জু’মা বক্তৃতা
২৫.০৯.২০২০
আজ মিরপুর কাঁঠালবাগ জামে মসজিদে জু’মার খুতবায় সম্মানিত খতিব আলহাজ্জ মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান আশরাফী আল্লাহর হামদ ও রসুল (সা)-এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশের পর রিজিক নিয়ে আলোচনা করেন।
রিজিক কেবল খাদ্যশস্য নয়, বান্দার জন্য আল্লাহপাকের সকল অনুগ্রহের সমষ্টিই হলো রিজিক। সুস্বাস্থ্য, জ্ঞান, যোগ্যতা, অর্থবৃত্ত সবই রিজিক এবং এই রিজিক দেয়ার মালিক কেবল আল্লাহ। মানুষ মায়ের গর্ভে থাকাকালে তার রিজিকের ব্যবস্থা তিনি করেন। মাতৃগর্ভে সন্তানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা প্রসঙ্গে তিনি বলেন ৪০ দিন শুক্র অবস্থায়, এরপর রক্ত, তারপর গোশত ও মানবশিশুর পৃথিবীতে আগমন এবং গর্ভে থাকাকালীন তার তাকদীর নির্ধারণ অর্থাৎ রিজিক, হায়াত ও ভালো-মন্দ নির্ধারণ সব আল্লাহই করে থাকেন।
তাকদীরের ব্যাপারে মানুষের ভুল ধারণা রয়েছে। মানুষ মনে করে, চেষ্টা করে লাভ কী? তাকদীরে যেটা আছে সেটা তো হবেই। তাকদীরে কী আছে সেটি তো কারো জানা নেই। আল্লাহর কাছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই; সবই তাঁর কাছে বর্তমান। মূলত মানুষ যা করবে সেটি আল্লাহর জানা এবং আল্লাহ তাই লিখে রাখেন। মানুষকে চেষ্টা-সাধনা করার তাগিদ স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা) প্রদান করেছেন। একজন সাহাবী রসূল (সা)-এর কাছে এসে উটটি না বেঁধে বলেন, ‘তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ’। রসূলুল্লাহ (সা) তার কথার প্রেক্ষিতে বলেন, উটটি বেঁধে তারপর বলো, ‘তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ’। এতে বোঝা যায়, বান্দাহ তার চেষ্টা-প্রচেষ্টার পর ফললাভের জন্য আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে।
তাকদীর যেমন আল্লাহপাক নির্ধারণ করেন তেমনি তাকদীরের পরিবর্তন সাধনের ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে। তিনি তো সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। তাই রিজিক অনুসন্ধানের লক্ষ্যে মানুষ সাধ্যমত চেষ্টা করবে এবং নির্ভর করবে রিজিক দানের মালিক মহান আল্লাহর ওপর। রিজিক বন্টনের ক্ষেত্রে আল্লাহ সমতার নীতি অবলম্বন করেননি। তিনি কাউকে প্রচুর রিজিক দিয়েছেন, আবার কাউকে সংকীর্ণ করেছেন। এখানে আল্লাহতায়ালার হেকমত রয়েছে। এই পৃথিবীটা তিনি আবাদ করবেন। ধনী-দরিদ্র এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে রয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, একজন ধনী ব্যক্তির এক বস্তা চাল নিয়ে বাসায় আসতে হবে। তার প্রয়োজন রিক্সাওয়ালা ও উপরে উঠানোর জন্য কুলি। এভাবে আল্লাহ মানুষকে পরস্পরের মুখাপেক্ষি করেছেন এবং এর মাধ্যমে তিনি রিজিক বন্টনের ব্যবস্থা করেছেন।
সমাজে রয়েছে বিকলাঙ্গ, কর্মে অক্ষম মানুষ এবং নানা কারণে মানুষ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে অসহায় হয়ে পড়ে। আল্লাহপাক তাঁর বিধানের মধ্যে সে সমাধানও রেখেছেন। ধনীদের সম্পদে বঞ্চিত ও প্রার্থীদের হক তিনি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। শুধু মানুষ নয়, তাঁর সকল সৃষ্টির রিজিকের ব্যবস্থা তিনি নিজ হাতে রেখেছেন। খতিব মহোদয় কুরআন ও হাদিস থেকে অনেক উক্তি উদ্ধৃত করেন। জমিনে বিচরণশীল সকল সৃষ্টির রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর। আকাশে উড়ন্ত পাখি, কীট-পতঙ্গ, জলজপ্রাণি, উদ্ভিদ সকলের রিজিকের চমৎকার ব্যবস্থা তাঁর বিধানে রয়েছে এবং রিজিকের ব্যাপারে তিনি তাঁর সৃষ্টিকে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল করেছেন।
রিজিকের মধ্যে হালাল-হারামের বিষয় জড়িয়ে আছে। কেবল হালালটি তালাশ করা এবং তার ওপর সন্তুষ্ট থাকার জন্য আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেছেন। রিজিকের প্রাচুর্যতা মান-ইজ্জতের মাপকাঠি নয়, আবার রিজিকের সংকীর্ণতা দুর্ভাগ্যের কারণ নয়। সম্মান-মর্যাদা নির্ভর করে ব্যক্তির ইলম, চরিত্র ও তাকওয়ার ওপর। দেশে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার আব্দুল মালেক অরফে বাদল মিয়ার অঢেল ধন-সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন ড্রাইভারের যদি শত কোটি টাকার সম্পদ থাকে তাহলে তার মালিকের অবস্থা কী? এরকম হাজারো বাদল মিয়া দেশে ছড়িয়ে আছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জনগণের সম্পদ আত্মসাৎকারীর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তিনি বিচারের মাধ্যমে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
এই পৃথিবী একটি পরীক্ষাগার। ধনী-দরিদ্র উভয়েরই আল্লাহ পরীক্ষা গ্রহণ করছেন। সম্পদের মালিক হয়ে ধনীর গর্ব-অহঙ্কারে মত্ত হয়ে ওঠা এবং দরিদ্র বিপদ-মুসিবতে ধৈর্যহারা হয়ে পড়া আল্লাহর দেখার বিষয়। একজন মু’মিনের পরিচয়, বিপদাপদে সে পরম ধৈর্য অবলম্বন করে এবং সচ্ছলতায় সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। খতিব মহোদয় তাঁর ও তাঁর মুসল্লিদের জন্য আল্লাহপাকের নিকট উত্তম রিজিক অর্থাৎ হালাল রিজিক কামনা করেন। সংক্ষেপিত।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment