Skip to main content

করোনা মুসলিম হিসেবে আল্লাহর হুকুম মেনে চলে

ভাবছেন, এ এক আশ্চর্য কথা। যেখানে নবী-রসূল ও তাঁদের অনুসারীরা মুসলিম, সেখানে করোনার মতো ক্ষতিকর এক রোগজীবাণু মুসলিম! হ্যাঁ, আল্লাহর সকল সৃষ্টিই মুসলিম এবং মুসলিম না হয়ে উপায়ও নেই। মানুষ, ফেরেশতা, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, কীট-পতঙ্গ, জীব-জানোয়ার, বৃক্ষ-লতা যা দেখছেন, জানছেন, অনুভব করছেন সবই মুসলিম। সবাই আল্লাহর বিধান মেনে চলছে। এমন কী নমরুদ-ফিরাউন, আবু জেহেল-আবু লাহাবও এক অর্থে মুসলিম। তাদেরও জন্ম-মৃত্যু, আহার-নিদ্রা-বিশ্রাম আল্লাহর দেয়া নিয়মের অধীন। এক কথায় আল্লাহর সকল সৃষ্টি তাঁর বিধান (প্রাকৃতিক) তারা পরিচালিত। কারো ব্যতিক্রম ঘটানোর সুযোগ নেই। সৃষ্টিগতভাবে মুসলিম হলেও মানুষের মধ্যে ভিন্ন একটি সত্ত্বা আছে যা অন্য কোনো সৃষ্টির নেই। সৃষ্টির সেরা ও আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে মানুষকে ভালো-মন্দ জ্ঞান ও বিবেক দান করা হয়েছে, সর্বোপরি তাকে নবী-রসূল ও কিতাবের মাধ্যমে হেদায়াত দান করা হয়েছে, যার ফলে তাকে তার সকল কার্যক্রমের জবাবদিহি করতে হবে। তার জন্য রয়েছে জান্নাত অথবা জাহান্নাম। আল্লাহর দেয়া প্রাকৃতিক বিধানের সাথে নৈতিক বিধান যারা মেনে চলে সত্যিকার অর্থে তারাই মুসলিম, অবশ্য নৈতিক বিধান মানার ক্ষেত্রে সে স্বাধীন। পক্ষান্তরে যারা অমান্য করে নাম তাদের আব্দুর রহমান, রবার্টসন বা তারাসিংহ যাই হোক তারা কাফির এবং তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। করোনা আল্লাহর সৃষ্ট এক রোগজীবাণু। সে আল্লাহর নিয়ম দ্বারা পরিচালিত। কে আক্রান্ত হবে, কেন হবে এবং এর প্রতিকার কী, এ প্রশ্নের জবাব পুরোপুরি আমাদের জানা নেই। যেহেতু মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি, আল্লাহর জ্ঞানসমুদ্রের সামান্য অংশ মানুষকে দেয়া হয়েছে, তাই চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করে মানুষ অনেক সময় এর কারণ অনুসন্ধান ও সমাধান বের করতে পারে। আর আল্লাহ নিজেও তাঁর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করার জন্য বলেছেন। আমি বিজ্ঞানী বা গবেষক নই। তবে পর্যবেক্ষণ করে কিছুটা উপলব্ধি করতে পারি। সপ্তাহ খানেকের জন্য বাড়ি গিয়েছিলাম। মসজিদ, বাজার, রাস্তাঘাট কোথাও করোনার অস্তিত্ব টের পেলাম না। মসজিদে কোথাও ফাঁক নেই, গায়ে গায়ে লাগানো; আবার কারো মুখে মাস্ক নেই। বাজার, রাস্তা, পরিবহনেও একই অবস্থা। শুধু আমাকে মনে হচ্ছিলো ব্যতিক্রম। ঢাকা শহরে সচেতন জনগোষ্ঠীর মাঝে সীমিত পরিসরে মাস্ক থাকলেও অনেকের মাস্ক বেশ কায়দা করে ঝুলছে, তাতে নাক-মুখ ঢাকা থাকে না। রিক্সা-ভ্যান ও ছোট ব্যাসায়ী, কুলি-মজুর, বস্তিবাসী কেউ আর করোনাকে পরোয়া করে না। এমন অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, মহান আল্লাহ তাঁর অসহায় ও হতদরিদ্র বান্দাদের প্রতি করুণা করার জন্য তাঁর সৃষ্ট করোনাকে বলে দিয়েছেন। মানুষ যখন সীমালঙ্ঘন করে এবং জনপদে গুম, খুন ও অশ্লীলতার প্রসার ঘটে তখন আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের সতর্ক করার জন্য এমন বালা-মুসিবত দিয়ে থাকেন। অতীতকালেও দিয়েছেন। দাম্ভিক ও অহঙ্কারী জনগোষ্ঠীর ধ্বংসলীলার কথা আমরা কুরআন থেকে জানতে পারি এবং আল্লাহ বলেছেন,তারা ছিল শক্তিমান। এবারে করোনার প্রথম