Skip to main content

পর্দা নারী-পুরুষ সবার জন্য ফরজ

(পর্দার বিধান ২৪ নং সুরা নুর ২৭-৩১, ৫৮-৬০ এবং (৩৩ নং সুরা) আহজাব ৫৩-৫৫, ৫৯ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর পূর্বে আহজাবের ৫৯ নং আয়াত আলোচনা করেছিলাম। আজকে সুরা নুর ৩০ নং আয়াত আলোচনা করা হলো। পর্দা সম্পর্কে একটি ছোট্ট বই লেখার ইচ্ছাও রয়েছে। আল্লাহপাক সাহায্য করুন।)

‘(হে নবি!) মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য উত্তম পন্থা। যা কিছু তারা করে আল্লাহ তা জানেন’- সুরা নুর ৩০।

পর্দা সম্পর্কীয় বিধান হিজরতের পঞ্চম বছরে অবতীর্ণ হয়। আল্লাহর বিধান (শরিয়ত) স্বতঃস্ফুর্তভাবে মেনে চলার মতো মনমানসিকতা তৈরি হওয়ার পরই আল্লাহ তায়ালা রসুলুল্লাহ সা.-এর ওপর পর্দার বিধান নাজিল  করেছেন এবং সেটি কার্যকর করার মতো শক্তিও রসুল সা. অর্জন করেছিলেন। মুসলিম দাবিদার সকলের ওপর ইসলামের ফরজ বিধান পালন বাধ্যতামূলক এবং পালন না করা কুফরি (অমান্য করা) ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আল্লাহর আদালতে সকলকে জবাবদিহি করতে হবে ব্যক্তিগতভাবে এবং জান্নাত-জাহান্নাম মূলত ব্যক্তির ইমান ও আমলের ওপর নির্ভর করবে। ইসলাম একটি রাষ্ট্রীয় দীন এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে তা মানা সহজ হয়ে যাবে বিধায় দীন প্রতিষ্ঠায় যারা চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায় (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) আল্লাহপাক তাদেরকে ক্ষমা ও জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন (সুরা সফ)। যারা জান্নাতের প্রত্যাশী তাদের স্বতঃস্ফুর্তভাবে আল্লাহর বিধান মেনে চলতে হবে। নামাজ-রোজার মতো পর্দাও একটি ফরজ ইবাদত।

সুরা নুরের ৩০ আয়াতে পুরুষদের এবং ৩১ নং আয়াতে নারীদের প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে (নারীদের একটু বিস্তৃত)। দৃষ্টি সংযত রাখা ও লজ্জাস্থান হেফাজত পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য। স্বামী-স্ত্রী এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক (মুহাররম) ছাড়া নারী-পুরুষ সবাই পরস্পর থেকে পর্দা করবে এবং সেটি ঘরে ও বাইরে সর্বত্রই। এখানে দৃষ্টি সংযত রাখার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ নজরভরে দেখবে না, একজন পুরুষ নারীকে বা একজন নারী পুরুষকে (পুরুষের পক্ষে নারীকে দেখা বেশি বিপজ্জনক) দেখবে না। একবার দৃষ্টি পড়লে দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে নেবে। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, প্রথম দৃষ্টি পড়লে সেটা ক্ষমারযোগ্য। নারী ঘর থেকে বের হবে না এবং চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবে না- ইসলাম তা বলে না (যদিও ঘরই নারীর জন্য উত্তম)। ইসলাম নারীর জন্য তার উপযুক্ত কর্মপরিবেশ দাবি করে যেটির বাস্তবায়ন রাষ্ট্র করতে পারে। ফেসবুকে নারীর ছবি দেয়া ও দেখা এবং সামনা-সামনি দেখার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। দুটোই কবিরা গুনাহ। আখেরাতে বিশ্বাসী কোনো নারী বা পুরুষ তা পারে না।

একজন পুরুষের পিএস নারী বা নারীর পিএস পুরুষ কখনই হতে পারে না। এটি খুবই বিপজ্জনক। রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, দু’জন নর ও নারী একত্রে হলে তৃতীয় জন থাকে শয়তান। দাম্পত্য জীবনে অশান্তি, পরকীয়া, বিবাহ-বিচ্ছেদ ও আত্মহত্যার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার মূলে রয়েছে পর্দাহীনতা। প্রগতিশীল হিসেবে যারা নিজেদের জাহির করে এবং পর্দার বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান তাদের মধ্যেই বিবাহ-বিচ্ছেদ ও আত্মহত্যা প্রবণতা প্রবল। সিনেমা জগতে যারা বিচরণ করে তাদের মাঝেও লক্ষণীয়। ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী কোনো মুসলমান আত্মহত্যার মতো ধ্বংসাত্মক ও ঘৃণ্য অপরাধ কল্পনাও করতে পারে না।

লজ্জাস্থান হেফাজত করে- নারী ও পুরুষ উভয়কেই বলা হয়েছে। একজন পুরুষের লজ্জাস্থান (সতর) হলো নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত। স্বামী-স্ত্রী ছাড়া ঘরে- বাইরে সর্বত্র একজন পুরুষ তার সতর আবৃত করে রাখবে। বালেগ হওয়ার পর একজন পুরুষ ঘরে তার বাবা-মা ও ভাই-বোনের সম্মুখে সতর খুলতে পারবে না। সতর আবৃত করে রাখা ফরজ এবং লঙ্ঘন করা কবিরা গুনাহ। তদ্রুপ নারীও তার স্বামী ছাড়া সবার সম্মুখে সতর আবৃত করে রাখবে এবং সেটি ঘরে-বাইরে সর্বত্র। একজন নারীর সতর (লজ্জাস্থান) হলো তার মুখমণ্ডল, হাতের কব্জি ও পায়ের পাতা ছাড়া সমগ্র শরীর। ঘরে তার পিতা, শ্বশুর ও ভাইসহ মুহাররম সবার সাথে সতর ঢেকে রাখবে।

পর্দানশীন নারী সম্পর্কে সুরা আহজাবে (৫৯ নং আয়াত) আল্লাহপাক বলেছেন, তাদেরকে চেনা যায় অর্থাৎ তারা সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এবং তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ তায়ালা পর্দাকে নারীর নিরাপত্তার গ্যারান্টি করেছেন। নারীকে উত্যক্ত করা, শ্লীলতা হানি, ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধের পেছনে অন্যতম কারণ পর্দাহীনতা। পর্দাহীন নারীর অভিভাবক (স্বামী, পিতা ও ভাইকে) দায়ূস বলা হয়েছে এবং তার পরিণতি হলো জাহান্নাম। একজন পর্দাহীন নারী শুধু নিজেকেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে না, সে তার অভিভাবককেও জাহান্নামি করবে। আল্লাহ আমাদের উপলব্ধি দান করুন।

আমরা কে কী করছি আল্লাহপাক তা সবই জানেন এবং তিনি বারবার তাঁকে ভয় করে চলার জন্য বলেছেন। আমাদের আমল আল্লাহ জানেন। এই উপলব্ধি জাগ্রত হলে গোপন ও প্রকাশ্যে সকল পাপ থেকে দূরে থাকা সম্ভব এবং আল্লাহর ভয় আইন- আদালত ছাড়াই সব ধরনের পাপাচার থেকে মানুষকে দূরে রাখে। ৫৯ নং আয়াতের শেষে আল্লাহ বলেছেন, জেনে রেখো আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। মানুষ অপরাধ করবে আর আল্লাহ ধরে ধরে জাহান্নামে দেবেন, এটি আল্লাহর অভিপ্রায় নয়। আল্লাহ চান, তাঁর বান্দা ফিরে আসুক। তাই আসুন, আল্লাহর ফরজ বিধান পর্দা আমরা মেনে চলার চেষ্টা করি। চেষ্টা করলেই আল্লাহপাক সাহায্য করবেন ইনশা-আল্লাহ। ২১.০৯.২০২২

Comments