Skip to main content

নরহত্যা জঘন্য অপরাধ এবং পরিণতি জাহান্নাম

জুমার খুতবা ০২.০৪.২০২১ বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম মাল্টিপ্ল্যান রেডক্রিসেন্ট সিটি (কুশিয়ারা, পদ্মা ও সুরমা ভবন), মিরপুর জামে মসজিদের সম্মানিত ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আহমাদুল্লাহ সা্ইয়াফ আজকের খুতবায় কুরআন ও হাদিসের প্রচুর উদ্ধৃতিসহ নরহত্যার পরিণতি এবং তা থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। মোমিনের জানমাল অত্যন্ত পবিত্র। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবকিছু একত্রিত করলেও একজন মানুষের জীবন তার চেয়েও পবিত্র ও মূল্যবান। এ প্রসঙ্গে তিনি সুরা মায়েদার ৩২ নং আয়াত উদ্ধৃত করেন, ‘নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোনো কারণে যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করলো সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কারো জীবন রক্ষা করলো সে যেন দুনিয়ার সমস্ত মানুষের জীবন রক্ষা করলো।’ তিনি প্রচুর হাদিস উদ্ধৃত করেন। রসুলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘পবিত্র কাবাকে ধ্বংস করার চেয়েও একজন মোমিনকে হত্যা করা কঠিন অপরাধ।’ শিরক সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং শিরকের সাথে সাথেই আর একটি বড় অপরাধ হলো মানুষকে হত্যা করা। আখেরাতে আল্লাহর আদালতে হক্কুল্লাহ (আল্লাহর হক) হিসেবে প্রথম ফায়সালা হবে নামাজের এবং হক্কুল ইবাদ (বান্দার হক) হিসেবে হত্যার বিচার হবে। সেদিন নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীকে পাকড়াও করে আল্লাহর দরবারে পেশ করে বলবে, কী অপরাধে দুনিয়ায় আমাকে এই লোক হত্যা করেছিল? হত্যাকারীর সেদিন কোনো জবাব থাকবে না। নেতা-নেত্রী বা কারো সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সে অপরাধ করেছিল। কিন্তু সেদিন কেউ আর তার উপকারে আসবে না বা কোনো সুপারিশ কাজে লাগবে না। তিনি হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন, কেয়ামতের আগে পৃথিবীতে খুনখারাবি বেড়ে যাবে। হত্যাকারী জানবে না কেন সে তার ভাইকে হত্যা করছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে গত ২৬ মার্চ এবং পরবর্তী দিনে আলেমদের নির্বিচারে হত্যার তিনি তীব্র নিন্দা জানান এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে বিচারের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি দানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। আলেমরা হলেন নবিদের ওয়ারিস। দুনিয়ার বুকে লক্ষ কোটি আবেদের চেয়ে একজন আলেমের মর্যাদা অনেক উচ্চে। তিনি বলেন, তারা শান্তিপ্রিয় এবং বায়তুল মোকাররমে ইমানের তাগিদে তারা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ না দিয়ে তাদের ওপর অস্ত্রসজ্জিত হয়ে হামলা চালানো হয়। তার প্রতিক্রিয়ায় হাটহাজারি ও ব্রাম্মণবাড়িয়ায় প্রতিবাদ করলে নির্মমভাবে ১৮/১৯ জন কুরআনে হাফেজ ও আলেমকে হত্যা করা হয়। দেশে গুম-খুনের যে বিস্তার ঘটেছে তাতে মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। আল্লাহর বিধান কার্যকর করার মাধ্যমেই কেবল এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। আল্লাহর বাণী, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের জন্য হত্যার বদলে কিসাসের বিধান লিখে দেয়া হয়েছে------ সুরা বাকারা ১৭৮। হে বুদ্ধি-বিবেকসম্পন্ন লোকেরা! তোমাদের জন্য কিসাসের মধ্যে জীবন রয়েছে। আশা করা যায়, তোমরা এই আইনের বিরুদ্ধাচরণ করার ব্যাপারে সতর্ক হবে। সুরা বাকারা ১৭৯ খতিব মহোদয় বলেন, দুনিয়ার জীবনে ন্যায়বিচার না হলেও আল্লাহর আদালতে অবশ্যই ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে। হত্যার বদলে হত্যাকারীকে পাঁচ প্রকারের শাস্তি দানের কথা আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে কোনো মোমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। সেখানে চিরকাল থাকবে। তার ওপর আল্লাহর গজব ও লানত এবং আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন’- সুরা নেসা ৯৩। প্রথমত হত্যাকারীর ঠিকানা হবে জাহান্নাম, দ্বিতীয়ত সে চিরকাল সেখানে থাকবে, তৃতীয়ত তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ, চতুর্থত আল্লাহর অভিশাপ এবং পঞ্চমত আল্লাহ তাকে অন্যান্যদের তুলনায় কঠিন শাস্তি দেবেন। একজন মোমিনকে হত্যা করা কোনো সাধারণ গুনাহ নয়। বড় কঠিন গুনাহ এবং শিরকের পরেই এই গুনাহের শাস্তি। করোনার বিস্তার রোধে তিনি তাঁর মুছল্লিদের সতর্ক জীবন যাপন এবং মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলার জন্য আহবান জানান। তিনি মুছল্লিদের সাথে করে করোনা থেকে হেফাজত ও শহীদদের শাহাদত কবুলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। শ্রুতিলিখন- প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী।

Comments