জুমা আলোচনা
গাছিয়া দৌলতপুর নতুন পাড়া জামে মসজিদ
তারিখ : ১৬.০৯.২০২২
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
জুমার দিন আমাদের ঈদের দিন। সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতম দিন। গোসল করে উত্তম পোশাকে সজ্জিত হয়ে আজানের পরপরই আমাদের আল্লাহর ঘরে উপস্থিত হতে হবে। আল্লাহপাকের দরবারে লাখো শুকরিয়া যে তিনি দয়া করে আমাদেরকে তাঁর ঘরে হাজির হওয়ার তৌফিক দান করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ।
আজকের দিনের প্রধান কাজ জুমার সালাত আদায়। তাই আমাদের সবারই সেজন্য প্রস্তুতি থাকা দরকার। আমাদের পক্ষে একটি উট কুরবানি করা কি আদৌ সম্ভব? অথচ রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, মসজিদে প্রথম আগমনকারী ব্যক্তি একটি উট কুরবানির সওয়াব লাভ করবে। এরপর পর্যায়ক্রমে গরু, ছাগল কুরবানির সুসংবাদ শুনিয়েছেন। আবার প্রথম কাতারে আসন গ্রহণের ফজিলত প্রসঙ্গে বলেছেন, মানুষ যদি বুঝতো প্রথম কাতারে বসায় কতো সওয়াব তাহলে লটারি করার প্রয়োজন হতো। সামনের কাতার ফাঁকা রেখে পেছনে বসলে মানুষকে ডিঙিয়ে যেতে হয় যেটা আদবের খেলাপ এবং হাদিসে নিষেধ রয়েছে। জুমার দিনে খুতবা শ্রবণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনোযোগের সাথে খুতবা শুনতে হয়। ফেরেশতারা মুসল্লিদের আগমনের ভিত্তিতে সওয়াব লিখতে থাকেন। খতিব মহোদয় খুতবা দান শুরু করলে ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুতবা শোনা শুরু করে দেন। বিলম্বে আসলে আপনি জুমার নামাজের ফায়দা থেকে বঞ্চিত হলেন।
জুমার নামাজ যেমন আমাদের প্রতি ফরজ তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করাও ফরজ। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আজান শুনে কেউ মসজিদে না আসলে আমার ইচ্ছা হয় আমার স্থলে কেউ ইমামতি করুক আর আমি গিয়ে তাদের ঘরগুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেই। দেই না এ কারণে যে, সেখানে নারী ও শিশু রয়েছে। রহমাতুল্লিল আলামিন আগুন দিয়ে জ্বালাতে চান, তাহলে বুঝতে হবে মসজিদে না যাওয়া কতো ভয়াবহ গুনাহ। উম্মে মাকতুম রা. একজন অন্ধ সাহাবি। রসুলুল্লাহ সা. তাঁকে একাকী নামাজ পড়ার অনুমতি দেননি। বলেছেন, তুমি কি আজান শুনতে পাও? বলেছেন, হ্যাঁ। রসুলুল্লাহ সা. তখন বলেছেন, আজান শুনতে পারলে তোমাকে মসজিদে আসতে হবে। আলী রা. বলেছেন, মসজিদের যারা প্রতিবেশী তাদেরকে মসজিদে গিয়েই নামাজ আদায় করতে হবে। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, মসজিদের প্রতিবেশী কারা? তিনি বলেছেন, যারা আজান শুনতে পায়।
রসুলুল্লাহ সা. ঐ মুসল্লিদের সুসংবাদ শুনিয়েছেন যারা এশা ও ফজরে জামায়াতের সাথে আদায় করে এবং বলেছেন তাদের সমগ্র রাত ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত হয়। তিনি আরো বলেছেন, আমাদের ও মুনাফিকদের মাঝে পার্থক্য হলো এশা ও ফজরের সালাতে শরীক হওয়া। মুনাফিকরা ফজর ও এশার সালাতে শরীক হতে পারে না।
