Skip to main content

আর নয় লকডাইন, চাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন

লকডাউনের জ্বালা সহ্য করার মতো ক্ষমতা এদেশের সাধারণ মানুষের নেই। সাহায্য নয়, তারা কাজ করার সুযোগ চায়। ইদের আগে দোকানপাট ও বাজার খুলে দেয়া হলেও দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ, ট্রেন সব বন্ধ। ফলে ঘরেফেরা মানুষের কী অবর্ণনীয় কষ্ট কল্পনাও করা যায় না। বিত্তবানরা এই কষ্টের বাইরে। তাদের জন্য প্লেন, প্রাইভেট কার ও মাইক্রো চলাচলের অবাধ সুযোগ রয়েছে। ইদে ও পূজাপার্বণে মানুষ ঘরে ফিরবেই। সাধারণ মানুষ খুব কমই সপরিবারে শহরে বসবাস করে। এখন প্রশ্ন, যারা প্রচণ্ড ভীড়, গরম উপেক্ষা করে ঘরে ফিরলো, ওরা কি করোনা আক্রান্ত হবে? আমার ধারণা, একজনও না। যে কেউ বলতে পারেন, এতো জোর দিয়ে বলেন কীভাবে? এটি আমার পর্যবেক্ষণ ও আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস।

অন্যদের মতো আমিও সপরিবারে বাড়ি এসেছি। করোনা নিয়ে আমি নিজে যেমন সতর্ক তেমনি মানুষকেও সতর্ক করি। গত ইদুল ফিতর ঘরে আদায় করেছি এবং দীর্ঘদিন ঘরকেই মসজিদ বানিয়ে নিয়েছিলাম। বর্তমানে মসজিদে যাই এবং পুরো রমজান মাস মসজিদে ২০ রাকাত তারাবিহ আদায় করেছি। প্রতিদিনই করোনার আপডেট দিয়ে থাকি। করোনা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছি। প্রকাশ করলে একটি চমৎকার বই হতে পারে। করোনাকালে এর আগেও গ্রামে এসেছি। আমার বাড়ির পাশে বেশ বড় ধরনের পানহাট আছে এবং সেখানে প্রচুর লোক সমাগম হয়। এখানে করোনা নেই এবং মানুষের মাঝে কোনো ভীতিও নেই। মসজিদে যাই এবং বাজারেও ঘুরাঘুরি করি। মুখে মাস্ক আমি ছাড়া হয়তো আর ২/১ জন থাকতে পারে।

আমাদের ইউনিয়নে করোনায় কেউ মারা যায়নি (চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছ থেকে জানা)। পার্শ্ববর্তী মোকারিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে মেসেঞ্জারে জানতে চেয়েছিলাম। হয়তো তিনি খেয়াল করেননি। তবে তিনজনের মৃত্যুর কথা আমি জানি। তাঁদের বয়স ৭০ উর্ধে এবং সকলে ঢাকা শহরে বাস করতেন। তাঁদের একজন শিল্পপতি (গার্মেন্টস শিল্পের মালিক), বাকি দু’জন অবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজীবী। আমার ধারণা, গার্মেন্টসের শ্রমিক-কর্মচারী যারা গণপরিবহনে চলাচল করে এবং একসঙ্গে গাদাগাদি হয়ে কারখানায় কাজ করে ও বসতিতে বসবাস করে তারা কেউ মারা যায়নি। অনুসন্ধান চালালে দেখা যাবে, যারা ঘর থেকে বের হন না, মানুষের সংস্পর্শে আসেন না বা বাজার-ঘাট করেন না এবং সর্বদা এসিতে বসবাস করেন ও (তাঁদের ধারণা মতে) স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সংখ্যা তাঁদেরই বেশি।

লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষের সন্তানরা। বিশ্ববিদ্যালয় ও শহরের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে কিছুটা পুষিয়ে নিচ্ছে। গ্রামের শিক্ষার্থীরা সারাক্ষণ ঘরে মোবাইলে গেম খেলছে, নয়তো ঘুমে কাটিয়ে দিচ্ছে। ফলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে রোগী হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে পাবনার একটিতে হবে না প্রতি জেলায় মানসিক হাসপাতাল গড়ে তুলতে হবে। আমার পর্যবেক্ষণ ও উপলব্ধি তাই বলে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, ইদের পরে আপনি দয়া করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে করোনায় মৃত্যু ৬০ বছরের উর্ধ বয়সের (তাঁরা নানা জটিলতায় ভুগেন) এবং ৩০ বছরের নিচে খুব কমই রয়েছে। শিক্ষার্থী সবারই বয়স ত্রিশের নিচে এবং এরই মধ্যে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা করোনার টিকা নিয়ে ফেলেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোলা জায়গায় রৌদ্রে এসেম্বলি বাধ্যতামূলক করতে হবে। এই প্যারেড-পিটি তাদের করোনা থেকে সুরক্ষা দেবে ইনশা-আল্লাহ।

আমরা তো মৃত্যুকে এড়িয়ে চলতে পারবো না। বাংলাদেশে গতবছরে করোনায় মৃত্যু সংখ্যা মোট মৃত্যুর এক শতাংশ। করোনার কারণে লকডাউন ও নানা জটিলতায় হার্টএ্যাটাক, ব্রেনস্ট্রোক ও কিডনিজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ সনে যথাক্রমে ২০%, ৫০% ও ১০০% বৃদ্ধি পেয়েছে। বলবেন, করোনায় মৃত্যু বড় কষ্টকর। না, সব মৃত্যুই বড় পীড়াদায়ক, কোনো মৃত্যুই আরামদায়ক নয়। আল্লাহর রসুল (সা)-এর ঘোষণা মোতাবেক মহামারিতে ইমানদারের মৃত্যু শহীদের মৃত্যু। এটি বাড়তি লাভ। না, আমি কাউকে করোনায় মৃত্যু কামনা করতে বলছি না।

আমরা একটি বিশ্বাসী জাতি। আমরা সতর্ক হব কিন্তু মৃত্যু থেকে পালিয়ে জীবনকে সংকীর্ণ করে নেব না। আল্লাহর বাণী, ‘মৃত্যু তোমাকে ধরবেই ধরবে সুরক্ষিত দালানে থাকলেও।’ এবারে করোনা আমাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। আমরা যতো লুকাতে গেছি তত ধরা খেয়েছি। করোনার সাথে সাধারণ মানুষের গড়ে উঠেছে এক দোস্তিসম্পর্ক। রিক্সাচালক, কুলি-মজুর, বস্তিবাসী, খেটেখাওয়া ও গ্রামীণ জনপদের মানুষ করোনা থেকে অনেকাংশেই নিরাপদ। এগুলো আমাদের গবেষণায় আনতে হবে। করোনা সহসা যাবে না। করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস খুবই কার্যকর। করোনা নিয়ে আমেরিকাপ্রবাসী আমার ছেলের কিছু গবেষণা রয়েছে। ইউটিউবে কিছু ভিডিও দিয়েছে। সে বারবার বলতে চায়, এসি পরিহার করুন এবং এসিতে থাকতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করুন। বাংলাদেশে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে সে এসিকে দায়ী করে।

লকডাউন দিয়ে জনগণের জীবন-জীবিকাকে সংকীর্ণ না করে আমরা স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের ওপর গুরুত্ব প্রদান করি। স্বাস্থ্যবিধি বলতে মাস্ক ব্যবহার, পরিচ্ছন্ন থাকা, ভিটামিন সি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার (সর্দি-জ্বরে সাধারণত যা), গরম পানির বাষ্প গ্রহণ, দৈনিক কমপক্ষে আধাঘন্টা শারীরিক শ্রম/ব্যায়াম (অবশ্যম্ভাবী) এবং সম্ভব হলে গরম পানিতে গোসল (আমি নিজে সবসময় গরম পানিতে গোসল করি)। এতটুকু মেনে চললেই ইনশা-আল্লাহ আমরা করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে পারি। আর টিকা নিতে আমরা যেন অবহেলা না করি। টিকা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে। আমি নিজেও দুই ডোজ টিকা নিয়েছি। সর্বোপরি আল্লাহর প্রতি আস্থা ও নির্ভরতা। আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। হে আল্লাহ! তোমার সৃষ্ট করোনার মতো মহামারি থেকে তুমি আমাদের হেফাজত করো। আমিন। ১২.০৫.২০২১।

Comments