রাত ও দিনের আবর্তন আল্লাহপাকের নিদর্শনাবলীর অন্যতম

এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী : ‘এবং তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাতের বেলা তোমাদের নিদ্রা আর দিনের বেলা জীবিকা অর্জন। অবশ্যই শ্রবণশক্তিসম্পন্ন জাতির জন্য এতে আছে নিদর্শন’। সূরা রূম ২৩ ‘এবং আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি বিশ্রাম, রাতকে করেছি আবরণ এবং দিনকে করেছি তোমাদের জীবিকা আহরণের সময়’। সূরা আন নাবা ৯-১১ ‘এবং তিনিই তোমাদের জন্য রাতকে করেছেন আবরণস্বরূপ, আরামের জন্য তোমাদের দিয়েছেন নিদ্রা এবং কার্যক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য দিয়েছেন দিন’। সূরা ফুরকান ৪৭ ‘তিনিই তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন রাত ও দিনের যাতে তোমরা বিশ্রামও নিতে পারো আবার জীবিকা অর্জনেও তৎপর হতে পারো এবং তোমরা যেন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো’। সূরা আল কাসাস ৭৩ ‘তারা কি অনুধাবন করে না, আমি রাতের ব্যবস্থা করেছি যেন তারা বিশ্রাম নিতে পারে এবং দিনকে করেছি আলোকপ্রদ (যেন তারা জীবিকা অর্জনে তৎপর হতে পারে)? বিশ্বাসী ব্যক্তিগণের জন্য অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে’। সূরা আন –নমল ৮৬ সাধারণত রাতকে আল্লাহপাক বিশ্রাম (নিদ্রা) এবং দিনকে করেছেন কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। আল্লাহর রসূল (সা)-এর আমলও ছিল এমনটি। মুহাম্মদ (সা) সাধারণত এশার নামাযের পর ঘুমিয়ে পড়তেন এবং মাঝরাত অতিক্রম করার পর উঠে তাহাজ্জুদ নামায আদায় শেষে একটু বিশ্রাম নিয়ে ফজরের নামাযের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হতো। যোহরের নামাযের পর দুপুরের খানা গ্রহণ শেষে সামান্য বিশ্রামও নিতেন। রসূলুল্লাহ (সা)-কে অনুসরণের ক্ষেত্রে এভাবে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করা সুন্নাহরই অংশ। ইউরোপ-আমেরিকার মানুষের জীবন-যাপন অনেকখানি রসূল (সা)-এর সুন্নাহ মোতাবেক। দুর্ভাগ্য, আমাদের জীবনপ্রণালী প্রিয়তম নবী (সা) থেকে অনেক দূরে। শহরের জীবনে শতকরা ৮০ জনের ঘুম ভাঙ্গে সকাল ১০/১১ টায় (চাকুরিজীবীরা স্বতন্ত্র)। শুধু শহর নয় গ্রামীণ জীবনও এমন হয়ে পড়েছে। আমরা আমাদের স্কুলজীবনে Early rising, Discipline, Aim in life রচনা পড়েছি এবং ধরে নিয়েছি এই তিনটি পড়লে পরীক্ষায় একটি পাওয়া যাবে। এছাড়া নীতিকথা বা Translation শেখানো হতো Early rising is good for health; Walking in the morning is good for health; Early to bed, early to rise makes a man healthy, wealthy and wise. এখন মনে হয়, আমাদের শিক্ষকরা এ-সব আর শেখান না। আল্লাহপাক স্বয়ং তাঁর বান্দাদের রাত ও দিনের পার্থক্য শিখিয়েছেন এবং তাঁর রসূল (সা) আমল করে দেখিয়ে দিয়েছেন। রাতে ঘুমানো (বিশ্রাম) ও দিনে কাজ-এটি ফিতরাত, মানবজীবনের স্বাভাবিক দাবী, ব্যতিক্রম প্রকৃতিবিরোধী এবং আল্লাহ ও রসূল (সা)-এর সুন্নাহ পরিপন্থি। আসুন, আমরা সবাই আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সা)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করে সুস্থ শরীর ও প্রশান্ত মন এবং কর্মময় জীবন গড়ে তুলি। আল্লাহপাক আমাদেরকে কবুল করুন। আমিন। ২১.১২.২০২০