শ্বশুরবাড়ি এসে স্থানীয় মসজিদে ফজরের নামাজ আদায়ের পর মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলা হলো। সালাম বিনিময় শেষে প্রথমেই বললাম, আপনারা সবাই নির্ভেজাল মুসলিম। এর ভিত্তি হলো, রসুলল্লাহ (সা) বলেছেন, আমাদের ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য- এশা ও ফজরের সালাতে শরীক হওয়া। আপনারা এশা পড়েছেন আবার ফজরও পড়লেন। তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করলো সে যেন সারা রাত ইবাদতের মধ্যে কাটালো। এ-সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে রসুলল্লাহ’র (সা) মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের জন্য সুসংবাদ।
আপনারা সবাই পূর্ণ মাস রোজা পালন করেছেন। অতএব, আপনারা বেগুনাহ, গুনাহমুক্ত। আমার কথা নয়, প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা)-এর। তিনি বলেছেন, যারা ইমান ও এহতেছাবের সাথে রোজা পালন করবে আল্লাহ তাদের অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। আপনারা রোজা অবস্থায় ক্ষুধায় যতই কষ্ট পান গোপনে কিছুই খাননি, খাননি সেটি আল্লাহর ভয়ে এবং এরই নাম ইমান। আপনারা যদি মিথ্যা কথা, মিথ্যা সাক্ষ্যদান, ধোকা-প্রতারণা, ওজনে কমবেশি, ভেজাল প্রদান, গীবতসহ আল্লাহর নাফরমানিমূলক সকল কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেন তাহলে বলা যায় আপনাদের রোজা পালন সার্থক।
গুনাহ তাই যা আল্লাহ নিষেধ করেছেন তা করা এবং যা আদেশ করেছেন তা না করা। আল্লাহর এই আদেশ নিষেধ মেনে চলার নামই ইসলাম এবং যারা মেনে চলে তাদেরই বলা হয় মুসলিম। আমরা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম পালন করেছি, সেটি আল্লাহরই হুকুম এবং বাকি এগারোটা মাস তাঁরই হুকুমে ভালো কাজ সম্পন্ন করবো ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবো। তাহলেই আমরা জান্নাতে যাওয়ার উপযুক্ত হয়ে পড়বো।
আল্লাহ তাঁর বান্দাকে খুব ভালোবাসেন। শাস্তি দেয়া তাঁর অভিপ্রায় নয়। তিনি তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করতে চান। কোনো এক যুদ্ধে কিছু যুদ্ধবন্ধীর মধ্যে এক মহিলার সন্তান তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় সে কোনো বাচ্চা পেলেই জড়িয়ে ধরে ও আদর করে। এটি দেখে রসুলল্লাহ (সা) বলেন, সন্তান আগুনে পুড়ুক কোনো মা কি চান? সাহাবায়ে কেরাম বলে উঠেন, কখনই নয়। তখন তিনি বলেন, আমার আল্লাহ এই মা'র চেয়েও অনেক দয়ার্দ্র। তাঁকে অস্বীকারকারী, বিদ্রোহী ও হুকুম অমান্যকারী পাপিষ্ঠদেরকেই তিনি কেবল জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
মানুষের দ্বারা ভুল-ত্রুটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। ভুল হলেই মানুষকে জাহান্নামে দিবেন এমনটি নয়। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রথম মানুষকে দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন। আদম (আ) ও ইবলিস দু'জনই আল্লাহর নাফরমানি করে। ইবলিস আল্লাহর হুকুম আদম (আ)-কে সেজদা না করে নাফরমানি করে আর আদম (আ) আল্লাহর আদেশ 'গাছের নিকটেও যেও না'- এই হুকুম অমান্য করেন। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য, ইবলিস বড়াই করে, ভুল স্বীকার করে না ও নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে। পক্ষান্তরে আদম (আ) তাৎক্ষণিক ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হন। এটিই মানবপ্রকৃতি। তিনি আদম (আ)-কে কেবল ক্ষমা করেননি, নবুয়তি দিয়েও ভূষিত করেছেন।
আমরা সর্বদা আল্লাহর হুকুম মেনে চলার চেষ্টা করবো এবং কখনো ভুল হলে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ফিরে আসবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সম্পর্কে বলেছেন, তারা বারবার তাওবাকারী। আর একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাহলো আমরা অবশ্যই হিংসা ও বিদ্বেষ মুক্ত হবো। হিংসা জঘন্য অপরাধ। আল্লাহর রসুল (সা) বলেছেন, হিংসা মানুষের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয় যেমন আগুন শুকনা কাঠ জ্বালিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আল্লাহ নিজে হিংসুকের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁর কাছে আশ্রয় চাওয়ার কথা বলেছেন (সুরা ফালাক)। সাথে সাথে আমরা মানুষকে ক্ষমা করবো। বিনিময়ে আমাদের লাভ, আল্লাহও আমাদের ক্ষমা করবেন। এটি রসুলল্লাহ’র (সা) কথা।
তাই আসুন, মানুষের জন্য ক্ষতিকর আল্লাহর নাফরমানিমূলক সকল কাজ, কথা ও আচরণ পরিহার করে আমরা তাঁর অনুগত বান্দা হয়ে চলি এবং নিজেদেরকে জান্নাতের উপযুক্ত করে গড়ে তুলি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কবুল করুন। ১৬.০৫.২০২১
Comments
Post a Comment