন আল্লাহর আনুগত্য বাদ দিয়ে অন্য কাউকে তার আনুগত্য করতে বাধ্য করে তখনই সে হয়ে যায় তাগুত। তাগুত প্রথমত শয়তান এবং এর পরে নিজের নফস। আল্লাহ সম্পর্কীয় জ্ঞানের অভাব এবং তাঁর নাফরমানিই হলো অন্ধকার। শয়তানের কাজই হলো মানুষকে অন্ধকার জগতে নিয়ে যাওয়া। একজন কাফেরের অভিভাবক হলো শয়তান, সে আল্লাহর নাফরমানিমূলক কাজকে চাকচিক্যময় ও লোভনীয় করে তুলে। নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, সুদ-ঘুষ-দুর্নীতি সবই আল্লাহর নাফরমানি এবং শয়তান মানুষকে প্ররোচনা দেয় এগুলোতে রয়েছে আনন্দ ও তৃপ্তি। অনেক সময় মানুষ নফসের দাস হয়ে যায় এবং তার সামনে আর হালাল-হারামের বাছ-বিচার থাকে না। যারাই মানুষকে অন্যায়ের পথে নিয়ে যায় তারাই তাগুত। শয়তান ও নফসের পাশাপাশি আরো তাগুত হতে পারে নিজের পিতা-মাতা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়স্বজন, দল, নেতা-নেত্রী, মুরুব্বি, শাসক- এককথায় আল্লাহর নাফরমানির কাজে যারাই সহযোগিতা করে বা উদ্বুদ্ধ করে তারাই তাগুত। কারণ সবাই আল্লাহর দাস এবং সবার উচিত আল্লাহরই দাসত্ব করা। মানুষ নিজে আল্লাহর দাসত্ব করার পাশাপাশি তার কাজ হলো অপরকেও আল্লাহর দাসত্বে সহযোগিতা করা। 

যারা কুফরি করে তাদের অভিভাবক হলো তাগুত এবং সে মানুষকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তাগুত যার অভিভাবক তার পক্ষে সুদ-ঘুষ-দুর্নীতি এবং গুম- খুন-ভোট ডাকাতি সবই সম্ভব। তাগুতের অনুসারী কাফেরদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম এবং সেটি তাদের চিরস্থায়ী ঠিকানা।

তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি ইমান এনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্য করার তৌফিক আল্লাহ আমাদের সকলকে দান করুন। ১৩.১১.২০২২

Comments