গতকাল বরেণ্য আলেম খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক সস্ত্রীক সোনারগাঁও ঘুরতে গিয়ে একটি হোটেলে কিছু গুণ্ডাপ্রকৃতির লোকের হাতে নাজেহাল হন যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়। একটি সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য তার নাগরিকদের জান-মাল ও সম্মানের নিরাপত্তা বিধান করা। দেশের অধিকাংশ জায়গায় যা ঘটছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সরকারি দলের লোকজনই এসব অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত এবং তারা বিচারের আওতায় আসে না। ফলে তারা বেপরোয়া। আজ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীকে হেনস্থা করছে এবং আশকারা পেয়ে আগামীতে কোনো কারণে মতদ্বৈততা দেখা দিলে নিজ দলের লোকদের ওপর চড়াও হতে মোটেই পিছপা হবে না। গণতন্ত্রের চর্চা না থাকায় আজকে সমাজের এই করুণ পরিণতি।
প্রত্যেক মানুষের একটি প্রাইভেট লাইফ আছে। সাধারণ মানুষের মতো উলামায়ে কেরামেরও স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি রয়েছে এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা ও দরদও আছে। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশেরর অধিকারও তাদের রয়েছে। আল্লামা মামুনুল হক একজন ব্যস্ত মানুষ। ব্যস্ততার মাঝে একটু সুযোগ করে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার মাধ্যমে স্ত্রীর প্রতি হকই তিনি পালন করেছেন। এর মধ্যে দোষের কিছু দেখি না। মানুষের জীবন সবসময় একটি সরল রেখায় চলে না। ভুল-ত্রুটি ঘটে যাওয়া জীবনেরই অংশ। হয়তো কেউ কেউ বলবেন, দেশে এই উত্তেজনাকর মুহূর্তে তাঁর এভাবে যাওয়া ঠিক হয়নি। মামুনুল হক নবি-রসুল নন। ভুল-ত্রুটি তাঁর হতেই পারে। তিনি একটু ফুরসত পেয়েছেন, স্ত্রীদের সময় দিতে পারেন না, একটি বিকেল একান্তে কাটাতে চেয়েছেন মাত্র। আমি বিষয়টি এভাবেই দেখতে চাই।
আমাদের সমাজে এক শ্রেণির মানুষ ইসলামের প্রতি বিদ্বেষের কারণে ইসলামপন্থী ব্যক্তিবর্গকে মোটেই সহ্য করতে পারে না। হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব সৃষ্টির আদি থেকেই চলে আসছে। নবি-রসুলরাও তাদের জুলুম থেকে রেহাই পাননি। ওরা নাস্তিক, সৃষ্টির অধম, আল্লাহর দুশমন। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চিত ধ্বংস তাদের জন্য যারা মানুষকে সামনা-সামনি গালাগাল করে ও পেছনে দোষ প্রচার করে। মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান কত পবিত্র; যারা ক্ষুণ্ণ করে আল্লাহর ভাষায় তাদের ধ্বংস অনিবার্য। ওদের জন্যই রয়েছে হুতামা (চূর্ণবিচূর্ণকারী স্থান) এবং আল্লাহর ক্রোধ প্রকাশার্তে বলেছেন ‘আল্লাহর আগুন’।
এসব ব্যাপারে ইমানদারদের জন্যও করণীয় রয়েছে। ইসলামের দুশমনরা মুসলমানদের যে কোনো ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা সেটি লক্ষ্য করছি। ফাসেকরা কোনো খবর প্রচার করলে যাচাই-বাচাই ছাড়া বিশ্বাস করতে সুরা হুজুরাতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। বনীল মুস্তালিক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে মা আয়েশা (রা)-এর মূল কাফেলার সাথে ফিরতে না পারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুনাফিকরা নানা কুৎসা রটনা করেছে। আল্লাহর কথা, ইমানদারদের উচিৎ ছিল সরাসরি অস্বীকার করা, না এটি কখনই সম্ভব নয়। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ, ইসলামের দুশমনরা আমাদের বরেণ্য আলেম ও রাহবারদের চরিত্র হনন করতে চাইলে সরাসরি বলে উঠবো, অসম্ভব ব্যাপার এবং তাঁরা যে মানের মানুষ তাঁদের পক্ষে এই নোংরামি সম্ভব নয়। হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ নানাবিধ অভিযোগে আল্লামা সাঈদীসহ অনেকে জেল খাটছেন। সবই আল্লাহর দুশমনদের শয়তানি কর্মকাণ্ড।
উম্মাহর অনৈক্যই মুসলিম জাহানে বড় সমস্যা। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মতপার্থক্যগুলো উপেক্ষা করে ইসলামী সংগঠনসমূহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু কুচক্রীমহল বসে নেই। আল্লামা মামুনুল হকের গ্রেফতার দাবিতে কোনো এক মাওলানা আগামী সোমবার হরতাল ডেকেছে। এরা আসলে ভাড়াটে এবং ইসলামের দুশমনদের এজেণ্ডা বাস্তবায়নে সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
আল্লাহপাক এসব কুচক্রীদের হাত থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করুন। ০৪.০৪.২০২১
ইসলাম ও সমসাময়িক বিষয়ে ব্যক্তিগত ব্লগ
Comments
Post a Comment