ও বড় আঘাতটা এসেছে ইউরোপ-আমেরিকার মতো ক্ষমতাগর্বী ও শক্তিশালী জাতিসমূহের ওপর। সেই তুলনায় এশিয়া-আফ্রিকার অনুন্নত দেশসমূহে আঘাতটা কমই বলা যায়। প্রথম দিকে বাংলাদেশ সম্পর্কে শুনেছিলাম, আট কোটি লোক আক্রান্ত হবে এবং বিশ লক্ষ লোক মারা যাবে। বলা যায়, আল্লাহপাক আমাদের প্রতি রহম করেছেন। মহামারি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভালো-মন্দ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে কোনো মহামারি বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ঈমান নিয়ে যারা বিদায় নেন রসূলুল্লাহ (সা)-এর ঘোষণা মোতাবেক তারা শহীদ। গতকালই একটি হাদিস পড়ছিলাম, কিয়ামতের পূর্ব দিয়ে ভালো লোক বেশি হারে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবেন। বাংলাদেশে দুর্নীতির সয়লাব বয়ে চলেছে। বিশেষ করে সরকারি পর্যায়ে কেনাকাটা ও বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে ভয়াবহ দুর্নীতি ও মুখরোচক কথাবার্তা প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু ফেসবুকে যত মৃত্যুসংবাদ দেখি তারা সবাই সৎ, কর্তব্যপরায়ণ ও ধর্মভীরু। আল্লাহপাক ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণকারী সবার অপরাধ ক্ষমা করে জান্নাতের বাসিন্দা করুন। এখানে দু’টি বিষয় থাকতে পারে আল্লাহপাক তাঁর নেক বান্দাদের তাঁর কাছে নিয়ে নিচ্ছেন এবং হয়তো পাপিষ্ঠদের জন্য তাঁর ভিন্নতর কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, মানুষ হাদিসের অনুসরণে মৃত লোকদের দোষ প্রচার থেকে বিরত রয়েছে। আল্লাহপাক বিপদাপদ দেন এ কারণেই যে, তাঁর বান্দারা পাপাচার থেকে ফিরে আসবে। আবার মানুষের প্রতি রহম করা হলে তারা আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দাহ হয়ে পড়বে। কিন্তু দু’টির কোনোটিই লক্ষণীয় নয়। অন্যায়, দুর্নীতি ও পাপাচার যেন দিন দিন প্রসার ঘটছে এবং আল্লাহর অনুগ্রহকে নিজেদের অর্জন বলে বড়াই করছে। এই দু’টি আচরণই বিপজ্জনক। কুরআন মজিদে বিভিন্ন জায়গায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, আল্লাহর পাকড়াও বড় শক্ত। করোনা সহজে দূর হবার নয়। একজন বিশ্বাসী বান্দাহ হিসেবে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর ওপর নির্ভরতা আমাদের বাড়াতে হবে। প্রথম দিকে মনে হয়েছিল করোনার ফলে আমাদের মাঝে মৃত্যুভয় ও আখিরাতের চিন্তার প্রসার ঘটবে এবং সমাজ থেকে দুর্নীতি, জুলুম ও পাপাচার হ্রাস পাবে। কিন্তু শয়তান সফল হয়েছে; সে আমাদেরকে ধোকায় ফেলে দিয়েছে যে জাহান্নামে গেলেও মাত্র কয়েক দিনের জন্য।কারণ যতবড় পাপিষ্ঠই হোক সে কিছু না কিছু ভালো কাজ করে (যেমন, মসজিদ-মাদ্রাসা-ইয়াতিমখানা ও দরিদ্রদের মাঝে দান-খয়রাত ইত্যাদি)। আবার এটাও বুঝিয়েছে যে, মৃত্যু এতো তাড়াতাড়ি নয়। জীবনকে উপভোগ করার এটিই উপযুক্ত সময়। তা না হলে কি করোনা নিয়েও দুর্নীতি চলে। আল্লাহ চান, তাঁর বান্দাকে জাহান্নাম থেকে জান্নাতে নিয়ে যেতে, আর বান্দা জাহান্নামে যাওয়ার জন্য শয়তানকে জাপটে ধরে আছে। হে রব! সব ধরনের নাফরমানি থেকে দূরে থাকা এবং তোমার অনুগত বান্দাহ হয়ে চলার তাওফিক তুমি আমাদের দান করো। পরোয়ারদেগার! করোনাসহ সব ধরনের বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো এবং তোমার কৃতজ্ঞ বান্দাহ হিসেবে কবুল করো। আমিন। ১৯.০৯.২০২০

Comments