Skip to main content

মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি : সম্মান ও মর্যাদায় অনেক উচ্চে

আল্লাহর বাণী - বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ‘নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল ও পেছনে দোষ প্রচার করে’- সূরা হুমাযা। মানুষের জীবন, অর্থ-সম্পদ ও মান-ইজ্জত-সম্মান অত্যন্ত পবিত্র। কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। মারপিট বা হত্যা করা অনেক পরের কথা, একটু গালিও দেয়া যায় না। আল্লাহর রসূল (সা) বলেছেন, গালি দেয়া ফাসেকি এবং হত্যা করা কুফুরি। এখানে আল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে মানুষকে অপমান করে, লাঞ্ছিত করে, হেয়-তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বা অসাক্ষাতে নিন্দা করে (গীবত) বা যে কোনোভাবে সম্মান বিনষ্ট করে তার ধ্বংস অনিবার্য। তার বাঁচার কোনো উপায় নেই। হ্যাঁ, কেবল তখনই সম্ভব, যখন যার সম্মান হানি করা হয় তার কাছ থেকে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে তাওবা করা হয়। এদের পরিণতি বলা হয়েছে, তাদেরকে হুতামা অর্থাৎ চূর্ণ-বিচূর্ণকারী স্থানে নিক্ষেপ করা হবে। এর ভয়াবহতা ও আল্লাহর চরম ক্রোধ প্রকাশার্তে বলা হয়েছে, সেটি আল্লাহর আগুন, প্রচন্ডভাবে উত্তপ্ত-উৎক্ষিপ্ত। পরকালে বিশ্বাসী একজন মুসলমানের পক্ষে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ঐ ব্যক্তি মু’মিন নয়, মু’মিন নয়, মু’মিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়। কেউ যদি ইসলামের নামে সন্ত্রাস করে বা কেউ যদি কোনো মুসলমানকে সন্ত্রাসী বলে, বুঝতে হবে দু’জনের কেউ ঈমানদার নয় বা কারো সাথে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই, এরা ইসলামের দুশমনদের ভাড়াটে, তাদের ক্রীড়নক। সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করা বা হত্যা করা জঘন্যতম অপরাধ; কুরআনের ভাষায় একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করার শামিল। মানুষের প্রাপ্য পুরোপুরি আদায় করে দেয়া ফরজ। প্রাপ্যের চেয়ে কম দেয়া, সেটি হতে পারে ওজনে কম দেয়া, ভেজাল দেয়া, ধোঁকা-প্রতারণা করা বা নানা কৌশল অবলম্বন করে অপরের প্রাপ্য অত্মসাৎ করা সবই কবীরা গুনাহ। কোনোভাবেই মানুষকে কষ্ট দেয়া বা অধিকার হরণ করা নিকৃষ্টতম গুনাহ। আখিরাতে প্রত্যেকের পাওনা মানুষের নেক আমল দ্বারা পরিশোধ করতে হবে এবং যখন নেক আমল শেষ হয়ে যাবে তখন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির গুনাহ তার আমলনামায় দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সাধারণত সমাজে সম্পদশালী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই মানুষকে সম্মান দানে কুণ্ঠাবোধ করে। রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট থেকে বিনয় ও নম্রতা এখন আর আশা করা হয় না, প্রতিপক্ষের প্রতি নগ্নভাবে জুলুম-নির্যাতন করে তারা যেন আনন্দ পায়। অফিস-আদালতে ঘুষ-দুর্নীতি সবই মানুষের অধিকার হরণ ও কবীরা গুনাহ। এ-সব অপরাধের সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তারা সবাই জালেম; আর আল্লাহপাক জালেমদের জন্যই প্রস্তুত রেখেছেন দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন। শিরক আল্লাহর অধিকার হরণ, সবচেয়ে বড় জুলুম। পেছনে দোষ প্রচার করা (গীবত) এক ভয়াবহ গুনাহ। এর দ্বারা মানুষের সম্মান হানি হয়। মি’রাজে তাঁকে দেখানো হয়েছে, একদল মানুষ তামার নখের সাহায্যে মুখমন্ডল খামছিয়ে রক্তাক্ত করছে। জিবরাইল (আ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই লোকগুলো মানুষের অসাক্ষাতে নিন্দাকারী (গীবতকারী)। গীবতকে আল্লাহপাক মরা ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করেছেন। কারো মধ্যে কোনো দোষ থাকলে তার অসাক্ষাতে বলাটাই (যা সে পছন্দ করে না) গীবত। আর মিথ্যা দোষারোপ করাকে বলে বুহতান (মিথ্যা অপবাদ), আরো ভয়ঙ্কর গুনাহ। গীবত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। সূরা হুজরাতে আল্লাহপাক বলেছেন, তোমরা অন্যের দোষ অন্বেষণ করো না। গীবত করা যেমন গুনাহ তেমনি শোনাও গুনাহ। রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, গীবত যিনা অপেক্ষাও জঘন্য। অথচ যিনা সব ধর্ম ও শরীফ ব্যক্তির কাছে অত্যন্ত ঘৃণ্য ও লজ্জাজনক অপরাধ। তার সাথে তুলনা করে গীবতকে তার চেয়েও জঘন্যতম গুনাহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অপরাধ থেকে ক্ষমা পাওয়ার উপায় হলো যার গীবত করা হয়েছে তার কাছে মাফ চাওয়া বা আজীবন অনুতপ্ত হয়ে উভয়ের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। মানুষের সম্মানহানি ও অধিকার হরণ হয় এমন গোপন ও প্রকাশ্য সকল আচরণ ও কর্ম থেকে আল্লাহপাক আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন। ২৪.১২.২০২০

Comments