নামাজ সঠিকভাবে আদায় করার জন্য সহীহ করে কুরআন শিক্ষা ফরজ। আপনারা গ্রামের সাধারণ মানুষ এবং অনেকেই আছেন বেশ বয়স্ক। আল্লাহপাক আপনাদের চেষ্টা দেখবেন। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ যিনি কুরআন শিক্ষা করেন ও অপরকে শিক্ষা দেন। এশার নামাজ শেষে মসজিদেই আপনারা কুরআন শিক্ষা শুরু করতে পারেন। আমি বলি, এই মহান কাজে আমি আপনাদের সাথে কিছুটা সহযোগিতা করে শরীক হবো ইনশা- আল্লাহ। আরো বলি, প্রতিদিন পড়তে হবে এমনটি প্রয়োজন নেই। আপনারা নিজেরাই ঠিক করবেন। সবাই হাত তুলে স্বতস্ফুর্ত সমর্থন জানায়। সাথে সাথে একজন ১৫টি কায়দা ও রেহেল ক্রয়ের জন্য ৫০০/- টাকা দিলেন। আলহামদু লিল্লাহ।
মুসল্লিদেরকে হিংসামুক্ত হয়ে জীবন যাপনের জন্য অনুরোধ জানাই। বাংলাদেশে হিংসার চাষ হয়। রাজনীতিবিদ, আলেম সমাজ এবং ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা সবাই কমবেশি হিংসা-বিদ্বেষে জড়িয়ে আছি। ভাইয়ে ভাইয়ে হিংসা, পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে হিংসা আবার কর্মক্ষেত্রে হিংসা- এককথায় সর্বত্রই হিংসা- বিদ্বেষ। হিংসা শুধু কবিরা গুনাহই নয়, হিংসা মানুষের নেক আমল ধ্বংসকারী কঠিন অপরাধ। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেয় তেমনি হিংসা মানুষের সকল নেক আমল ধ্বংস করে দেয়। সমাজে মারামারি, গুম-খুন ও গিবতের মূল কারণ হিংসা। শবে কদরসহ বিশেষ বিশেষ রাতে আল্লাহপাক তাঁর অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করেন, কিন্তু এই সাধারণ ক্ষমা থেকে বাদ পড়ে সেই হতভাগা যে শিরক করে ও হিংসা করে। হিংসুক আল্লাহর কাছে খুবই ঘৃণিত এবং সুরা ফালাকে আল্লাহ হিংসুকের অনিষ্ট থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে বলেছেন।
আপনাদের সম্মুখে একটি ঘটনা বলতে চাই যা আপনাদেরকে সহজে জান্নাতে পৌঁছে দেয়ার কারণ হতে পারে। মদিনার মসজিদে রসুলুল্লাহ সা. সাহাবিদের সাথে করে বসে আছেন, এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলে তিনি তার প্রতি দৃষ্টি দিয়ে সাহাবায়ে কেরাম রা.-দের বলেন, এই মুহূর্তে যে প্রবেশ করছে সে জান্নাতি। এভাবে তিনি পরপর তিনদিন একই ব্যক্তি সম্পর্কে বলেন, সে জান্নাতি। রসুলুল্লাহ সা. কর্তৃক সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তি সম্পর্কে একজন সাহাবির জানার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তিনি তার ঘরে তিনদিনের জন্য মেহমান হন। এই তিনদিন তিনি তাঁর মাঝে বাড়তি কিছুই লক্ষ করেন না, একেবারে স্বাভাবিক জীবন। শেষে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, রসুলুল্লাহ সা, পরপর তিনদিন আপনাকে জান্নাতি বলে ঘোষণা দিলেন অথচ আপনার মাঝে বাড়তি কোনো আমলই লক্ষ করলাম না। জবাবে সেই সাহাবি বললেন, ভাই আমি তো এমন কোনো আমল করি না যা দ্বারা এভাবে সম্মানিত হবো। তবে প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে দোয়া-দরুদ পড়ার পর সবাইকে ক্ষমা করে দেই, কারো প্রতি কোনো হিংসা- বিদ্বেষ রাখি না। তখন সেই সাহাবি বললেন, আপনার এই হিংসামুক্ত জীবন ও ক্ষমাশীলতাই এতো মর্যাদাবান করেছেন।
নামাজে যত্নশীল ও সহীহ করে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ এবং পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে সৌহার্দ্র- সম্প্রীতির সাথে জীবন যাপনের জন্য সবার প্রতি আহবান জানিয়ে কথা শেষ করি। আল্লাহপাক আমাদের হেফাজত করুন।
Comments
Post a Comment