Skip to main content

চলতে ফিরতে দেখা

গতকাল ফজরের নামাজ শেষে মর্নিং ওয়াকে বের হয়েছিলাম। রাস্তায় লক্ষ করলাম এক সাইকেল মেকার রিকশা মেরামত করে টাকা পেয়ে কপালে ঠেকাচ্ছে ও চুমু খাচ্ছে। আমি সালাম দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে বললাম, মনে হয় আপনার প্রথম খরিদদার। বললো, হ্যাঁ। আমি বললাম, মুসলমান হিসেবে আমরা কাজ শুরু করবো আল্লাহর নামে (বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম) এবং টাকা পেয়ে আমরা বলবো আলহামদু লিল্লাহ। তাতে আল্লাহপাক আমাদের প্রতি খুশি হবেন এবং আমরা বরকত পাবো ইনশা-আল্লাহ। 

আজও ফজরের নামাজ শেষে একই রাস্তায় হাঁটছিলাম এবং গতদিনের মতো সেই লোকের সম্মুখে দাঁড়ালে একটা হাসি দিলেন। আমি বললাম, সকালে তো অনেক খরিদদার। আপনাদের রুজি একেবারে হালাল এবং বড়ো কষ্টের উপার্জন। বললো, আমাদের এখানে কোনো হারাম নেই। জিজ্ঞেস করলাম, নামাজ পড়েন কি? জবাব দিলো, হ্যাঁ। আমি বললাম, আপনার জান্নাতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইনশা-আল্লাহ কোনো বাধা থাকবে না।

কিছুদূর এগিয়ে আসার পর লক্ষ করলাম, একজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর চেহারায় সেজদার চিহ্ন জ্বলজ্বল করছে। মুমিনদের প্রসঙ্গে এটা আল্লাহরই কথা। একটু দাঁড়িয়ে খোঁজ-খবর নিলাম এবং বাড়ি ও ছেলে-মেয়ে সম্পর্কে জানলাম। বললাম, আপনারা পুলিশে চাকরি করেন- এটা খুবই মর্যাদাপূর্ণ পেশা। ব্যস্ততা না থাকলে আমি আপনাকে একটি হাদিস শোনাই। রাজি হলেন। হাদিসটি হলো- রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, দুটি চোখকে আল্লাহপাক জাহান্নামের আগুনে জ্বালাবেন না। এক. সেই চোখ যে চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে অশ্রু ঝরে, দুই. সেই চোখ যে চোখ জনগণের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে বিনিদ্র রজনী যাপন করে। মূলত দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও আইন- শৃঙ্খলায় নিয়োজিত সংস্থার সদস্যদেরকেই বোঝানো হয়েছে।

আমাদের সমাজে পুলিশ সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা প্রচলিত নেই। আসলে এটা সমগ্র পুলিশের চিত্র নয়। এখানে প্রচুর নামাজি ও সৎ লোক রয়েছে। গতদিন তাকওয়া মসজিদে নামাজ পড়লাম আমার দুই পাশে দুইজন পুলিশ ছিল। আমি তাদেরকে নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। শিরোনাম ছিল - দু'জন জান্নাতি মানুষের সাথে নামাজ আদায় করলাম। পুলিশ ভাইটি জানালো, বর্তমানে পুলিশের মাঝে নামাজি লোকের সংখ্যা অনেক। আমি বিশ্বাস করি, নামাজি লোক মাত্রই ভালো লোক। নামাজ পড়ার সাথে সাথে কেউ যদি মন্দ আচরণ করে বুঝতে হবে সে মুসলমান নয় মুনাফিক। নামাজ বেহেশতের চাবি। যার হাতে ঘরের চাবি থাকে সেতো ঘরে প্রবেশের আশা করতেই পারে। 

মুসলমান হওয়ার জন্য প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো নামাজ। একজন ব্যক্তি কোনো অফিসে চাকরি করলে চাকরির প্রথম শর্ত সময়মত অফিসে হাজিরা দেয়া। তেমনি ঈমান আনার পর মসজিদে হাজিরা দিয়ে তাকে প্রমাণ করতে হয় যে সে একজন মুসলমান। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য অত্যন্ত দয়ার্দ্র। তিনি মানুষকে ক্ষমা করতে চান এবং ক্ষমা করার উপায় তালাশ করবেন। ভাবখানা এমন, দেখি আমার বান্দার মাঝে কোনো নেক আমল আছে কি না? শাস্তি দেয়ার জন্য তাঁর কোনো তাড়াহুড়ো নেই বা তিনি কোনো বাহানাও তালাশ করবেন না। 

মানুষ ভালো কাজের নিয়ত করলেই সওয়াব এবং কাজ সম্পন্ন করলে সওয়াব দশ থেকে সাতশ গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে মন্দ কাজে নিয়ত করলে কোনো গুনাহ নেই। মন্দ কাজ করার পর তওবা করলে (যদি কারো হক নষ্ট না হয়) গুনাহ লেখা হয় না। আর তওবা না করলে যতটুকু অপরাধ ততটুকু গুনাহ লেখা হয়। একটুও বাড়িয়ে লেখা হয় না।

আমার উপলব্ধি, আল্লাহর যারা বিদ্রোহী বান্দা তাদের জন্য আল্লাহ হবেন বড়ো কঠিন। বিদ্রোহী বলতে তাদের  বোঝায় যারা ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শ হিসাবে মানে না এবং উলামায়ে কেরাম ও ঈমানদারদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। আল্লাহর বাণী, যারা ঈমানদার নর  ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি- সুরা বুরুজ। 

আল্লাহর বিচারটা হবে মানুষের যোগ্যতা ও সুযোগ- সুবিধার ভিত্তিতে। সাধারণ মানুষ যারা ঈমানদার অর্থাৎ  ইসলামের পক্ষের শক্তি তাদের খুব হালকাভাবে বিচার হবে। হালাল রুজি ও নামাজের মতো আমল থাকলে আশা করা যায় আল্লাহপাক তাঁর অনুগত বান্দার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে ক্ষমা করবেন। আমরা আল্লাহর দয়া চাই। হে পরওয়ারদেগার! তুমি আমাদের প্রতি দয়া করো ও ক্ষমা করো। ০৭.১১.২০২২

Comments