Skip to main content

জনভোগান্তি দূর হোক। আর নয় লকডাউন।

বাড়ি আসার পর দুই সপ্তাহে তেমন বের হয়েছিলাম না। ঈদের পরের দিন মাত্র একবার শ্বশুরবাড়ি এবং গতকাল গিয়েছিলাম কুষ্টিয়ায়। ঢাকায় ফিরে যাওয়াও দরকার। লকডাউন উঠে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।


আমাদের বাড়ি ভেড়ামার থানার অন্তর্গত বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া গ্রামে। এখানে আমাদের যাতায়াত সিএনজি ও অটোয়। গতকাল কুষ্টিয়া যেতে প্রথমে ভেড়ামারায় গেলাম সিএনজিতে এবং আমরা যাত্রী পাঁচজন। এখানে এটিই নিয়ম। অবশ্য ঢাকায় যাতায়াত করে তিনজন। গ্রামে করোনা না থাকায় মাস্ক ব্যবহারে তারা উদাসীন। পাঁচজনে আমরা দুজন মাস্ক পরিহিত ছিলাম।

ঈদের দুদিন ভাড়া জনপ্রতি ৪০/- টাকা নিলেও গতকাল ছিল স্বাভাবিক (৩০/- টাকা)। ঈদের দিন বেশি নেয়াকে অন্যায় মনে করি না। আমরা উৎসব ভাতা পেলে ওদেরও তো উৎসব রয়েছে। একটু বাড়তি ভাড়া দিতে যাত্রীরা তেমন আপত্তি করে না।

ভেড়ামারায় পৌঁছার পর বাস কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলাম। দূরপাল্লার বাস না চললেও কাউন্টার খোলা। জিজ্ঞেস করে জানলাম, তারা হায়েস ভাড়া করে লোকজন ঢাকা পাঠাচ্ছে। মন্দ কী? দুর্দশাগ্রস্থ মানুষকে কিছু হলেও উপকার করছে। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০০/- টাকা। যাত্রী নিচ্ছে ১৩ জন। মালামাল নেয়ার সুযোগ নেই। ঠাসাঠাসি বা চাপাচাপির কারণে করোনা কাছে ঘেঁষবে না, আমার ধারণা। আমার পর্যবেক্ষণ তাই বলে। বাজারে যারা সর্বক্ষণ অবস্থান করে, বসতিতে বসবাস করে, কারাগারে যারা বন্দী জীবন যাপন করে এবং যারা শ্রমজীবী, এরা সংক্রমিত হতে পারে কিন্তু করোনায় এরা অসুস্থ হয় না বা মারা যায় না। এই শ্রেণির মানুষের সাথে করোনার দোস্তি গড়ে উঠেছে। করোনা তো আল্লাহর সৃষ্টি, বাঘা বাঘা দেশ ও মানুষগুলোই যেন করোনার টার্গেট। হতদরিদ্র মানুষগুলোর কথা, ‘করোনা আমাদের কিছু করবে না’, কতবড় আত্মবিশ্বাস! সত্যিই হোক তাদের এই বিশ্বাস।

ভেড়ামারা থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক বাস পেলাম এবং সিটও পাওয়া গেল, তবে সেটা একেবারে শেষে। উঠার অল্প কিছু পরে দেখলাম, সকল সিটে যাত্রী, তারপরও দাঁড়ানো। ভাড়া নেয়ার সময় ৩০/- স্থলে ৫০/- টাকা চায়। বললাম, কেন? জবাব, সরকার ৬০% বাড়িয়েছে। বললাম, প্রতি সিটে দুইজন আবার দাঁড়ানো? শেষে ৪০/-টাকা। হয়তো এটিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। আমার পাশের জনের কাছে ভাড়া চাইলে সে বললো, উপরে আছে। অর্থাৎ ছাদেও যাত্রী। অফিস সময়, অনেক সময় হয়ে পড়ে বা কম ভাড়ায় যাওয়ার জন্য শ্রমজীবী মানুষ ছাদে উঠে।

এখন আমার জিজ্ঞাসা, দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ রাখা করোনা ঠেকানো না মানুষকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ উপভোগ করা। যারা সরকারকে বুদ্ধি-পরামর্শ দান করেন তাদের চলাচলের যান হলো প্লেন বা প্রাইভেট কার। কিন্তু মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ঠেলাঠেলি করেই যাতায়াত করতে হয়। এই শ্রেণির মানুষ পড়েছে সীমাহীন ভোগান্তিতে। তারা বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। আমার দেখা মতে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব এবং চলেও। ঢাকা শহরেই দেখেছি, সকল বাসে ৫০% যাত্রী (অর্থাৎ দুই সিটে একজন) ও শতভাগ মাস্ক পরিহিত।

দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ করে দেয়াতেও মানুষ ঠিকই যাতায়াত করেছে এবং কোনোরূপ স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলেছে। মাঝখানে পিষ্ঠ হয়ে প্রাণহানি, সীমাহীন ভোগান্তি ও বাড়তি অর্থব্যয় ঘটেছে। তাই সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ, লকডাউন আর না বাড়িয়ে ২৩ তারিখের পর দূরপাল্লাহর বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলে বাধা না দেয়ার জন্য। আল্লাহপাক আমাদেরকে করোনার মতো গজব থেকে হেফাজত করুন।

Comments