Skip to main content

ঈদ বক্তৃতা ১৪.০৫.২০২১

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া যে, তিনি দয়া করে সুস্থতার সাথে আমাদের দুরাকাত নামাজ আদায়ের তৌফিক দান করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ।

ঈদের নামাজ খোলা ময়দানে হওয়ারই নিয়ম। আমাদের পাশেই রয়েছে ঈদগাহ। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনায় বিপর্যয়কর অবস্থার প্রেক্ষিতে সরকারি বিধি মোতাবেক স্বল্প পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে আদায় করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। দোয়া করি, আল্লাহপাক যেন আগামীতে এমন অবস্থা থেকে আমাদের রেহাই দেন। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া যে আমাদের ইউনিয়নে করোনার প্রকোপ নেই। এখানে কারো মধ্যে করোনাভীতিও নেই। শ্রমজীবী মানুষ অনেকাংশেই করোনা থেকে রেহাই পাচ্ছে। শারীরিক শ্রমবিমুখ এসিতে অবস্থানকারী বয়স্ক মানুষগুলো বেশি করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। করোনায় মহিলাদের মৃত্যুহার ৩০%। মহিলাদের মধ্যে যারা রান্নাবান্না ও শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের ঝুঁকি অনেক কম। আপনারা সবাই টিকা নিন। আমরা দুই ডোজই নিয়েছি এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। যারা দুই ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন তাদের শরীরে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা (এন্টিবডি) ৯৭% ( ICDDR-এর গবেষণা)।

রমজানের রোজা আমাদের গুনাহ মুক্ত করেছে। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যারা ইমান ও এহতেছাবের সাথে রোজা পালন করবে আল্লাহ তাদের অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। আমরা আল্লাহর জন্যই রোজা রেখেছি। ক্ষুধা ও পিপাসায় ক্লান্ত হয়েছি কিন্তু লোকচক্ষুর অগোচরে কিছু পানাহার করিনি এবং করিনি সেটা আল্লাহরই ভয়ে; এটিই আল্লাহর প্রতি আমাদের ইমান। রোজার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন, তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহর ভয় সৃষ্টির লক্ষ্যেই তিনি মাসব্যাপী রোজা পালন ফরজ করেছেন। নিষেধের কারণে রোজার দিনে হালাল খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ থেকে আমরা বিরত ছিলাম এবং সেটি একদিন দুদিন নয়, দীর্ঘ একটি মাস। এখন প্রশ্ন, আল্লাহপাক আমাদের জন্য যেসব জিনিস বা কাজ স্থায়ীভাবে হারাম করেছেন তা কি কোনো মোমিন কখনই করতে পারে? না, পারে না এবং সেটি সম্ভব হলেই আমাদের রোজা পালন সার্থক হবে; আমরা হবো গুনাহমুক্ত।

ঈদুল ফিতর রোজা ভাঙ্গার আনন্দ এবং নিজেদের জীবন থেকে বদভ্যাস দূরীকরণে এক বিজয়ের আনন্দ। রোজাদাররা যখন তাকবির পড়তে পড়তে ঈদগাহের দিকে এগিয়ে যায় ফেরেশতারা তখন তাদের অভিবাদন জানাতে থাকে এবং নামাজ শেষে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তির ঘোষণা দিতে থাকে। সত্যিই রোজাদাররা বড় ভাগ্যবান। আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হবে, আমরা আর গুনাহে জড়াবো না। গুনাহ তাই, আল্লাহ যা আমাদের জন্য হারাম করেছেন তা করা এবং যা করতে আদেশ করেছেন সেটি না করা। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর সবই হারাম। সুদ, ঘুষ, জেনা-ব্যাভিচার, পর্দাহীনতা, মিথ্যা বলা, গীবৎ, হিংসা-বিদ্বেষ, ওজনে কম-বেশি করা, ভেজাল দেয়া, ধোকা-প্রতারণা, জুলুম-নির্যাতন সবই ঘৃণ্য এবং কবিরা গুনাহ। আমাদের জীবনে এসব গুনাহের পুনরাবৃত্তি না হলেই রোজা সার্থক হবে এবং আমরা জান্নাতের উপযুক্ত হয়ে পড়বো।

আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের ক্ষমা করতে চান এবং ক্ষমা করার নানা উপায় অবলম্বন করেন। বিশেষ বিশেষ দিনে আল্লাহ তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন। কিন্তু যার মধ্যে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ রয়েছে সে আল্লাহর ক্ষমার বাইরে। আমাদের দেশে হিংসা-বিদ্বেষের চাষ হয়। দেশে গুম-খুন ও অত্যাচার-নির্যাতনের বড় কারণ বিদ্বেষ। রাজনৈতিক নেতা, আলেম-উলামা ও সাধারণ মানুষ কেউ হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত নয়। ভাইয়ে ভাইয়ে, পাড়া-প্রতিবেশি, অফিস, ব্যবসা সর্বত্রই হিংসা-বিদ্বেষ। হিংসা-বিদ্বেষ কবিরা গুনাহ, শুধু এতটুকু নয়, তার চেয়েও বেশি। রসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠ জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেয়, তেমনি হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। হিংসুকের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের তাঁর কাছে সাহায্য কামনার কথা বলেছেন (সুরা ফালাক)।

ঈদ আমাদের মাঝে সৌহার্দ্র-সম্প্রীতি নিয়ে আসে। ঈদের জামাতে আমরা পরস্পর মিলে গভীর ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমরা ভুলে যাই সকল ভেদাভেদ ও হিংসা-বিদ্বেষ। আমরা পরস্পরকে ক্ষমা করি, তাতে আল্লাহপাক কেয়ামতের দিন আমাদের ক্ষমা করবেন। ক্ষমা করতে পারলেই আমরা হিংসা-বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হতে পারবো এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করতে পারবো।

আমাদের ইমাম-মুয়াজ্জিন অত্যন্ত সম্মানের পাত্র। নামাজে আমাদের কোনো ভুল নেই, ভুল তখনই হয় যখন তাঁদের আনুগত্য-অনুসরণে কোনো ব্যত্যায় ঘটে। ইমাম-মুয়াজ্জিন আমাদের নেতা, অথচ তাঁদের জীবন অত্যন্ত কষ্টের, আর্থিক সচ্ছলতা তাঁদের জীবনে নেই। আপনাদের দানে মসজিদ চলে এবং মসজিদে আয়-রোজগার থেকে তাঁদের সম্মানী দেয়া হয়। আপনারা আজ ঈদের দিন উদার হস্তে মসজিদ ও ইমাম সাহেবকে দান করবেন। দুনিয়ার জীবনে যেটি দান করবেন সেটিই আপনার, আর যেটি রেখে যাবেন সেটি উত্তরাধিকারদের।

রমজানের অছিলায় আল্লাহপাক আমাদের গুনাহমুক্ত করুন এবং বাকি জীবন তাঁর পথে চলাটা সহজ করে দিন। আমিন।

 

Comments