Skip to main content

মজলুম জুলুমের প্রতিদান পুরোপুরিই পাবে

আজকে ফজরের নামাজ শেষে সুরা বুরুজ পড়ছিলাম। গর্তওয়ালাদের কাহিনী। না না তাদের কোনো অপরাধ ছিল না। কুরআনের ভাষায় মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি ঈমান আনাই ছিল তাদের অপরাধ (বুরুজ - ৮)। এই অপরাধে আগুনেভরা গর্তে ঈমানদারদের ছুঁড়ে মেরে কাফেররা উল্লাস করেছে। 

এ দৃশ্য এখনো বর্তমান। হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। বরেণ্য আলেমরা কারাগারে। তাঁদের অপরাধ? তাঁরা তো হলমার্ক, ডেসটিনি, সোনালী ব্যাংক, শেয়ার মার্কেট,  নারী পাচার, অর্থ পাচার কোনো অপরাধের সাথেই জড়িত নয়। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন কি তাঁদের অপরাধ? তাঁরা মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকেন, সুদ, ঘুষ, জেনা-ব্যাভিচারের বিরুদ্ধে বলেন, সত্য ও ন্যায়ের পথে আহবান জানান।

উলামায়ে কেরাম নবি-রসুল নন। কিন্তু নবি-রসুলদের উত্তরাধিকার। নবি-রসুলদের যে দায়িত্ব উত্তরাধিকার হিসেবে আলেমদের দায়িত্বও মূলত তাই। নবি-রসুলদের বিরোধিতা করেছে নমরুদ-ফেরাউন-আবু জেহেল ও আবু লাহাবরা। আজকের যুগে নমরুদ-ফেরাউনদের উত্তরাধিকার বনাম নবি-রসুলদের উত্তরাধিকার আলেমসমাজের বিরোধিতার মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখি না। নবি-রসুলরা ছিলেন সর্বোত্তম মানুষ এবং নিরীহ প্রকৃতির। কিন্তু কাফেররা তাঁদের সহ্য করেনি। তাঁদের অপরাধ ছিল তাঁরা মানুষকে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেছেন, তাঁকে একমাত্র ইলাহ (হুকুমকর্তা) হিসেবে মেনে নেয়ার আহবান জানিয়েছেন এবং তাগুতকে অস্বীকার করার কথা বলেছেন। আলেমরাও তাই বলেন। না বললে তো আল্লাহ তাঁদের পাকড়াও করবেন। তাঁর বাণী, যার কাছে সত্য বর্তমান সে যদি তা গোপন করে তার চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে? আলেম কেন? তাই পরকালে বিশ্বাসী কোনো মুসলমানই নীরব থাকতে পারে না। 

যারা আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট দেয় তাদের ব্যাপারে তাঁর কঠোর হুশিয়ারি রয়েছে, যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তওবা করে না তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি (বুরুজ- ১০)। সাথে সাথে ঈমানদারদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। এটাই বড় সাফল্য (বুরুজ-১১)। জমিনে ঈমানদারদের মাঝে যারাই গুম-খুন ও জেল-জুলুমের শিকার হবে আমার বিশ্বাস তারা সবাই আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাতের অধিকারী হবে। তাদের এই জান্নাত প্রাপ্তি তাদের আমলের কারণে নয় বরং তারা যে জুলুমের শিকার হয়েছে তার বদলা হিসাবে। আল্লাহপাক কেয়ামতের দিন জালেমের নেক আমল মজলুমকে দিয়ে জুলুমের প্রায়শ্চিত্ত করবেন। নেক আমলে না হলে মজলুমের গুনাহ জালেমের ঘাড়ে চাপিয়ে দিবেন। রসুলুল্লাহ সা. তাই বলেছেন। লোকে জালেমকে যতো শক্তিশালী ও সম্পদশালী ভাবে প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। নবি মুহাম্মদ সা. তাদেরকে হতদরিদ্র বলেছেন। মজলুমের পাওনা মেটাতে গিয়ে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়বে। 

প্রশ্ন উঠতে পারে জালেম যদি তওবা করে তাহলে কী হবে? আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের হতাশ হতে না করেন এবং ক্ষমার দরজা সবসময় উন্মুক্ত রয়েছে। এখানেও রয়েছে, অতঃপর তওবা না করে (বুরুজ -১০)। তওবা করলে কী হবে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট করেননি। তবে উপলব্ধি করা যায় জালেম যদি তওবা করে ও পরিশুদ্ধ হয়, মজলুমকে ক্ষতিপূরণ দেয় বা ক্ষমা চেয়ে নেয় ও সর্বদা তার জন্য দোয়া করে তবে আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করবেন। আর জালেমের পক্ষ থেকে মজলুমকে এতো পরিমাণ দেবেন যাতে সে সন্তুষ্ট হয়ে যায়।

আমরা যারা আখেরাতে বিশ্বাসী তাদের উচিত জুলুম থেকে অনেক দূরে অবস্থান করা এবং আমাদের কথা, কাজ ও আচরণে আল্লাহর কোনো বান্দা যেন আদৌ কষ্ট না পান, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা। রসুলুল্লাহ সা. -এর বাণী সর্বদা স্মরণে রেখে চলা দরকার (ঐ ব্যক্তি মুমিন নয়, মুমিন নয়, মুমিন নয় যার হাত ও মুখের অনিষ্ট থেকে অন্যরা নিরাপদ নয়)। আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকার জুলুম থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন। ০১.০৯.২০২২।

Comments