Skip to main content

বিপদ-মুসিবত সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে

কুরআনের পাঠ বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ‘আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া কখনো কোনো বিপদ-মুসিবত আসে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে আল্লাহ তার দিলকে হেদায়াত দান করেন। আল্লাহ সবকিছু জানেন’- সূরা তাগাবুন ১১। নাযিলের সময়কাল ও নামকরণ : অধিকাংশের মতে সূরাটি মাদানী এবং হিজরতের পর পরই অবতীর্ণ। সূরার ৯নং আয়াত ‘যালিকা ইয়াওমুত তাগাবুন’ থেকে নামকরণ করা হয়েছে। কিয়ামতের দিবসটিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, সে দিনটি হবে পরস্পরের হার-জিতের দিন। দুনিয়ার নাম-যশ-খ্যাতি, সৌন্দর্য, মেধা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অর্থবিত্ত কোনো কিছুই সেদিন হারজিতের মাপকাঠি হবে না। ঈমান ও নেক আমলে যে সমৃদ্ধ সেদিন সেই সত্যিকার জয়ী হবে। আর যে ব্যর্থ হবে সে চিরদিনের জন্য হেরে যাবে। ব্যাখ্যা : মক্কায় বছরের পর বছর জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পর সবকিছু ছেড়ে মদীনায় আশ্রয় নিয়েছিলেন রসূল (সা) ও তাঁর সাথীরা। মুহাজিররা ছিলেন সম্বলহীন ও চরম বিপদগ্রস্ত এবং বিপদ মদীনাবাসীদেরও কম ছিল না। বিপুল পরিমাণ মুহাজিরকে আশ্রয় প্রদান ও তাঁদের ভরণ-পোষণ ছাড়াও সমগ্র আরব তাঁদের শত্রু হয়ে পড়েছিল এবং এই উদীয়মান শক্তিকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য আরবরা ছিল বদ্ধপরিকর। এমন সময় আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এই সূরাটি নাযিল হয়। বিপদাপদ ও দুঃখ-কষ্ট নিজে থেকে আসে না বা কেউ কারো ওপর চাপিয়েও দিতে পারে না। আল্লাহর অনুমতিক্রমেই আসে। যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করে সে জানে, এ বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং দূর করার ক্ষমতা তাঁরই রয়েছে। তাই বিপদাপদে সে ঘাবড়ায় না বরং ধৈর্য অবলম্বন করে এবং বিপদ থেকে উত্তরণের জন্য আল্লাহর কাছেই ধর্ণা দেয়। আল্লাহতায়ালা পরীক্ষায় ফেলে তাঁর বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করতে চান। রসূল (সা) বলেন-‘আল্লাহর বান্দার জন্য উভয় অবস্থাই কল্যাণকর। ভালো কিছু হলে সে শুকরিয়া আদায় করে এবং বিপদাপদ আসলে ধৈর্য অবলম্বন করে’। পরীক্ষাগ্রহণ আল্লাহর স্থায়ী নিয়ম। তিনি তাঁর বান্দাদের নানাভাবে পরীক্ষা নেন। সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন নবী-রসূলগণ। রোগ-শোক, স্বামী/স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র নানাভাবে পরীক্ষা আসতে পারে। আল্লাহর বাণী, ‘আমরা অবশ্যই ভয়-বিপদ-অনশন-জানমালের ক্ষতি ও আমদানি হ্রাসের দ্বারা পরীক্ষা করবো। এ সব বিপদ-মুছিবত উপস্থিত হলে যারা ধৈর্য অবলম্বন করে এবং বলে যে আমরা আল্লাহরই জন্য এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাব-তাদের জন্য সুসংবাদ’-বাকারা ১৫৫-১৫৬। আমাদের প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ (সা)-এর জীবনে পরীক্ষার পর পরীক্ষা। পুত্র সন্তানগুলো অতি শৈশবেই একের পর এক ইন্তেকাল করেন। বিপদে কোনো সমবেদনা নয় বরং নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনসহ কাফিরদের আনন্দ-উল্লাস এবং নিপীড়ন-নির্যাতন তো বলার নয়। তিনি সবকিছু নীরবে সহ্য করেছেন। আল্লাহপাক নিজে নবীকে (সা) সান্ত্বনা দিয়েছেন। একজন মু’মিনের জন্য জেল-জুলুম শত নির্যাতন এমন কি ফাঁসির মঞ্চও হিম্মতহারা করে না বরং আল্লাহর ওপর ঈমানকে আরো মজবুত করে। সেতো মনে করে এ দুনিয়ার জীবন শেষ হওয়ার সাথে সাথে সে তার অভিভাবক ও পরম বন্ধু মহান আল্লাহতায়ালার কাছেই ফিরে যাবে। পক্ষান্তরে একজন অবিশ্বাসী বিপদাপদে ঘাবড়ে যায় এবং বাঁচার তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়ে ব্যর্থ হলে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে বসে। মু’মিন তার তকদীরে বিশ্বাসী। কোনো বিপদকে সে বিপদ মনে করে না। মনে করে তার মহান মালিকের পক্ষ থেকে পরীক্ষা এবং এর মাঝে অবশ্যই কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ সবকিছু জানেন-এই কথা দ্বারা আল্লাহ স্পষ্ট করতে চান, তিনি তাঁর বান্দাকে বিপদে ফেলে আড়ালে চলে যাননি। সবকিছু তিনি দেখছেন এবং বান্দার ধৈর্যে তিনি খুশি হয়ে উত্তরণের ব্যবস্থা করে দেন। আল্লাহ দেখছেন-এই কথা বান্দাকে আশ্বস্ত করে এবং সে উপলব্ধি করে, বিপদে সে একা নন বরং আল্লাহপাকের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে সে রয়েছে। বিপদাপদে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে তাঁরই কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন। তাঁর বাণী, ‘হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’-বাকারা ১৫৩। মু’মিনের একমাত্র ভরসা ও চাওয়ার জায়গা মহান আল্লাহ এবং নামাযে বিশেষ করে সেজদায় সে আল্লাহর খুব নিকটবর্তী হয়ে যায়। তাই বিপদাপদ থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বান্দাহ নামাযে বিশেষ করে সেজদায় গিয়ে তার রবের কাছে কাতরভাবে তার আর্জি পেশ করে। নামাযীদের সাথে আছেন না বলে ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন-এ কথা দ্বারা আল্লাহ বোঝাতে চাচ্ছেন দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তাঁর কোনো বান্দারই (বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী) শ্রম বৃথা যেতে দেন না। যে কেউ পরম নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা নিয়ে কোনো কাজ করলে এবং এ ব্যাপারে ধৈর্য অবলম্বন করলে আল্লাহপাক তাকে সাফল্য দান করেন। যারা বিভিন্ন গবেষণাকর্মে নিয়োজিত, তারা বছরের পর কাজে লেগে থাকে এবং তাদের অসীম ধৈর্যের ফলশ্রুতিই বিভিন্ন আবিষ্কার। বিপদাপদ মু’মিনকে আল্লাহমুখী করে। আল্লাহর শেখানো কথাই আমরা বলি, হে আমাদের রব, তুমি আমাদের ওপর এমন বিপদ দিও না যা আমরা সহ্য করতে না পারি। তুমি আমাদের মাওলা ও অভিভাবক, আমরা যেন তোমারই ওপর ভরসা করি। তুমি আমাদেরকে তোমার ধৈর্যশীল বান্দাদের দলভুক্ত করে নাও। আমিন। ০১.১২.২০২০।

Comments