‘(হে নবী!) তারা যদি এ কথার ওপর ঈমান না আনে তাহলে মনে হয় দুঃখ-কষ্টে এদের পেছনে পড়ে তুমি নিজেকেই বিনাশ করে দেবে’- সূরা কাহফ ৬।
ফজর পড়ে সূরা কাহফ বড়তে গিয়ে ৬ নং আয়াতটিতে আটকে গেলাম। ভাবলাম, বন্ধুদের সাথে একটু শেয়ার করি।
সকল নবীকে একই মিশন দিয়ে আল্লাহপাক দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। তাঁদের মৌলিক কাজ ছিল মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা। সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের পথে মানুষকে পরিচালনা করা। আল্লাহপাক তাঁদেরকে সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের দাওয়াত যারা কবুল করবে তাদের জন্য সুসংবাদ হিসেবে অফুরন্ত নেয়ামতেভরা জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে; পক্ষান্তরে যারা অমান্য করবে তাদেরকে জাহান্নামের ভয় দেখানো হয়েছে।
অধিকাংশ নবী-রসূল ও তাঁদের সঙ্গী-সাথীরা সীমাহীন নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছেন। নবী মুহাম্মদ (সা) ব্যতিক্রম নন। আল্লাহর পথে ডাকার সাথে সাথে তাঁর পরিবারের লোকজনসহ জাতির কাছ থেকে তিনি বাধাপ্রাপ্ত হন। অত্যাচারে টিকতে না পেরে সাথীদের আবিসিনিয়ায় পাঠিয়ে দেন। এতো অত্যাচার-জুলুম তাঁকে হতাশ করেনি, কিন্তু তিনি হতাশ ও দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়েছেন তাঁর জাতির দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে জাহান্নামের পথে দ্রুত ধাবিত হওয়ার জন্য।
নবীর (সা) এই পেরেশানি দূর করার জন্য আল্লাহপাক সূরা কাহফের ৬ নং আয়াতে সে কথাটিই বলেছেন। আল্লাহ তাঁকে সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে উল্লেখ করে ঈমান আনার বিষয়টি একান্ত আল্লাহর মর্জি বা অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ নবী-রসূল ও দ্বায়ীদের চরিত্রকে এভাবেই চিত্রায়িত করেছেন। সূরা ইয়াসিনে বলা হয়েছে, তাঁরা নিজেরা হেদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং কোনো বিনিময় চান না। তিনজন রসূলের প্রচেষ্টায় একজন ব্যক্তি ঈমান আনার পর ছুটে যান তাঁর জাতির কাছে। দাওয়াত দানের প্রেক্ষিতে জাতির লোকেরা তাঁকে হত্যা করে। সেই মুহূর্তেও কোনো অভিশাপ বা অকল্যাণ কামনা নয়, বরং তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছে- ‘হায়! আমার জাতির লোকেরা যদি বুঝতো কিসের বদৌলতে আমার রব আমাকে ক্ষমা করলেন ও সম্মানিত লোকদের মধ্যে গণ্য করলেন’।
মুহাম্মদ (সা)-এর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে দাওয়াত প্রত্যাখ্যানকারী প্রত্যেকের পরিণতি জাহান্নাম। ফলে দাওয়াত কবুলের জন্য তিনি উঠেপড়ে লেগেছিলেন। তিনি নিজেই তাঁর অবস্থান এভাবে ব্যক্ত করেছেন, ‘আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন এক ব্যক্তির মতো যে আলোর জন্য আগুন জ্বালালো কিন্তু পতংগরা মরার জন্য তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করলো। সে এদেরকে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে কিন্তু এ পতংগরা তার কোনো প্রচেষ্টাকেই ফলবতী করতে দেয় না। আমার অবস্থা অনুরূপ। আমি তোমাদের হাত ধরে টান দিচ্ছি কিন্তু তোমরা আগুনে লাফিয়ে পড়ছো’-বুখারী ও মুসলিম।
একজন দ্বায়ী ইলাল্লাহর এই হলো চরিত্র। কোনো হিংসা-বিদ্বেষ বা প্রতিশোধ নয়, বরং জাহান্নাম থেকে আল্লাহর বান্দাদের ফিরিয়ে আনাই তার সকল কর্ম-প্রচেষ্টা। এটি তখনই সম্ভব যখন দ্বায়ী ইলাল্লাহ উপলব্ধি করবে যে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োজিত এবং তিনি সবকিছু দেখছেন ও পুরস্কার দানের ক্ষমতা তাঁর। আবার দাওয়াত অস্বীকারকারীর আচরণ ও দ্বায়ী ইলাল্লাহর প্রতি জুলুম-নির্যাতন আল্লাহর জানা এবং প্রতিশোধ গ্রহণেও তিনি সক্ষম। তাই দ্বায়ী ইলাল্লাহ নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে প্রশান্তির জীবন সহজেই অতিবাহিত করতে পারে। ১৮.১২.২০২০।
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment