Skip to main content

আসিয়াব পরিচালিত কেন্দ্র পরিদর্শন

বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভের উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালার দ্বিতীয় দিন আমরা তাদের একটি কেন্দ্র পরিদর্শন করি। ৩১ জন নারীকে নিয়ে তাদের সেই কেন্দ্র। সেদিন উপস্থিত ছিলেন ২৮জন। সবাই হতদরিদ্র এবং অধিকাংশই নিরক্ষর। আসিয়াবের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার পরে তাদের অক্ষর পরিচিতি ঘটেছে ও স্বাক্ষর করতে শিখেছেন। তাদের একজন সভানেত্রী ও একজন সেক্রেটারি রয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে আসিয়াবের পক্ষ থেকে একজন মহিলা কর্মী উপস্থিত হয়ে কিস্তি আদায় করেন। মাথা আবৃতসহ তাদের পোশাক ছিল বেশ শালীন। কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শুরু হয় এবং প্রতি সপ্তাহে ইসলামের ব্যবহারিক বিভিন্ন বিষয়াবলী আলোচনা হয়। তাহারাত (পবিত্রতা), নামায, রোযা, পর্দা, সদাচরণ, সহীহ তেলাওয়াত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়। করোনা পরিস্থিতর কারণে কিছু সমস্যা হলেও তাদের কিস্তি আদায় বেশ সন্তোষজনক। ঋণের ব্যাপারে তাদের নিয়ম হলো ঋণগ্রহীতা হাজারে দশ টাকা ঝুঁকি (Insurance) হিসেবে জমা রাখেন। ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করলে ২০০ টাকা জমা রাখতে হয়। বিনিময়ে ঋণগ্রহীতা ও তার স্বামী/অভিভাবক কোনো একজন মারা গেলে সমুদয় ঋণ মাফ হয়ে যায় এবং দাফন-কাফনের জন্য তাৎক্ষণিক ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। তাদের একজনের প্রশ্ন এ দুনিয়ায় মাফ হলেও আখিরাতে মাফ হবে তো। হতদরিদ্র একজন নারীর ঋণের ব্যাপারে যে ভীতি তা যদি সবার মধ্যে থাকতো তাহলে ঋণখেলাপী শব্দের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটতো না। তাদের মাঝে রয়েছে আল্লাহর ভয়। প্রশ্নোত্তরের পরে তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা রাখা হয়। আমি প্রথমেই তাদের কাছে প্রশ্ন রাখি আসিয়াবের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারায় তারা সন্তুষ্ট কি না। সবাই হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। আসিয়াব থেকে ঋণ নিয়ে আয়বর্ধনমূলক কাজে বিনিয়োগ করে পরিবারকে সহযোগিতা করায় আমি তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। স্বামী-স্ত্রী, সন্তান ও শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়েই আমাদের পরিবার। আমরা সবাইকে নিয়েই সুখী জীবন-যাপন করতে চাই। আল্লাহ নারীকে সহজেই জান্নাত দিতে চান। আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি চাই এবং আল্লাহ আমাদেরকে দুআ শিখিয়ে দিয়েছেন (রাব্বানা আ'তিনা ফিদ্ দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাতাও ওয়া কিনা আজাবান্নার)। নামায, রোযার মতো মৌলিক ইবাদত পালনের সাথে কোনো নারীর স্বামী যদি তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে আল্লাহর রসূল (সা) তাকে সুসংবাদ শুনিয়েছেন, যে দরজা দিয়ে খুশি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তাই স্বামীসহ পরিবারের সাথে সদ্ভাব রেখেই আমাদের চলতে হবে। বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ি থাকলে তাঁদের খেদমত করে জান্নাত পেতে হবে। আমি বলবো, স্বামী সবচেয়ে খুশি হন যদি দেখেন তার স্ত্রী তার পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার করছেন। পর্দা আল্লাহপাক ফরজ করেছেন। নারীর সতর সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা সবাই হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। পুরো সতর আবৃত করে চলার জন্য আমি তাদের প্রতি আহবান জানাই। মি'রাজে আল্লাহর রসূল (সা) জাহান্নামে অধিক সংখ্যক নারীকে লক্ষ্য করেন। কারণ হিসেবে পর্দাহীনতা ও স্বামীর অবাধ্যচরণ অন্যতম বলেছেন। রসুলুল্লাহ (সা)-এর সময়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ছিল না। মানুষ শুনে শুনে দ্বীন শিখেছেন। এখানে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য তাদেরকে বলি। আল্লাহপাক ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। আসিয়াব সুদমুক্ত হয়ে বিনিয়োগ কার্যক্রম চালাতে চায়। এজন্য সততা দরকার। সৎভাবে জীবন যাপন এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে মিলেমিশে বসবাসের আহবান জানিয়ে আমার কথা শেষ করি। আল্লাহপাক আমাদেরকে তাঁর পথে চলাটা সহজ করে দিন।

Comments