‘তোমরা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ ফেরাও তাতে কোন পুণ্য নেই, বরং সৎকাজ হচ্ছে এই যে, মানুষ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতা, আল্লাহর অবতীর্ণ কিতাব ও নবীদেরকে মনেপ্রাণে মেনে নেবে এবং আল্লাহর ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রিয় ধন-সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্ত কাজে ব্যয় করবে। আর নামায কায়েম করবে এবং যাকাত আদায় করবে। যারা প্রতিশ্রুতি দিলে তা পালন করে, ক্ষুধা-দারিদ্র, বিপদে-আপদে এবং হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব-সংগ্রামে পরম ধৈর্য অবলম্বন করে-এরাই হচ্ছে সত্যবাদী এবং এরাই হচ্ছে প্রকৃত মুত্তাকী’-সূরা বাকারা ১৭৭
মুসলমানদের কিবলা পরিবর্তনে ইহুদী ও মুনাফিকদের সমালোচনার জবাবে আল্লাহ বলেন পূর্ব ও পশ্চিমের মালিক তিনি এবং স্রেফ আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। বেছে বেছে ধার্মিকতার কিছু বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠান পালন করা এবং তাকওয়ার কয়েকটি পরিচিত রূপের প্রদর্শনী করা আসলে সৎকাজ নয় এবং আল্লাহর কাছে এর খুব একটা মূল্যও নেই। বরং নিষ্ঠাপূর্ণ ঈমান ও ঈমানের বহিঃপ্রকাশ তার আমলের মাধ্যমে তাকওয়ার প্রকাশ ঘটে। এখানে আল্লাহতায়ালা প্রথমেই ঈমানের কতিপয় মৌলিক বিষয়ের কথা বলেছেন।
ঈমান ও আমলের সম্পর্ক বীজ ও বৃক্ষের সাথে। মাটিতে বীজ বপন করা হলে সেখানে চারা গজায়। আর যদি চারা না গজায় বুঝতে হবে বীজ ত্রুটিপূর্ণ বা পচে গেছে বা কোনো পাথরখন্ডের নীচে চাপা পড়েছে। ঈমানের বিষয়টিও তেমনি। কারো অন্তরে ঈমান থাকলে তার দ্বারা অবশ্যম্ভাবী কেবল সৎ ও কল্যাণকর কাজই সাধিত হয়। সমাজের জন্য অকল্যাণকর বা আল্লাহর নাফরমানিমূলক কাজ সাধিত হওয়া ঈমানদারের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।
এখানে আল্লাহতায়ালা নমুনাস্বরূপ কিছু সৎকাজের কথা উল্লেখ করেছেন। ঈমান আনায়নের পর পরই মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। মানুষের অর্জিত সম্পদের মধ্যে তার নিজের ও পরিবারের সাথে সমাজের আরো অনেকের হক রয়েছে এবং এ ব্যয় হতে হবে একান্ত আল্লাহর ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, কোনো বিনিময়ের আশা ছাড়াই। ব্যয়ের ক্ষেত্রে আল্লাহপাক অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছেন এভাবে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও দাসমুক্ত কাজে। এর পরপরই নামায কায়েম ও যাকাত আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, যাকাতের বাইরেও মানুষ অকাতরে আল্লাহর বান্দাদের প্রয়োজনে ব্যয় করবে।
মুত্তাকী চরিত্রের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তারা প্রতিশ্রুতি প্রদান করলে তা পূরণ করে। মুসলিম জীবনে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ অকল্পনীয়। এটা মুনাফিকদের আচরণ; কোনো মুসলমান তা পারে না। ব্যাংকে ঋণখেলাফী বা রাজনীতি ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা যদিও সাধারণ ব্যাপার হয়ে পড়েছে; কিন্তু আসলে তা ঈমানহীনতারই পরিচায়ক।
মুত্তাকী ব্যক্তির জীবনে ক্ষুধা-দারিদ্র ও বিপদাপদ ধেয়ে আসে এবং যেহেতু সে সত্যপথের পথিক তাই বাতিলশক্তি তাকে সমূলে উৎখাত করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকে। মানব সভ্যতার শুরু থেকে সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব-সংগ্রাম চলে আসছে। একদিকে রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নবী-রসূল ও তাঁদের সঙ্গী-সাথী এবং বিপরিত পক্ষে রয়েছে তাগুতের পক্ষাবলম্বনকারী কাফির ও মুনাফিক শক্তি।
দ্বন্দ্ব-সংগ্রাম থেকে নিজেকে দূরে রেখে নির্ঝঞ্জাট জীবন-যাপন বা বাতিলের সাথে আপোষরফা বা ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের অভাব-অনটন দূর করার মতো ঈমানবিধ্বংসী আচরণ থেকে মু’মিন অনেক দূরে অবস্থান করে, বরং সকল প্রতিকূল অবস্থায় সে পরম ধৈর্যাবলম্বন করে। আল্লাহপাক সাক্ষ্য দিচ্ছেন, এ সব লোকই সত্যবাদী এবং এরাই মুত্তাকী। ১৫.১২.২০২০
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment