বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়ে প্রতিদিনই রেকর্ড হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ১৮ কোটি লোকের বাস এই দরিদ্র দেশটি আল্লাহপাকের অশেষ কৃপায় বেশ ভালো ছিল। আমার মনে হয়, আল্লাহর অনুগ্রহের তেমন শুকরিয়া আমরা আদায় করতে পারিনি।
করোনা নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। চূড়ান্ত কথা কেউ বলতে পারছে না। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে সেরা দেশগুলো করোনায় বড় নাজেহাল। আমি নিজে করোনা নিয়ে প্রচুর লেখালেখি করেছি এবং জনসচেতনতার লক্ষ্যে করোনার এখনো আপডেট দিয়ে থাকি। তাতে অনেকে মনে করেন, আমার পোস্টে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। আবার অনেকে মনে করেন, এসব তথ্য সঠিক নয়। অন্তত সাধারণ মানুষ তাই মনে করে।
করোনার শুরু থেকে একেবারে ঘরে আবদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম এবং ঘরকেই মসজিদ বানিয়ে নিয়েছিলাম। ঈদের নামাজও ঘরে পড়েছি। এবার মনে করছি, গর্তে লুকিয়ে থাকবো না, নিয়মিত মসজিদে যাব এবং সতর্ক থাকবো। বাকিটা দেখভালের দায়িত্ব আল্লাহর।
ছেলেকে সাথে করে আজকে বাজারে গিয়েছিলাম। প্রচণ্ড ভীড়। পা রাখার জায়গা নেই। আমি তো গেলাম ও আসলাম। মাস্ক পরে বাজার করে দ্রুতই ফিরে আসলাম। কিন্তু যারা সর্বক্ষণ বাজারে আছে- দোকানের কর্মচারী, ফলবিক্রেতা, রিক্সাচালক, গণপরিবহনের ড্রাইভার-সুপারভাইজার (আজকে বিশেষজ্ঞদের অভিমত লক্ষ করলাম, তারা বলছেন গণপরিবহন ও সমাবেশ থেকে করোনার বিস্তৃতি ঘটছে), দিনমজুর, বস্তিবাসী ও খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কেমন, তা জানতে বড় ইচ্ছে করে। কে এসব দরিদ্র লোকদের সুরক্ষা দেন? আমি বিশ্বাস করি, মহান আল্লাহই তাদের সুরক্ষা দিচ্ছেন। তা না হলে পথে-ঘাটে লাশ পড়ে থাকতো, যেমনটি ঘটছে ব্রাজিলে।
আজকের অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত। তিনি তো সর্বক্ষণ কোয়ারেন্টিনে থাকেন। প্রতিদিন সরকারি আমলা, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করছেন। এই শ্রেণির মানুষগুলো খুবই সতর্ক জীবন যাপন করেন। তারপরও করোনাকে এড়িয়ে চলতে পারছেন না।
সামনের লকডাউন হয়তো একটু কঠোরভাবেই হবে। কিন্তু পোশাকশিল্প লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হচ্ছে। সেখানে একসাথে অনেকের বসবাস, যাতায়াত, তাদের অবস্থান বলা যায় করোনার বিস্তৃতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু তাদের মাঝে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু মোটেই উল্লেযোগ্য নয়। বরং মালিকরাই বেশি ঝুঁকির মধ্যে এবং অনেকের মৃত্যু সংবাদও পাওয়া যায়।
একটি বিষয় গবেষণায় আসতে পারে, যারা শারীরিক পরিশ্রম করে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে অর্থাৎ প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকে ওরা অনেকখানি নিরাপদ। আমাদের দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসাব তাই-ই বলে। শারীরিক শ্রমবিমুখ ও আরাম-আয়েশে এসিতে বসবাস করেন এমন লোকদের মাঝেই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বেশি।
সর্বোপরি আমরা এমন এক আল্লাহকে বিশ্বাস করি যিনি সর্বময় ক্ষমতার মালিক এবং যাঁর অনুমোদন ছাড়া কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় না। তাই আল্লাহর এক ক্ষুদ্র বান্দা হিসেবে নিজেদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতো যতখানি সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করে নিজেকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে দেই। তিনি আমাদের অভিভাবক এবং তিনিই যথেষ্ট।
দু’দিন বাদে রমজান শুরু হবে। এই পবিত্র মাসে আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের প্রতি আরো অধিক পরিমাণে দয়ার্দ হন। তিনি তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করার মধ্যেই আনন্দ পান। তাই করোনাকে ভয় না করে আমরা আল্লাহকে ভয় করি। আল্লাহকে ভয় করে চলার মাধ্যমে করোনার মতো মহামারিতে মৃত্যু হলে সেটি হবে শাহাদতের মৃত্যু যা মোমিন মাত্রই কামনা করে।
আমি করোনাকে আল্লাহর গজব মনে করি এবং কুরআন-হাদিস পাঠের মাধ্যমে আমার উপলব্ধি, সমাজে জুলুম ও অশ্লীলতার প্রসার ঘটলে সেই সমাজে মহামারি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। পরিত্রাণের উপায় হলো, গুনাহ থেকে তাওবা করা ও মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা। সাথে দান-সাদাকা বাড়িয়ে দেয়া। সাদাকা আল্লাহর ক্রোধকে প্রশমিত করে। অল্লাহর অসহায় বান্দাদের প্রতি খরচের পরিমাণ বাড়ালে আল্লাহ সেই সমাজে বরকত দান করেন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটে। ‘আল্লাহ দান-সাদাকাকে ক্রমবৃদ্ধি দান করেন’- আল্লাহর এ উক্তির সাথে সাথে অর্থনীতিবিদরাও তাই বলেন।
আমরা নিজেরা করোনা থেকে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করবো।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ক্ষমা করো ও তোমার পথে চলাটা সহজ করে দাও এবং করোনার মতো গজব থেকে হেফাজত করো। আমিন। ১১.০৪.২০২১
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment