Skip to main content

খেয়ানতকারী/আত্মসাৎকারীর পরিণতি জাহান্নাম

যুদ্ধ শেষে ফেরার পথে একজন ব্যক্তি তীরের আঘাতে মারা যায়। সাহাবায়ে কেরাম বলাবলি করলেন, লোকটি কত সৌভাগ্যবান যে সে শহীদ হয়ে গেল। মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমাদের সাথী জাহান্নামী। সাহাবায়ে কেরাম (রা) তাজ্জব হয়ে গেলেন। কারণ যুদ্ধের ময়দানে সেই ব্যক্তি তাঁদেরই সাথে ছিলেন। রসূল (সা) বললেন, সে খেয়ানত করেছে। তার মাল-সামান তল্লাশি করে গণিমতের একটি চাদর পাওয়া গেল। খয়বরের যুদ্ধে গণিমতের মাল (চাদরটি) জমা না দিয়ে সে সেটি রেখে দিয়েছিল। একটি চাদর আত্মসাৎ করার অপরাধে যদি সারা জীবনের আমল বিনষ্ট হয়ে জাহান্নামে যেতে হয় তাহলে যারা পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি করে তাদের পরিণতি কী হবে? রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, সরকারি দায়িত্ব পালনকারী কোনো ব্যক্তি যদি এক টুকরো সূতা বা তার চেয়েও ক্ষুদ্র কোনো জিনিস খেয়ানত করে তাহলে খেয়ানতের বোঝা মাথায় করে সে উত্থিত হবে। মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি। ছোট বড় যে যত দুর্নীতি করবে কোনো কিছুই গোপন করা সম্ভব নয়। দুনিয়ার জীবনে ক্ষমতার জোরে বা ছলচাতুরি করে পার হলেও আখিরাতে ঠিকই ধরা খাবে। পদ্মা সেতুতে যারা দুর্নীতি করবে হয়তো দেখা যাবে পদ্মা সেতু মাথায় করে কাঁপতে কাঁপতে জাহান্নামের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বা অফিসের আসবাবপত্র/পারমানবিক বালিশ/ল্যাপটপ/টেবিল-চেয়ার-কাগজ/পার্টির কাজ থেকে নগদ অর্থ যাই হোক না কেন খেয়ানতকারীর রক্ষা নেই (উদাহরণ মাত্র)। আজকের দিনের দাপট সেদিন মূল্যহীন হয়ে যাবে। হয়তো দেখা যাবে অফিসের পিয়ন/দারোয়ান সততার কারণে মহা শান শওকতের সাথে জান্নাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, অথচ তার দুর্নীতিবাজ বসের করুণ পরিণতি সে দেখবে। আল্লাহর সাথে শিরক ও তাঁর নাফরমানি অনেক বড় অপরাধ, কিন্তু এই অপরাধ করে কোনো ব্যক্তি যদি অনুতপ্ত হয়ে বলে, পরোয়ারদেগার! আমি ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করে দাও, তাৎক্ষণিক ক্ষমা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ বা মানুষের হক নষ্ট করলে তা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে না নিলে বা আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরৎ না দিলে কোনো ক্ষমা নেই। আমি হতাশ করতে চাই না, কারণ আল্লাহপাক দয়ার সাগর। তিনি তাঁর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার জন্য বলেছেন। তাই আল্লাহর কাছে তাওবা করে এবং যতটুকু সম্ভব অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গোপনে গরীব-দুখী মানুষকে দান করে এবং নিজের, নিজের পিতা-মাতা ও তৎসঙ্গে যারা তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্রমাগত দুআ করার মাধ্যমে হয়তো আল্লাহপাক ক্ষমা করতেও পারেন। আসুন, আমরা সবাই রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও ব্যক্তিবিশেষের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ-দখল থেকে দূরে থাকি এবং অতীতে কিছু ঘটে থাকলে অবৈধ সম্পদ সব ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হই। আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন অতি নগণ্য। কতো নগণ্য তা কল্পনাও করা যায় না। যতো বড় দাপুটে ও সম্পদশালী হই না কেন মৃত্যুর সাথে সাথে আমি আর সেই সম্পদের মালিক নই। পরোয়ারদেগার! তুমি আমাদের সহীহ উপলব্ধি দান করো। আমিন।

Comments