Skip to main content

সক্রিয় জনশক্তি তৈরি সময়ের দাবি

ইসলাম আল্লাহপাক প্রদত্ত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আল্লাহ তায়ালা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবকিছু সম্পর্কে অবগত। তিনি সকল সৃষ্টির রব। ফলে ইসলাম শ্বাশত ও সার্বজনীন। পৃথিবী মানবরচিত নানা মতবাদ ও আদর্শ দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে এবং এর ফলে শোষণ-বঞ্চণা, জুলুম-নির্যাতনে পৃথিবী ক্ষত-বিক্ষত। সুদূর অতীত থেকে বিশ্ববাসী দেখে আসছে নানা গোষ্ঠী ও রাজতান্ত্রিক স্বৈরশাসন, সামরিক ও একনায়কতান্ত্রিক জুলুমতন্ত্র, গণতন্ত্রের নামে ব্যক্তি ও দলের স্বৈরশাসন, সমাজতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র ও উদার গণতন্ত্রের নামে ধোকা ও প্রতারণাপূর্ণ জুলুমতন্ত্র। উদার গণতন্ত্রে অনেক সময় নিজ দেশে সুশাসন ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেও বিশ্বের দেশে দেশে স্বৈরশাসন টিকে রাখার জন্য এরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং বিশ্বের পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত শিল্পোন্নত দেশগুলো বাজার দখলের জন্য ও মজুদ অস্ত্রসম্ভার বিক্রির লক্ষ্যে সবসময় যুদ্ধবিগ্রহ বাধিয়ে রাখছে। এসব সভ্যতা বৈষয়িক উন্নতি করলে নৈতিক দিক দিয়ে তারা চরমভাবে অধপতিত। অশ্লীলতা ও বেয়াহাপনার চরম প্রকাশ, এমনকি লুত আ.-এর জাতির মতো সমকামিতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। তদুপরি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোয় যুদ্ধবিগ্রহ দ্বারা ব্যাপক গণহত্যায় মেতে উঠেছে। এই সভ্যতা গড়ার চেয়ে ভাঙ্গায় বেশি পারঙ্গম, ফলে টিকে থাকার সকল যোগ্যতা তারা হারিয়ে ফেলেছে। এর ধ্বংস্তুপের ওপর ভালো কিছু না আরো ধ্বংসকর কিছু ঘটবে তা নির্ভর করছে গড়ার কাজে অগ্রণী কোনো শক্তিশালী দলের অস্তিত্বের ওপর। কল্যাণকামী একটি সভ্যতার স্থলাভিষিক্ত হওয়া তখনই সম্ভব যখন সেই সভ্যতার অনুসারীরা যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

আমরা মনে করি পতনোন্মুখ এই সভ্যতার বিকল্প হতে পারে কেবল ইসলাম। ইসলাম মানুষের স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যশীল এক উদার ও সহনশীল জীবনব্যবস্থা এবং এর মধ্যে রয়েছে সার্বজনীনতা। আল্লাহপাক মানুষের হেদায়াতের জন্য অসংখ্য নবি-রসুল প্রেরণ করেছেন এবং সবারই দায়িত্ব ছিল দীন প্রতিষ্ঠা করা। সর্বশেষ নবি মুহাম্মদ সা.-কেও একই দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন। মুহাম্মদ সা.-কে হেদায়াত ও সত্য দীনসহ প্রেরণ করা হয়েছে যাতে সকল দীনের ওপর একে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন- আল্লাহর এই নির্দেশনা এসেছে সুরা তওবা, ফাতহা ও সফে। রসুল সা.-কে প্রেরণের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করার সাথে সাথে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, ‘হে ইমানদারগণ! আমি কি এমন একটি ব্যবসায়ের কথা বলবো যা তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক আজাব থেকে রক্ষা করবে- তাহলো আল্লাহ ও তাঁর রসুল সা.-এর প্রতি বিশ্বাস এবং জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যদি তোমরা বুঝতে’- সুরা সফ। এর ফলাফলও তিনি জানিয়ে দিয়েছেন- ‘সকল গুনাহের মাফ ও এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত’ এবং মুমিনদের কামনা- বাতিলের মোকাবেলায় হকের বিজয় সে সম্পর্কেও ওয়াদা- ‘তোমরা যা পছন্দ করো- আল্লাহর সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়- হে নবি মুমিনদের সে সুসংবাদও জানিয়ে দিন’- সুরা সফ। 

ধ্বংসস্তুপ থেকে বিশ্বকে বের করতে হলে যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে সকল জড়তা ও আলোস্য ঝেড়ে ফেলে জানমাল নিয়ে তাদেরকে ময়দানে হাজির হতে হবে। এখানে আল্লাহর ওয়াদা তাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এক. ক্ষমা ও জান্নাত এবং দুই. নিকটবর্তী বিজয়। যে কোনো আদর্শ বিজয়ী হওয়ার জন্য দুটি শর্ত প্রয়োজন। এক. আদর্শের ভিত্তিতে একদল কর্মী ও নেতৃত্ব এবং দুই. জনগণের মধ্যে সেই আদর্শের গ্রহণযোগ্যতা। ইসলাম তার ব্যতিক্রম নয়। মক্কায় রসুলুল্লাহ সা. দীর্ঘ তেরোটা বছর চরম জুলুম-নির্যাতনের মধ্য দিয়ে ইসলামের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন, কিন্তু মক্কাবাসীদের সক্রিয় বিরোধীতার কারণে আল্লাহপাক দীন বিজয়ী করার মতো নেয়ামত তাঁদেরকে দান করেননি। মদিনায় দুটি শর্তই পূরণ হওয়ায় আল্লাহ তায়ালা রসুল সা.-এর নেতৃত্বে দীনের বিজয় দান করেন। যার ফলশ্রুতিতে লোকে দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে চলে আসে।

ইসলামের দুশমনদের চরম জুলুম-নির্যাতনের মোকাবেলায় ইসলামি আন্দোলনের নেতৃত্ব ও বিশাল কর্মীবাহিনী পরম ধৈর্যের পরিচয় দান করতে সক্ষম হয়েছে এবং কেউ আন্দোলন থেকে নিজেকে আলাদা করে নেননি। এটি আল্লাহপাকের একান্ত অনুগ্রহ। এখন প্রয়োজন প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে এই বিশাল কর্মীবাহিনীকে সক্রিয় করে জনগণের কাছে সেবার মাধ্যমে ইসলামের কল্যাণকারিতা তুলে ধরা। বাতিল সকল শক্তি নিয়োগ করেছে দেশের যুবসমাজের চরিত্র ধ্বংসকাজে এবং তারা অনেকখানি সফলকাম। তারা নগ্নতা ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং সুকৌশলে ইসলাম থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে। এখন প্রয়োজন সত্যের সাক্ষ্য হিসেবে (মৌখিক ও আমলে) মানুষের সম্মুখে নিজেকে উপস্থাপন করা। বাতিল অর্থবিত্ত ও জুলুমে সেরা হলেও নৈতিক শক্তিতে খুবই দুর্বল। জনগণ তাদেরকে ভয় করে, সাথে সাথে ঘৃণাও করে। মানুষের বিপদাপদ ও রোগ-শোকে পাশে দাঁড়াতে পারলে ইনশা-আল্লাহ জনগণের সমর্থন লাভ করা সম্ভব হবে। ইসলামকে বিজয়ীর আসনে সমাসীন করার জন্য বর্তমানে প্রয়োজন জনশক্তির কর্মতৎপরতা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা করে ঝুঁকি গ্রহণ। আল্লাহপাক আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কর্মতৎপর হওয়ার তৌফিক দান করুন। ২২.০৯.২২

Comments