মসজিদ উত তাকওয়া, ধানমন্ডিতে আজ জুমায় খতিব মুফতি সাইফুল ইসলাম আল্লাহর হামদ ও রসুলল্লাহ (সা)-এর ওপর দরুদ ও সালাম পেশের পর মানবজাতির প্রতি আল্লাহ তায়ালার সীমাহীন নেয়ামত স্মরণ করে বলেন, এবারে করোনায় অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে শুধু অক্সিজেনের কথা চিন্তা করলেই কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে আসে। ভারত করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেখানে অক্সিজেনের অভাবে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন মানুষ সারাদিন যে পরিমাণ অক্সিজেন ভোগ করে তার বাজারমূল্য তিন লক্ষ টাকা। তাহলে আমরা আল্লাহর দেয়া ফ্রি অক্সিজেন জীবনে কী পরিমাণ ভোগ করছি।আসলে আমাদের মাঝে কৃতজ্ঞতাবোধ নেই।
রমজান মাস আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিতে চলেছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকটা অতিক্রম করেছে। আজ ১৭ রমজান। ঐতিহাসিক বদর দিবস। আরবের কাফির-মুশরিকরা ইসলামের আলো ফুতকারে নিভিয়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহ তা প্রজ্জলিত করেই ছাড়বেন। রসুলল্লাহ (সা) ও তাঁর সাথীদের ওপর সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনের পর এক পর্যায়ে হিজরতের পর মদিনায় তাঁরা একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন। আরবের কুফরি শক্তি নবগঠিত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য মহাসমারোহে গর্ব-অহঙ্কারের সাথে মদিনা আক্রমণ করেছিল। সাথে একহাজার সৈন্যের সুসজ্জিত বাহিনী। একশ ঘোড়া, বিপুল পরিমাণ উট ও যুদ্ধাস্ত্র ছিল। আর ইসলামের পক্ষে দুটি ঘোড়া, ৭০টি উট ও হালকা সাজসরঞ্জামসহ মাত্র ৩১৩ জনের এক ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে রসুলল্লাহ (সা) বদর প্রান্তরে মোকাবিলা করেন। রাতে রসুলল্লাহ (সা) দীর্ঘ সেজদাহে কান্নাকাটি ও দোয়া করেন এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে আল্লাহ তাঁকে বিজয়ের সুসংবাদ দান করেন। সাহাবিদের সুসংবাদ দেয়া হলে তাঁদের মাঝে সাহস-হিম্মত বেড়ে যায়। এই যুদ্ধে কাফিরদের উৎবা, শাইবা, আবু জেহেলসহ শীর্ষস্থানীয় সব নেতৃবৃন্দ নিহত হয়। বদরের প্রান্তরে বিজয়ের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। এই যুদ্ধটি ছিল মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রমজান মাসের শেষ দশক অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এতে রয়েছে লাইলাতুল কদর। কুরআনের কারণেই রাত ও মাস গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। রসুলল্লাহ (সা) শেষ দশক এতেকাফে কাটিয়েছেন। এতেকাফ অর্থ সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহর সান্নিধ্যে দশটি দিন অতিবাহিত করা। যারা ইতেকাফ করেন লাইলাতুল কদর তাদের নছিব হয়। যারা ইমান ও এহতেছাবের সাথে রোজা রাখবে আল্লাহ তাদের অতীতের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। আবার লাইলাতুল কদরে যারা রাত্রি জাগরণ করবে তাদেরও ক্ষমা করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য সবারই রাত্রি জাগরণ করা দরকার।
রমজানের সাথে জাকাতের সম্পর্ক না থাকলেও বছর হিসাব ও অধিক ছওয়াব লাভের আশায় রমজান মাসে অধিকাংশ লোক জাকাত আদায় করে থাকেন। জাকাত হিসাব করে আদায় করতে হবে এবং আল্লাহ তায়ালা নির্ধারিত খাতসমূহে ব্যয় করতে হবে। জাকাতের শাড়ি লুঙ্গি বলে কিছু নেই। আল্লাহর পথে খরচ করতে হলে উৎকৃষ্ট পণ্যই প্রদান করতে হবে। খরচ করলে সম্পদ কমে না। বরং আল্লাহ তায়ালা বাড়িয়ে দেন। ধনী-দরিদ্র সবাইকেই খরচ করতে হবে।
এই রমজান মাস গুনাহ মাফের সুযোগ নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে। আল্লাহর কাছে তাওবা- এস্তেগফারের মাধ্যমে গুনাহ মিটিয়ে ফেলে তাঁর একনিষ্ঠ বান্দা হিসেবে চলার জন্য তিনি তৌফিক কামনা করেন।
শ্রুতিলিখন : প্রফেসর
তোহুর আহমদ হিলালী।
Comments
Post a Comment